X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

উপহারের ঘর পেলেন এক ব্যক্তির ২৭ স্বজন

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
১১ আগস্ট ২০২১, ১২:০০আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২১, ১৭:১৫

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনে উপহারের ঘর বরাদ্দ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে তার অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর পরিচালকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে পাঠিয়েছেন স্থানীয়রা।

তবে স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, অনিয়ম ছাড়াই অত্যন্ত সতর্কতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে উপহারের ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয়।

জেলায় সর্বমোট উপহারের ঘর:
জেলার ৯ উপজেলায় দুই হাজার ৬০০টি ঘর নির্মাণ হচ্ছে। এরমধ্যে দুই হাজার ৪৮১টি ঘর উপকারভোগীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো শিগগিরই হস্তান্তর করা হবে।

অভিযোগ ও অনুলিপি:
এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ‘সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নে ‘ধরলা আশ্রয়ণ প্রকল্পে’ প্রকৃত ভূমিহীনদের বঞ্চিত করে বেশ কিছু সচ্ছল পরিবারের সদস্যদের ঘর দেওয়া হয়েছে। এমনকি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে এক পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে ঘর দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের নির্মাণকাজ দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ময়েজ উদ্দিন বাচ্চু নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির চার সন্তান এবং আত্মীয়-স্বজনসহ ২৭ জনের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব ঘর বরাদ্দে আর্থিক লেনদেনও হয়েছে।’

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘এসব অনিয়ম নিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। কিন্তু ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো অভিযোগকারীদের হুমকি দেন তারা।’

উপহারের ঘর পেলেন এক ব্যক্তির ২৭ স্বজন ধরলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের অবস্থান:
কুড়িগ্রাম-পাঁচগাছী-যাত্রাপুর সড়কের পাশে আরাজি ভোগডাঙা মৌজায় উত্তর নওয়াবশ গ্রামে ৮৯টি ঘর নিয়ে ধরলা আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরি করা হয়। প্রায় সাড়ে ছয় একর ‘সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত’ জমিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ইতোমধ্যে সুবিধাভোগীদের ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগের সত্যতা অনুসন্ধান করে বাংলা ট্রিবিউন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত জায়গাসহ প্রায় আট একর ২৬ শতক জমি নিয়ে ১৭ বছর ধরে মামলা চলমান ছিল। ময়েজ উদ্দিন বাচ্চু ও মেহের আলী নামে দুই ব্যক্তি ওয়ারিশ সূত্রে জমির মালিক দাবি করে বাদী পক্ষে লড়ছেন। প্রকল্পের ঘর নির্মাণে বাদী পক্ষের ময়েজ উদ্দিন বাচ্চুর সঙ্গে সমঝোতা করলেও মেহের আলীর সঙ্গে সমঝোতা করতে ব্যর্থ হয় স্থানীয় প্রশাসন।

এ অবস্থায় বাচ্চু ও তার আত্মীয়দের নামে একাধিক ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। ভূমিহীন না হয়েও এবং এক পরিবারের একাধিক সদস্যকে ঘর দেওয়া নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। প্রতিকার চেয়ে মানববন্ধন করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রতিকার পাননি স্থানীয়রা। 

ভূমিহীন না হয়েও এক পরিবারের একাধিক সদস্যের ঘর পাওয়ার সত্যতা মিলেছে বাংলা ট্রিবিউনের অনুসন্ধানে। দেখা গেছে, ময়েজ উদ্দিন বাচ্চুর দুই ছেলে ও দুই মেয়েসহ চার সন্তান ঘর পেয়েছেন। অথচ ময়েজ উদ্দিন বাচ্চু কয়েক বিঘা জমির মালিক। তার কয়েক শতক জমির ওপর রয়েছে বড় টিনের ঘর। রয়েছে রাইস মিল ও ট্রাক্টর। প্রায় তিন বিঘা জমিতে তিনি চাষাবাদ করেন। তবে বাচ্চুর দাবি, কয়েক বিঘা জমি ভোগদখল করলেও তা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া মনিফা বেগমের বাড়ি অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাচ্চুর বড় মেয়ে মনিফা বেগমের স্বামীর নিজস্ব জমি ও বাড়ি রয়েছে। এরপরও তাকে উপহারের ঘর দেওয়া হয়েছে। তবে প্রকল্পের ঘরে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের ঘরে না থেকে নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন মনিফা বেগম।

বাচ্চুর বড় ছেলে মিজানুর রহমান ও মেজো ছেলে মজিদুল হক সরকারি ঘর পেয়েছেন। অথচ তারাও সচ্ছল। বাচ্চুর ছোট মেয়ে মিনু বেগমের স্বামীর নিজস্ব কোনও সম্পদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। মিনু বেগমের স্বামী হারুন অর রশিদ মানসিক রোগী হওয়ায় উপার্জনের পথ বন্ধ। সে বিবেচনায় শুধু মিনু বেগমের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া যৌক্তিক বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

চার সন্তানের পাশাপাশি উপহারের ঘর পেয়েছেন বাচ্চুর বোন জামাইসহ ২৭ আত্মীয়-স্বজন। এদের একজন আবেদ আলী (৮০)। বাচ্চুর চাচাতো ভাই আবেদ আলীর নিজস্ব জমি ও ঘর থাকলেও স্ত্রীর নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তার মেয়ে আমিনার নামেও দেওয়া হয়েছে ঘর।

আবেদ আলীর দাবি, তার ছেলেরা সৎমাকে বাড়িতে জায়গা না দেওয়ায় স্ত্রীর জন্য ঘরের আবেদন করেন। যাতে তার মৃত্যুর পর স্ত্রীকে পথে বসতে না হয়। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় তার প্রায় তিন বিঘা জমি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়েছে। বিনিময়ে দুটি ঘর পেয়েছেন তিনি।

একই অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পের ঘর পাওয়া বিউটি বেগমের বিরুদ্ধে। বিউটি বেগমের স্বামী দিল মোহাম্মদের বাড়ি আছে। তিনি সচ্ছল। অথচ তাকেও ঘর দেওয়া হয়েছে।

ময়েজ উদ্দিন বাচ্চুর বাড়ি প্রশাসনের বক্তব্য:
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফার ইয়াছমিন বলেন, ‘এলাকাবাসীর অভিযোগের সত্যতা নেই। অভিযোগকারীদের হুমকি দেওয়ার কথাও সঠিক নয়। এছাড়া একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে ঘর বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টিও সত্য নয়।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রকল্পের কাজ শেষ করেছি। যারা ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন তাদের মধ্যে যদি কেউ ভূমিহীন না হন কিংবা ঘর পাওয়ার যোগ্য না হন; তাহলে আমি সঙ্গে সঙ্গে ঘর পরিবর্তন করে দেবো।’

অনুসন্ধানে সত্যতা পাওয়ার বিষয়টি জানালে জেলা প্রশাসক বলেন, প্রকল্পে ছোটখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে পারে এবং তা জেলা প্রশাসন খতিয়ে দেখবে।

 

/এএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
কোথাও যাতে ভোক্তাদের হয়রানি না হয়, নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
দেশের অর্ধেক জেলা সম্পূর্ণ ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত
বিএনপি-জামায়াতের সুমতি হোক, অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ করুক: প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
উত্তরাসহ দেশের চার পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান
উত্তরাসহ দেশের চার পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান
রনির ব্যাটে প্রাইম ব্যাংককে হারালো মোহামেডান
রনির ব্যাটে প্রাইম ব্যাংককে হারালো মোহামেডান
কুড়িগ্রামে বৃষ্টির জন্য নামাজ, এপ্রিলে সম্ভাবনা নেই বললো আবহাওয়া বিভাগ
কুড়িগ্রামে বৃষ্টির জন্য নামাজ, এপ্রিলে সম্ভাবনা নেই বললো আবহাওয়া বিভাগ
‘উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে’
‘উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে’
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা