১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) থেকে কার্যকর হচ্ছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট। অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করবে অর্থমন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো। করোনায় লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতিকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করবে সরকার।
অর্থমন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, কাল থেকেই শুরু হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার করপোরেট কর কমানোর নতুন কার্যক্রম। সেইসঙ্গে ক্রসচেকে লেনদেনের শর্ত শিথিল করা শিল্পের কাঁচামাল ক্রয়ের কর্মসূচিও শুরু হবে। শিল্পখাতে কালো টাকা বিনিয়োগে দেওয়া ‘বিশেষ’ সুযোগ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এসআরও জারি করবে এনবিআর।
আরও জানা গেছে, সরকার তিন খাতে বিনিয়োগের শর্তে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেবে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২১ পাসের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পাস করা হয়েছে। যা জিডিপির ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বুধবার (৩০ জুন) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এ বিল পাস হয়। এ সময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ৩০ জুন বাজেট সংক্রান্ত নির্দিষ্টকরণ বিলে অনুমোদন দেবেন এবং বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে তা বাস্তবায়ন শুরু হবে।
বুধবার (৩০ জুন) স্পিকারের সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হলে শুরুতে ২০২১-২২ সালের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আনীত ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর অন্য মন্ত্রীরা তাদের স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কণ্ঠভোটে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
পরে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল নির্দিষ্টকরণ বিল ২০২১ জাতীয় সংসদে পাস করার জন্য উত্থাপণ করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। এ সময় সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। এ সময় বিরোধীদলীয় সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন সংসদে।
উল্লেখ্য, এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’। অর্থমন্ত্রী এ বাজেটকে মানবিক ও মানুষের জন্য স্বপ্নপূরণের বাজেট আখ্যা দিয়েছেন।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি ধরা হয়েছে ৩৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা।
পাস হওয়া বাজেটে ঘাটতি রয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। বৈদেশিক অর্থায়ন থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ৩৭ হাজার ১ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতির এই হার জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বেশি। সকল প্রকার বিলাসপণ্য বিশেষ করে আমদানি করা পণ্যে ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। বাড়ির নকশা অনুমোদন করতে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে শহরে বা গ্রামে বাড়ি করতে টিআইএন নিতে হবে। এতে করের আওতায় আসবেন বাড়ির মালিক। এ ছাড়া যে কোনও সমবায় সমিতির নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
করোনায় অনেকে কর্মহীন হয়েছেন। তাই বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বলয়ের পরিধি বাড়িয়ে বরাদ্দ ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়িয়েছে সরকার। বয়স্কভাতায় নতুন যুক্ত হয়েছেন ৮ লাখ মানুষ। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানি ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
করোনা মহামারিকে গুরুত্ব দিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাখাতে ৩২ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর বাইরে করোনা মোকাবিলায় থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। গবেষণাভিত্তিক স্বাস্থ্যশিক্ষার সম্প্রসারণে আগামী অর্থবছরেও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ‘আমাদের যাত্রা হলো শুরু। এ বাজেট শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করছি। সবার সহযোগিতা পেলে পুরোপুরি বাস্তবায়নে সক্ষম হবো।’ আর এ কাজে সাংবাদিকদের সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও মনে করেন মন্ত্রী।