X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘হতভম্ব’ জাতীয় কমিটি এবার ‘হতাশ’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৭ জুলাই ২০২১, ১১:০৮আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২১, ১১:৩৬

ঈদুল আজহার আগে ৯ দিন লকডাউন শিথিলের সংবাদে ‘হতভম্ব’ হয়েছিল কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটি। গভীর উদ্বেগ জানিয়ে কমিটি সেসময় কঠোর লকডাউন টানা আরও দুই সপ্তাহ রাখার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সরকার জাতীয় কমিটির গভীর উদ্বেগকে আমলে না নিয়ে গত ১৩ জুলাই এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। ঈদের পরে সংক্রমণ আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, এতে এবার ‘হতাশা’ প্রকাশ করেছেন কারিগরি কমিটির সদস্যরা।

বিধিনিষেধ শিথিল করার ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদ পূর্ববর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে আগামী ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত আগের আরোপিত সকল বিধিনিষেধ শিথিল করা হলো।

কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান সেসময় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ প্রজ্ঞাপনে আমরা বিস্মিত, হতভম্ভ। সব খুলে দেওয়া হলো ৯ দিনের জন্য। সরকার বলছে, শিথিল করা হলো। অথচ সব আগের অবস্থায় চলে যাবে।’

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্যরা বলেন, বিধিনিষেধ শিথিলতার এ নির্দেশনায় তাদের ‘সায়’ ছিল না। তারা বলেন, সরকারের বিধিনিষেধ শিথিলের এ ঘোষণা তাদের পরামর্শের উল্টো। এ সময় এ ধরনের শিথিলতা বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ারই শামিল। এমনকি স্বাস্থ্য অধিদফতর যেখানে বারবার ভিড় এড়িয়ে চলার কথা বলছে, সেখানে সংক্রমণের ‘পিক টাইম’-এ এ ধরনের ঘোষণা আমাদের আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

আর লকডাউন শিথিলের সুযোগ নিয়ে ঢাকা ছেড়ে গ্রামমুখী হয়েছেন মানুষ। বাস, লঞ্চ কিংবা ফেরিতে গাদাগাদি করে গ্রামে গিয়েছেন ঈদ করতে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির এক হিসাবে, ঈদের ছুটিতে ২২ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা ছেড়েছেন ১ কোটি ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬৮৩টি মোবাইল সিমের ব্যবহারকারী। এত মানুষের ফেরার জন্য সময় রাখা হয়েছিল একদিন। আর এতে ফেরার পথেও হয় নানান বিশৃঙ্খলা। এখনও বিধিনিষেধের মধ্যেই নানানভাবে ঢাকায় ঢুকছে মানুষ।

এর ফলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশংকাকে সত্যি প্রমাণ করে গত ২৪ ঘণ্টায় (২৬ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে গত মহামারিকালের সর্বোচ্চ মৃত্যু ও রেকর্ড সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছেন। একই দিনে দেশে করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এই সময়ে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ২৪৭ জনের মৃত্যু ও এ যাবৎকালে একদিনের সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৫ হাজার ১৯২ জনের শনাক্ত হওয়ার খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

এর প্রতিক্রিয়ায় কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘আমি হতাশ, অবশ্যই হতাশ। খুবই দুঃখজনক হলো বিষয়টা।

সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিকে ‘মাল্টি-ফেকটোরিয়াল’ বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ডেফিনিটলি শিথিলতা এখানে কাজ করেছে, সংক্রমণ বাড়তির দিকে।

‘সেই সঙ্গে শিথিলতার মাধ্যমে যখন মানুষ ঘরের বাইরে বেরিয়েছে, তাদের মধ্যে একটি ‘সিগনিফিকেন্ট নাম্বার’ কোনও রকম স্বাস্থ্যবিধি মানে নাই’, বলেন তিনি।

‘যদি এমন হতো, আমরা শিথিল করলাম, কিন্তু শতভাগ মানুষের মুখে মাস্ক পরছে, তাহলে কি আজ এরকম হতো?...হতো না। এটা একটা বিষয়, আর এর সঙ্গে রয়েছে মাঝে ভ্যাকসিন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া। মাত্র তিন থেকে চার শতাংশের বেশি আমরা এখনও যেতে পারিনি। এটিও একটা কারণ। 

সঙ্গে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণশীলতাকেও ঊর্ধ্বমুখিতার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, এখন যত সংক্রমণ হচ্ছে তার মধ্যে ৮০ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট, এই ভ্যারিয়েন্ট আগের যে কোনও ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে প্রায় দেড়গুণের বেশি ছড়াচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সব মিলিয়েই এ অবস্থা।

তিনি বলেন, এত মৃত্যু, এত সংক্রমণ দেখে হতাশ লাগছে, কিন্তু হতাশ হলে হবে না। এর চেয়েও হতাশাজনক অবস্থা অন্যান্য দেশ দেখেছে। তাই এখন সঠিক কাজটি সবাই মিলে করা দরকার। তার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সবাইকে বাধ্য করা। দ্বিতীয়ত, যে লকডাউন চলছে, তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা এবং তৃতীয়ত, রোগী শনাক্ত করণ টেস্টের সংখ্যা আরও বাড়ানো। পারলে প্রতিদিন লাখের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া।

শনাক্ত রোগীদের আইসোলেশনে নেওয়াটাও জরুরি উল্লেখ করে অধ্যাপক সহিদুল্লা বলেন, সেই সঙ্গে যারা আক্রান্তের সংর্স্পশে এসেছেন তাদেরও কোয়ারেন্টিন করা। আর ফাইনালি আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে দ্রুত, বলেন তিনি।

কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এত মৃত্যু দেখে আজ সত্যিই হতাশ লাগছে। তবে এত মৃত্যু হচ্ছে হাসপাতাল অব্যবস্থাপনা ঘাটতির জন্য। হাসপাতালে অক্সিজেন নাই, যার অক্সিজেন লাগবে তাকে সেটা দেওয়া যাচ্ছে না। যার আইসিইউ লাগবে, তাকে আইসিইউ দেওয়া যাচ্ছে না। মানুষ মারা যাচ্ছে। জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী, অথচ এখনও পর্যন্ত সেটা কার্যকর হয়নি।

করোনার সংক্রমণ কি কেবল ঢাকাতেই প্রশ্ন করে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকাতেও সব (আইসিইউ) ফুরিয়ে আসছে। আবার বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ ঢাকায় আসবেন, কিন্তু কতজন আসতে পারছেন, সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে।

/জেএ/ইউএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!