‘পরিবারের নয় জন মিলে তিনটা টিনশেড বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে বাস করছিলাম। গত মে মাসে নদী ভাঙনে দুইটি বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। গতকাল রাতে আবার ভাঙন শুরু হওয়ায় একটি টিনশেড বাড়ি সরিয়ে নিচ্ছি। শত বছরের বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে অন্য জায়গায় যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে।’
কথাগুলো বলছিলেন মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার মূলচর গ্রামের বাসিন্দা রচনা মন্ডল। গত তিন দিন ধরে গ্রামটিতে পদ্মা নদীর ভাঙন চলছে। এতে অনেকেই রচনা মন্ডলের মতো ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। অনেকে আবার ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা ঘর-বাড়ি ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছেন। রবিবার (২২ আগস্ট) বিকাল পর্যন্ত আট থেকে ১০টি টিনশেড বাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আরও বেশকিছু ঘর সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
সরেজমিন টংগিবাড়ীর মূলচর গ্রামে দেখা যায়, গ্রামের বাসিন্দারা ঘরের অনেকেই ঘরের আসবাবপত্র নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। পদ্মার শাখা নদী কয়েকটি বাড়ির গা ঘেঁষে আছে। প্রতিবছর ভাঙনে এই এলাকার ভৌগোলিক সীমা দিন দিন ছোট হয়ে আসছে।
নিতাই চন্দ্র মন্ডলের বাড়ি সরানোর কাজ করছিলেন প্রতিবেশী দুলাল বিশ্বাস। তিনি জানান, গত তিন দিন ধরে বাড়িঘর ভেঙে সরানোর কাজ করছি। এ পর্যন্ত পাঁচটি ঘর সরিয়েছি।
অনীতা ঘোষ জানান, মে মাসে বর্ষার ভাঙন শুরু হয়। তারপর থেমে থেমে বিভিন্ন সময় নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। গতকাল রাতে আকস্মিক বাড়ির কাছে এসে পড়ে ভাঙন। তখন তাৎক্ষণিক বাড়ির জিনিসপত্র সরিয়ে রাস্তার ওপর রাখি। এখন অন্য কোনও চরে গিয়ে বাসা বেঁধে থাকবো।
দিঘীরপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফ ইসলাম জানান, গতকাল রাতে পদ্মায় আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর স্রোত বেড়ে যাওয়ায় এই ভাঙন সৃষ্টি হয়। গতকাল রাতেই দশটি ঘর ভেঙেছে। গত এক মাসের মধ্যে বিলীন হয়ে যায় ৩০টির মতো। এমপি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
টংগিবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান জগলুল হালদার ভুতু জানান, গতকাল রাতে বেশকিছু গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। মূলচর গ্রামের শতাধিক বাড়ি ঝুঁকির মধ্যে আছে।
টংগিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা পারভীন জানান, মোট কতগুলো ঘর ভেঙেছে এবং কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। আমরা কাজটি দ্রুত করছি। আর ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত মানবিক সহায়তা দেওয়ারও চেষ্টা চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। তারা ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
মুন্সীগঞ্জ ও নারায়গঞ্জ জেলার দায়িত্বে রয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিচালন ও রক্ষনাবেক্ষণ, ঢাকা) রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী। তিনি জানান, মূলচর গ্রামে আগেও ভাঙন শুরু হলে সেখানে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। গত কয়েক দিন ধরে নতুন করে আবার পদ্মার শাখা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা আগামীকাল দ্রুত জরিপ করে ভাঙন রোধে কাজ শুরু করবো।
তিনি আরও জানান, এ নদীতে প্রচুর বাঁক থাকায় এবং এই অঞ্চলের মাটি বেলে-দোঁআশ হওয়ায় অল্প পানির বেগেই ভাঙন শুরু হয়। তাই মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও টংগিবাড়ী পদ্মা শাখা নদীতে বড় বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। সামনের শুষ্ক মৌসুমে কাজ শুরু হবে। আপাতত ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হবে।