X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

রায়িসির কারণে ভেস্তে যেতে পারে ইরানের পরমাণু আলোচনা?

বিদেশ ডেস্ক
২২ জুন ২০২১, ১৭:৫৫আপডেট : ২২ জুন ২০২১, ১৭:৫৫

জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ইরানের সঙ্গে বিশ্বের ছয় শক্তিধর দেশের পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবনের আশাবাদ তৈরি হয়। তবে সেই আশাবাদে এখন নতুন শঙ্কার ছায়া ফেলেছে ইরানে সরকার পরিবর্তনের ঘটনা। কট্টর রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়িসি দায়িত্ব নেবেন আরও ছয় সপ্তাহ পর, অগাস্ট মাসে। তিনি সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির বেশ ঘনিষ্ঠ এবং ইরানের সবচেয়ে রক্ষণশীল একজন নেতা হিসেবে পরিচিত।

ইব্রাহিম রায়িসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর এরইমধ্যে কিছুটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন এই পরমাণু চুক্তি নিয়ে তার অবস্থান। নির্বাচিত হওয়ার পর সোমবার নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনাকে তিনি স্বাগত জানান। তবে এতে অবশ্যই ইরানের জাতীয় স্বার্থের নিশ্চয়তা থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেছেন, ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল সিস্টেম নিয়ে কোনও দরকষাকষি চলবে না। তার ভাষায়, ‘আমরা কেবল আলোচনার স্বার্থে আলোচনা চাই না। আলোচনাকে প্রলম্বিত করা যাবে না। প্রতিটি বৈঠকের ফল হতে হবে। এখান থেকে ইরানের মানুষের জন্য একটা ফলাফল বেরিয়ে আসতে হবে।’

বিবিসির ফারসি ভাষা বিভাগের বিশ্লেষক কাসরা নাজি বলছেন, প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই ইব্রাহিম রায়িসি যেসব কথাবার্তা বলেছেন, তা দেশের ভেতরে বা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খুব বেশি মানুষকে আশ্বস্ত করবে বলে মনে হয় না। তিনি নিজের এমন এক ছবি তুলে ধরেছেন, যাতে বোঝা যায় একজন কট্টরপন্থী হিসেবে তার নিজের পথ ঠিক করা আছে।

ইরানের সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ছয় দেশ ২০১৫ সালে যে পরমাণু চুক্তি করে, সেটির লক্ষ্য ছিল, দেশটি যেন এই কর্মসূচি কেবল শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করে। তারা যেন পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে। এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করা ছয় শক্তিধর দেশ হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তার মতে, এতে ইরানকে অনেক বেশি ছাড় দেওয়া হয়েছিল। ট্রাম্প শুধু এই চুক্তি থেকেই বেরিয়ে যাননি, তিনি ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

ট্রাম্প প্রশাসন শুরু থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে এমন এক নীতি গ্রহণ করেছিল, যাতে সবকিছুতে ইসরায়েলের স্বার্থকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। ফলে স্বভাবতই ওই প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে সবচেয়ে খুশি হয়েছিল ইসরায়েল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বাইডেন যখন হোয়াইট হাউসে এসেই ইরানের পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে আলোচনায় যোগ দিলেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই তেল আবিবকে তা ক্ষিপ্ত করে। ইসরায়েলের ক্ষমতায় পরিবর্তনের পর নাফতালি বেনেত নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেও, ইরান চুক্তির ব্যাপারে পূর্বসূরি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নীতির সঙ্গে তার বিন্দুমাত্র ফারাক নেই। কাজেই নাফতালি বেনেত প্রথম সুযোগেই ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলোকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।

চুক্তি পুনরুজ্জীবনের আশাবাদ

ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে আলোচনা অব্যাহত আছে গত এপ্রিল মাস থেকে। ভিয়েনায় রবিবার ছয়টি দেশ- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানির প্রতিনিধিরা ইরানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সর্বশেষ দফা বৈঠক করেছেন। ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, আলোচনায় বেশ অগ্রগতি হচ্ছে। তবে রবিবারের বৈঠকের পর আলোচনা আপাতত মুলতবি রাখা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা তাদের রাজধানীতে ফিরে গেছেন। এই আলোচনার লক্ষ্য হচ্ছে, ইরানের বিরুদ্ধে জারি করা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার বিনিময়ে তাদের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত পর্যায়ে আটকে রাখা।

ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, চুক্তির বিভিন্ন পক্ষ একটা সমঝোতার কাছাকাছি পৌঁছেছেন, তবে বাকী পথ অতিক্রম করা অত সহজ হবে না। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত এনরিক মোরা বলেছেন, কারিগরি বিষয়ে আলোচনায় অগ্রগতির ফলে তারা এখন, রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর ব্যাপারে একটা স্পষ্ট ধারণা পাচ্ছেন।

আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলোকে উদ্ধৃত করে নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, ভবিষ্যতের কোনও মার্কিন প্রশাসন যেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো এবারের চুক্তি বাতিল করতে না পারে, সে রকম নিশ্চয়তা চায় তেহরান। একজন মার্কিন কূটনীতিকের ভাষায়, ‘ইরান চায় এমন একটি স্থায়ী ব্যবস্থা, যা কোনও সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দেশের পক্ষে করা অসম্ভব।’

কট্টরপন্থীদের উত্থান

এই আলোচনার সব হিসেব-নিকেশ এখন পাল্টে গেছে ইরানে কট্টর রক্ষণশীল প্রার্থী ইব্রাহিম রায়িসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর। বিবিসির ফারসি বিভাগের বিশ্লেষক কাসরা নাজি বলেন, এ পর্যন্ত যেসব কথাবার্তা রায়িসি বলেছেন, তাতে তিনি নিজের এমন কোনও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেননি, যা থেকে বোঝা যাবে, আগামী চার বছর ইরানের কেমন যাবে। কোনও কোনও পর্যবেক্ষকের মতে, তিনি হবেন আসলে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির নির্বাহী কর্মকর্তা, তার নীতি বাস্তবায়ন করবেন। সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে খামেনি এমনিতেই যথেষ্ট শক্তিশালী। কিন্তু মনে করা হয় তিনি এখন আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে আরও বেশি মাত্রায় এখন ইরানের আভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক নীতি পরিচালনা করছেন। কাজেই রায়িসির মতো একজন কট্টরপন্থী রাজনীতিক যখন ইরানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন, তখন ভিয়েনা বৈঠকের ফল আসলে শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে, সেটা নিয়ে অনেকে সন্দিহান। সূত্র: বিবিসি।

/এমপি/
সম্পর্কিত
দালাই লামার উত্তরসূরি, চীন-ভারত সংঘাত আর একটি সোনার কৌটো
ভারতে চালু হতে চলেছে মোবাইল ভোটিং 
এক সপ্তাহে দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী পেলো থাইল্যান্ড
সর্বশেষ খবর
হিজরি সনের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক গভীর যে কারণে
হিজরি সনের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক গভীর যে কারণে
চকরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ২
চকরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ২
১৩ ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে মরিয়া সহকর্মীরা
১৩ ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে মরিয়া সহকর্মীরা
ফিরে দেখা: ৪ জুলাই ২০২৪
ফিরে দেখা: ৪ জুলাই ২০২৪
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি