X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

কে এই মুক্তার আলী?

দুলাল আবদুল্লাহ, রাজশাহী
১০ জুলাই ২০২১, ১৪:১৩আপডেট : ১০ জুলাই ২০২১, ১৪:১৩

সম্প্রতি রাজশাহীতে বহুল আলোচিত বাঘা উপজেলার আড়ানি পৌর মেয়র মুক্তার আলীর নাম। এর আগেও বিভিন্ন সময় বিতর্কিত ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি একাধিকবার আলোচনায় এসেছেন। সম্প্রতি পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মনোয়ার হোসেনকে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।অবৈধসম্পদ উদ্ধারসহ পুলিশ তার স্ত্রী এবং দুই ভাতিজাকেও গ্রেফতার করেছে।প্রতিপক্ষকে দমন করতে নিজ বাড়িকে ‘টর্চার সেল’ হিসেবে ব্যবহার করতেন মেয়র মুক্তার। সেখান থেকেই অস্ত্র, মাদকসহ কোটি টাকা জব্দ করেছে পুলিশ। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন এখন প্রশ্ন– কে এই মুক্তার? কীভাবে তিনি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেন? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলেছে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে।

মুক্তারের উঠে আসার গল্প অত্যাচার-নির্যাতন-অন্যায়সহ রহস্যঘেরা। এত বির্তকিত কর্মকাণ্ডের পরও তিনি কীভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন– এমন প্রশ্নও রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ষড়যন্ত্র, নির্যাতন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মোকাবিলা করেছেন তিনি। জনপ্রতিনিধি হয়েই বনে যান বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক। তার বেপরোয়া জীবনযাপন। বাড়িতে রয়েছে নামিদামি আসবাব। আছে প্রাইভেটকার ও তিনটি মোটরসাইকেল। নামে-বেনামে কিনেছেন জমি। ছেলে রাজু আহমেদকে করে দিয়েছেন হার্ডওয়্যারের দোকান।

উদ্ধার অবৈধ অস্ত্র ও গুলি মুক্তার আলী ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। কিন্তু অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পরের বছরই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়। ২০০৬ সালে আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদ পৌরসভা হয়ে যায়। পরবর্তীতে পৌরসভার কাউন্সিলর হন। দিনে দিনে হয়ে ওঠেন আওয়ামী লীগের বড় নেতা। তিনি চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি পৌর নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে মেয়র নির্বাচিত হন।

স্থানীয়রা জানান, এমন কোনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নেই, যেখানে মেয়র মুক্তারের মদত থাকে না। পৌর এলাকায় তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী আছে। যেটা ‘মুক্তার বাহিনী’ নামে পরিচিত। প্রতি রাতে মদের নেশায় মাতেন মুক্তার আলী। ‘ভীষণ রগচটা’ এই সন্ত্রাসী মেয়রের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়নি এমন কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী খুঁজে পাওয়া যাবে না পৌরসভায়। বংশ পরম্পরায় মুক্তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তার বাবা নইম উদ্দিন, ‘নইম ডাকাত’ নামেই পরিচিত। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে তাকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলে। মুক্তারের বড় ভাইয়ের নাম ‘কালু’। যার অত্যাচার, নির্যাতন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে প্রায় পাঁচ বছর সেও হত্যার শিকার হয়।

সরদা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মনিরুল আজম বলেন, ‘তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে সমর্থন না করায় আড়ানীতে মেয়র মুক্তার আলী আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছিলেন।’

অভাব অনটনের সংসারে অষ্টম শ্রেণি পাস করতে না পারা মেয়র মুক্তার বিলাসী জীবন যাপন করতেন। প্রথম দিকে চাঁদা তুলে সংসার চললেও এই মেয়রের ঘরেই মিলেছে কোটি টাকা। অস্ত্র, গুলি এবং মাদকের মজুত।

উদ্ধার টাকা ও চেক নির্যাতনের শিকার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আজিবর রহমান ১৬ জানুয়ারি নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেন। নৌকার পক্ষে কাজ করার অপরাধে নির্বাচনের এক সপ্তাহ পর তাকে হাতুড়ি ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে এক পা ভেঙে দেন মেয়র মুক্তার আলী ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। এই ঘটনায় মুক্তাকে প্রধান আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। তারপর থেকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মেয়র বারবার হুমকি প্রদান করেন। এমনকি মামলা তুলে না নিলে আরেক পা ভেঙে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয় বলে জানান আজিবর।

বর্তমানে আজিবর রুস্তমপুরের নিজ বাড়িতে রয়েছেন। তিনি একটি বেসরকারি ওষুধ কোম্পানিতে কাজ করতেন। পঙ্গু হয়ে যাওয়ায় চাকরিটাও হারিয়েছেন। বর্তমানে চার সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে বেকাদায় রয়েছেন। আজিবর বলেন, ‘ঘরে খাবার নেই, টাকাও নেই। কী করে সংসার চালাবো? বর্তমানে ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি। মেয়র মুক্তার গ্রেফতারের আগে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছেন।’

আড়ানী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রুস্তমপুর গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘মেয়র মুক্তার একজন বেপরোয়া মানুষ। তার অত্যাচারে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আমরাও অতিষ্ঠ ছিলাম। তার কাছে কেউ কোনও কাজ নিয়ে গেলে কাজ করে দেওয়ার পরিবর্তে লাঞ্ছিত হতে হয় বেশির ভাগ মানুষকে। প্রয়োজন হলেও তার কাছে থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতাম।’

আড়ানী নুরনগরের একটি মসজিদ কমিটির সভাপতি বলেন, ‘আমাদের মসজিদে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। মেয়র হওয়ার পরে তার কাছে গিয়ে বিয়য়টি জানাতেই আমাদের কয়েকজনের উপর মারমুখি হয়ে উঠলেন তিনি। নিরুপায় হয়ে তার কাছে থেকে চলে আসতে হয়।’

বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন বলেন, ‘এমন কোনও অন্যায় নেই, যেটা মেয়র মুক্তার আলী আড়ানীর মানুষের সঙ্গে করেননি। এ রকম মেয়র আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের। আড়ানীর মানুষ খুব ঠান্ডা প্রকৃতির। কিন্তু মেয়র খুব গরম মেজাজের। আমাদের দুঃখ রাখার জায়গা নেই।’

বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, শুক্রবার (৯ জুলাই) ভোর রাতে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ফুরফুরা মাজার শরীফের পেছনের এলাকার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে মুক্তার আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আড়ানী পৌরসভার পিয়াদাপাড়া মহল্লায় তার উপস্থিতিতে নগদ এক লাখ ৩২ হাজার টাকা, ১০ গ্রাম গাজা,  ৪ বোতল ফেনসিডিল, ১৬ ইঞ্চি ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়।

বর্তমানে মেয়র মুক্তার আলী রাজশাহী কারাগারে রয়েছেন। তার সঙ্গে আরও কারাগারে রয়েছেন– তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার, শ্যালক রজন আহমেদ, ভাতিজা শান্ত ও সোহাগ। মুক্তারের নামে থানায় আটটি মামলা চলমান রয়েছে।

 

/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
ভিকারুননিসায় জালিয়াতি করে আরও ৩৬ ছাত্রী ভর্তির তথ্য ফাঁস
ভিকারুননিসায় জালিয়াতি করে আরও ৩৬ ছাত্রী ভর্তির তথ্য ফাঁস
সর্বাধিক পঠিত
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা