X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাম সর্বস্ব ঢাবি প্রকাশনা সংস্থা! 

আবিদ হাসান 
০৯ জুলাই ২০২১, ১৬:৫৮আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২১, ১৮:২৬

বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শুরুতে ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পূর্ব বাংলার মানুষের বহুল আকাঙ্ক্ষিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’। পূর্ব বাংলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জন্য এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দশকেই প্রতিষ্ঠা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম একটি অঙ্গ সংগঠন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা’ বা ‘ঢাবি প্রকাশনা সংস্থা’।

১৯২৬ সালে মাইকেল ওয়েস্ট’র ‘দ্য কনস্ট্রাকশন অব রিডিং মেটেরিয়াল ফর টিচিং অ্যান্ড ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে পথ চলা শুরু করে ঢাবি প্রকাশনা সংস্থা। প্রতিষ্ঠার প্রথম তিন দশকে এটিই ছিল একমাত্র প্রকাশিত গ্রন্থ। 

এরপর প্রতিষ্ঠার চতুর্থ দশক এবং বিংশ শতাব্দীর পঞ্চম দশকের মাঝামাঝিতে ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয় এম মাহমুদ রচিত ‘দ্য থিওরি অব জাজমেন্ট ইন দ্য ফিলোসোফি অব এফ এইচ ব্র্যাডলি অ্যান্ড জন কুক উইলসন’ এই প্রকাশনীর দ্বিতীয় গ্রন্থ। এই দশকেই প্রথম বাংলা সাহিত্য সম্পর্কিত প্রথম গ্রন্থ, মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ রচিত ‘বাংলা আদব কি তারিখ’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৭ সালে। তবে এটি উর্দু ভাষায় রচিত হয়েছিল।

দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে বাংলা ভাষায় কোনও গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি এই প্রকাশনা সংস্থা থেকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছর ১৯৭২ সালে মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ও আনোয়ার পাশা’কে নিয়ে সৈয়দ আকরাম হোসেন সম্পাদিত বাংলায় প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। 

বিংশ শতাব্দীর পঞ্চম দশকে এই প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৫টি। যার মধ্যে বাংলা ভাষা সম্পর্কিত ১টি। ষাটের দশকে প্রকাশিত হয় ৯টি গ্রন্থ। যার সব কটিই ইংরেজিতে। সত্তরের দশকে প্রকাশিত হয় ১১টি গ্রন্থ যার ৯টি ইংরেজিতে, ২টি বাংলায়। আশির দশকে ৫৩টি। দশকের বিচারে এই দশকেই সবচেয়ে বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। যার মধ্যে ৩৬টি ইংরেজি আর ১৭টি বাংলা প্রকাশিত গ্রন্থ। নব্বইয়ের দশকে প্রকাশিত হয় ৪৪টি। যার মধ্যে ইংরেজিতে ২৮টি, বাংলায় ১৬টি। একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে প্রকাশিত হয় ৩০টি। যার ১৪টি ইংরেজিতে আর বাংলায় ১৬টি। এই শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে প্রকাশিত মোট গ্রন্থ ২৭টি। যার ১৭টি ইংরেজিতে আর বাংলায় ১০টি। এগুলো ২০১৯ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থ। ২০২০ সালের সাতটি গ্রন্থের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানা যায়। 

১৯২৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত এই প্রকাশনীর প্রকাশিত মোট গ্রন্থের সংখ্যা ১৮০টি। যার মধ্যে ইংরেজিতে ১১৭টি, বাংলায় ৬৩টি। ইংরেজি ১১৭টি গ্রন্থের মধ্যে সম্পাদিত গ্রন্থ ১১টি, অনুদিত গ্রন্থ ১টি। ইংরেজিতে অনুদিত একমাত্র গ্রন্থটি ‘সিলেক্টেড পয়েমস অব কাজী নজরুল ইসলাম’, যার অনুবাদক আবু রুশদ।

বাংলায় প্রকাশিত ৬৩টি গ্রন্থের ১১টি সম্পাদিত ও ২টি অনুদিত। বাংলায় অনুদিত গ্রন্থ দুটি হলো ম. আখতারুজ্জামান অনুদিত ‘জিনের ভাষা’ ও হাসনা বেগম অনুদিত ‘এরিস্টটলের নিকোমেকিয়ান এথিকস’।

১৯২৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৯৩ বছরে গড়ে প্রতি বছর প্রকাশিত বই দুইটিরও কম। এ যেন নাম সর্বস্ব প্রকাশনা সংস্থা। আজকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্লান মূর্তিই যেন ধারণ করছে এই প্রকাশনা সংস্থাটি।

যেই আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব, অবদান রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি গর্ব করে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মহল, সেই আন্দোলন সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস-ঐতিহ্য, গুরুত্ব-তাৎপর্য তুলে ধরতে পারতো জাতির সামনে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ভাষা আন্দোলন নিয়ে ১৯৯১ সালে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি ১৯৯১, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হলেও স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনও গ্রন্থ প্রকাশে ব্যর্থ ঢাবি প্রকাশনা সংস্থার কর্তৃপক্ষ। 

এবিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি প্রকাশনা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্য প্রকাশনীগুলো যেভাবে কমিশন করে নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর লেখকদের কাছ থেকে লেখা চায়, ঢাবি প্রকাশনা সংস্থা সেভাবে কারও কাছে লেখা চায় না। কোনও শিক্ষক স্বেচ্ছায় লেখা জমা দিলে তা-ই প্রকাশ করা হয়। এভাবে চাওয়া হয়নি বলে যে, হবে না- এমন নয়।’

প্রকাশনা সংস্থার এই বেহাল দশা সম্পর্কে জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. হাসানুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই প্রকাশনা বাইরের কারও বই প্রকাশ করে না। যে সকল শিক্ষকরা বই লেখেন তারাও এখান থেকে বই প্রকাশ করেন না। সংস্থাটি মূলত পরীক্ষার খাতা সিলেবাস নিয়েই কাজ করে। লোকবলও তেমন একটা নেই।’ 

শিক্ষকরা এই প্রকাশনী থেকে বই প্রকাশ না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক শিক্ষক জানেনই না বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা থেকে বই প্রকাশ করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা কী দেবে, যিনি প্রকাশ করবেন তিনি কী পাবেন; এমনকি পেইড সিস্টেম হলে কত টাকা পরিশোধ করতে হবে- এ ধরনের কোনও নীতিমালা শিক্ষকদের কাছে যায় না। এ ছাড়া প্রকাশনা সম্পর্কিত কোনও প্রচারণা নেই।’ 

 

/এনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ