X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
মাদক ভয়ংকর পর্ব-৩

নতুন মাদকের টার্গেট ঢাকা

আমানুর রহমান রনি
২৮ জুলাই ২০২১, ১৩:০০আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২১, ১৬:০৬

দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ও বাজার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এখন অন্যতম। প্রতিনিয়ত ধরা পড়ছে কারবারিরা। তবু থেমে নেই নতুন মাদকের আমদানি। এ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকলো তৃতীয় পর্ব।

দেশে চার ধরনের নতুন মাদক পাওয়া গেছে গত দুই বছরে। এগুলো এখনও ঢাকার বাইরে ছড়ায়নি। এমনই ধারণা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।

নতুন মাদক সংশ্লিষ্ট যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা ঢাকা মহানগর এলাকাতেই ধরা পড়েছে। তবে ‘আইস’ বা ‘ক্রিস্টাল মেথ’ এর একটি বড় চালান টেকনাফ থেকে জব্দ করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। সেটিও ঢাকার জন্য আনা হচ্ছিল। ঢাকামুখী এসব মাদক কারবারিদের আটকানো না গেলে ইয়াবার মতো নতুন মাদকও সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশংকা বিশেষজ্ঞদের।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি টিম মোহাম্মদপুর থেকে আইসসহ রাকিব উদ্দিন নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছিল। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জিগাতলার ৭/এ নম্বর সড়কের ৬২ নম্বর বাসার নিচতলায় অভিযান চালিয়ে একটি মাদক তৈরির ল্যাবের সন্ধান পাওয়া যায়।

ওই ঘটনায় হাসিব মোহাম্মদ মোয়াম্মার রশিদ নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। মোয়াম্মার মালয়েশিয়া থেকে লেখাপড়া করে ঢাকায় নিজেদের ভবনে ওই গবেষণাগার গড়ে তুলেছিল। সেখানে আইস বানাতো সে। এর কয়েক মাস পর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে এক নাইজেরিয়ান নাগরিককে গ্রেফতার করে অধিদফতরের সদস্যরা।

২০২০ সালের ৪ নভেম্বর রাজধানীর গেন্ডারিয়া থেকে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও তার পাঁচ সহযোগীসহ ছয়জনকে ৬০০ গ্রাম আইসসহ গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর থেকে র‌্যাব, পুলিশ ও অধিদফতরের অভিযানে আইসের একাধিক চালান উদ্ধার করা হয়।

‘আইস’ বা ক্রিস্টাল মেথ ইয়াবার চেয়েও শক্তিশালী। ইয়াবায় মিথাইল অ্যামফিটামিন ব্যবহার করা হয় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে। আইস বা ক্রিস্টাল মেথ মানে শতভাগ মিথাইল অ্যামফিটামিন।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত যে তথ্য রয়েছে তাতে দেখেছি, আইস ও এলএসডি বেশ ব্যয়বহুল মাদক। ধনী পরিবারের সন্তানরা এসব সেবন করে। প্রতিবার আইস সেবন করতে তাদের খরচ হয় ১০-১২ হাজার টাকা। এটি সবার পক্ষে কেনা সম্ভব না।’

দুই বছরে ঢাকায় গ্রেফতার ৩৫
গত দুই বছরে নতুন চার ধরনের মাদকসহ ৩৬ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও ডিএমপি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর গত দুই বছরে মোট তিন কেজি আইস আটক করেছে। গ্রেফতার করেছে ছয়জনকে। ২০২১ সালের মার্চে দুই কেজি আইসসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে টেকনাফের হ্নীলা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাব জানিয়েছে, গত দুই বছরে তারা পাঁচটি অভিযানে আইস, এলএসডি, ডিএমটি ও ম্যাজিক মাশরুমসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে ৩ কেজি ২৭০ গ্রাম আইসসহ ১১ জন, এলএসডি’র ৪০টি ব্লট ও ৬০০ মিলিগ্রাম ডিএমটিসহ চারজন এবং ম্যাজিক মাশরুমের ৫টি বার ও ১২০টি স্লাইসসহ দুজন গ্রেফতার হয়। এসব চালান উদ্ধার করা হয় ঢাকা থেকে।

র‌্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছি। নতুন মাদকের বিষয়েও তৎপর রয়েছি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়ে নতুন মাদকসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছি।’

অপরদিকে, ২০২০ ও ২০২১ সালে নতুন মাদকসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে ডিএমপি। এসময় প্রায় পৌনে এক কেজি আইস ও ২ গ্রাম ১২ মিলিগ্রাম এলএসডি উদ্ধার করা হয়।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে নতুন মাদকের বিষয়ে অনেক তথ্য পেয়েছি। অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

২০২০ সালে ডিএমপিতে ১২ হাজার ৬১৯টি মাদকের মামলা হয়েছে। এসময় গ্রেফতার হয়েছে ১৮ হাজার ৫৫৫ জন। ২০২১ সালের প্রথম ছয়মাসে ডিএমপিতে মাদক মামলা হয়েছে ৭ হাজার ৪৪৩টি। গ্রেফতার হয়েছে ১০ হাজার ৫৫০ জন।

‘মাদক কারবারিরা বিভিন্ন মাদক দিয়ে সাপ্লাই চেইন ধরে রাখার চেষ্টা করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও তৎপর থাকতে হবে।’ এমনটা উল্লেখ করে মানস-এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. অরুপ রতন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাদক কারবারিরা বসে থাকে না। এক মাদকে বাধা পেলে অন্য মাদক দিয়ে বাজার ধরার চেষ্টা করে।’

সম্প্রতি ভয়ংকর মাদক এলএসডিসহ গ্রেফতার ৫ শিক্ষার্থী (ফাইল ছবি)

দেশে মাদকাসক্ত কত?
২০১৮ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এক সমীক্ষা পরিচালনা করে। তাতে বলা হয়, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ। এর মধ্যে ১৮ বছর বা এর বেশি বয়সী মাদকাসক্ত আছে প্রায় ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার। ৭ বছরের বেশি কিন্তু ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোর আছে ৫৬ হাজারের কিছু বেশি।

২০১৩ সালের নভেম্বরে দিল্লিতে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (ইউএনওডিসি) তাদের রিজিওনাল অফিস থেকে বাংলাদেশের মাদক নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মাদকসেবীর সংখ্যা ৪০ লাখ ৬০ হাজার বলে জানিয়েছে।

বাংলাদেশে মাদক গ্রহণের প্রবণতা ও ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করলে গত ৮ বছরে এই সংখ্যার সঙ্গে নতুন করে আরও ৫-৭ লাখ যুক্ত হবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। সেই হিসাবে দেশে এখন মাদকাসক্ত আছে প্রায় ৫০ লাখ।

অবশ্য এ পরিসংখ্যানের সঙ্গে একমত নয় দেশের এনজিওগুলো। তারা দাবি করছে, বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭৫ লাখেরও বেশি। মানস-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ৭৫ লাখ মাদকসেবী রয়েছে। যাদের ৮০ শতাংশই তরুণ। তারা একাধিক মাদকে আসক্ত।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কোনও পরিসংখ্যানকেই অস্বীকার করছে না। কারণ এ নিয়ে তাদের নিজস্ব কোনও গবেষণা নেই। তারা সর্বোচ্চ সংখ্যাটাকে বিবেচনা করেই বার্ষিক পরিকল্পনা সাজায়।

/এফএ/
টাইমলাইন: ভয়ংকর মাদক
২৯ জুলাই ২০২১, ১৫:০০
২৮ জুলাই ২০২১, ১৩:০০
নতুন মাদকের টার্গেট ঢাকা
২৬ জুলাই ২০২১, ১৬:০৯
সম্পর্কিত
তামাক কর বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ তরুণের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব
ইয়াবাসহ ইউপি চেয়ারম্যানের ছোট ভাই গ্রেফতার
যুক্তরাষ্ট্র থেকে পার্সেলে তরুণদের কাছে আসছে কোটি টাকার মাদক
সর্বশেষ খবর
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
সর্বাধিক পঠিত
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!