X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

৩৩ দিনে লোকসান ৬০ কোটি, চাকরি গেলো ৫ হাজার কর্মচারীর

মাসুদ আলম, কুমিল্লা
১৭ আগস্ট ২০২১, ১৯:১০আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২১, ১৯:১৩

শুধু ৩৩ দিনের লকডাউনে কুমিল্লায় হাইওয়ে হোটেল ব্যবসায় অন্তত ৬০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এই সময়ে চাকরি হারিয়েছেন প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণরোধে ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই এবং ২৩ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ৩৩ দিনের লকডাউনে ক্ষতির পরিমাণ এটি। সে হিসাবে করোনার শুরু থেকে দফায় দফায় লকডাউনে লোকসানের পরিমাণ শতকোটির টাকা ওপরে।

সংকট মোকাবিলা করতে না পেরে কেউ কেউ হোটেল ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ ঋণ নিয়ে ব্যবসা চালু করতে ব্যাংকের দারস্থ হয়েছেন। লকডাউন শিথিল হলেও সরকারি প্রণোদনা কিংবা ব্যাংক থেকে আর্থিক লোন না পেয়ে অনেক মালিক হোটেল বন্ধ রেখেছেন। 

এদিকে, চাকরি হারিয়ে অনেক হোটেল কর্মচারী সবজি ও হকারি ব্যবসা শুরু করেছেন। কেউ কেউ অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত ১০৪ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে প্রায় শতাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে ৬০টির অধিক হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসা পরিবহন কেন্দ্রিক। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কঠোর লকডাউনে বন্ধ থাকায় দৈনিক গড়ে তিন লাখ টাকা করে প্রায় কয়েক কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এসব হোটেলে গড়ে ৮০ জন করে প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন।  

কোরবানির ঈদের আগে ও পরের ৩৩ দিনের লকডাউন শেষ হয় ১০ আগস্ট। লকডাউন শিথিল হলেও হোটেল ব্যবসায়ীরা সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেননি না বলে জানান কুমিল্লা জেলা হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি এম মুকিত টিপু। 

নূরজাহান হোটেলে ৩০০ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতেন, লকডাউনে হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১৫ জন শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করছেন

তিনি বলেন, লকডাউনের সময়ে কুমিল্লা হাইওয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায় ধস নেমেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের পাশে ছোট-বড় প্রায় শতাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁ রয়েছে। গত বছর লকডাউনে ব্যবসার ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই চলতি বছর আবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। সংক্রমণরোধে কঠোর লকডাউনে বন্ধ হয়ে যায় হোটেল ও গণপরিবহন। এ সময়ে বন্ধ থাকা হাইওয়ে হোটেলগুলোতে দৈনিক কোটি কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। লোকসানে পড়ে হোটেল মালিকরা তিন-চতুর্থাংশ শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই করেছেন। বাকি একাংশকে সহায়তা দিয়ে রেখেছেন।

এম মুকিত টিপু আরও বলেন, দৈনিক লোকসানে থাকা হাইওয়ে হোটেল মালিকদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যবসা ছাড়ার পথে হাঁটছেন। জামানত দিয়ে পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় ঘোষণা দিয়ে ব্যবসা ছাড়তে পারছেন না। কারণ পরিবহন মালিকদের সঙ্গে চুক্তিতে হাইওয়ে হোটেলগুলো ব্যবসা চালিয়ে আসছে। লকডাউন শিথিল হলেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা প্রয়োজন তাদের। 

স্থানীয় সূত্র জানায়, পদুয়ারবাজার বিশ্বরোড হাইওয়ের পাশের নূরজাহান হোটেলে প্রায় ৩০০ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতেন। লকডাউনে হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ছাঁটাই শুরু হয়। বর্তমানে ১৫ জন শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করছেন। 

এতে দেখা যায়, ২৮৫ জন শ্রমিক-কর্মচারী শুধু এই হোটেল থেকে চাকরি হারিয়েছেন। নূর জাহান সারাদেশের কয়েকটি সেরা হাইওয়ে হোটেলের মধ্যে একটি। স্বাভাবিক সময়ে এই হোটেলে দিনে চার-পাঁচ লাখ টাকা কেনাবেচা হয়। করোনার সংকটে হোটেলটিতে কেনাবেচা বন্ধ হয়ে গেছে।

একই অবস্থা তৈরি হয়েছে হোটেল জমজম, হাইওয়ে ইন, কুমিল্লা হাইওয়ে ইন, ঢাকা হাইওয়ে ইন, মাতৃভান্ডার ১ ও ২, মায়ামি ১ ও ২, বিরতি, নূরমহল, তাজমহল, ময়নামতি হাইওয়ে ইন ও ব্লু ডায়মন্ডসহ প্রায় শতাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁয়। 

করোনা সংক্রমণের আগে এসব হোটেলে দিনে লাখ টাকার ওপরে কেনাবেচা হতো

ব্লু ডায়মন্ড হোটেলের মালিক মুক্তার হোসেন বলেন, মূলত লকডাউনের কারণে সংকটে পড়েছি। লকডাউনে হোটেল বন্ধ থাকলেও ভাড়া, গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ সব ধরনের বিল দিতে হয়। প্রথম কয়েকদিন শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন দিলেও পরে ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছি। সংকটে আমার হোটেলের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ শ্রমিক-কর্মচারীকে ছাঁটাই করেছি। ৩৩ দিনের লকডাউনে একদিনও হোটেল খুলতে পারিনি। কিন্তু মাসিক ভাড়া ও বিল দিতে গিয়ে লাখ লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত হয়েছি। 

হোটেলে চাকরি হারানো মিজানুর রহমান বলেন, কুমিল্লার হাইওয়ের পাশের একটি বড় হোটেলে চাকরি করতাম। কোরবানির ঈদের আগে লকডাউন শুরু হলে হোটেল বন্ধ হয়ে যায়। মালিকপক্ষ চাকরি থেকে ছাঁটাই করে দেয়। পরিবারে মা-বা ও স্ত্রী-সন্তান আছে। সংসার চালানোর তাগিদে ভ্যানে সবজি বিক্রি শুরু করি। আমার মতো অনেকেই চাকরি হারিয়ে সবজি ও হকারি ব্যবসা করছেন। 

কুমিল্লা জেলা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনার সংকটে হোটেল ব্যবসায়ীরা যেমন কোটি কোটি টাকার লোকসান দিয়েছেন তেমনি দীর্ঘদিন হোটেল বন্ধ থাকায় চাকরি হারিয়েছেন তিন-চতুর্থাংশ শ্রমিক-কর্মচারী। সংকটে হোটেল ব্যবসায়ীরা প্রণোদনা পাননি। ব্যবসায়ীদের লোন দিচ্ছে না কোনও ব্যাংক। ফলে লকডাউন শিথিল হলেও অনেক হোটেল ব্যবসায়ী ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি।

কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, করোনার সংকটে হোটেল ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা পাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে হোটেল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে যদি আবেদন করা হয়, তাহলে প্রণোদনা পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করবো।

/এএম/ 
সম্পর্কিত
অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে রেস্টুরেন্ট-দোকান মালিক সমিতির সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের মতবিনিময়
রেস্তোরাঁয় বিচ্ছিন্নভাবে কোনও অভিযান হবে না
খুলেছে রেলওয়ে আবাসিক হোটেল, ভাড়া সর্বনিম্ন ১ হাজার
সর্বশেষ খবর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম