X
বুধবার, ০১ মে ২০২৪
১৮ বৈশাখ ১৪৩১

এডিসের লার্ভা বাড়ছে ঢাকার যেসব জায়গায়

জাকিয়া আহমেদ
২৬ আগস্ট ২০২১, ০৯:০০আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২১, ১৫:৪৯

চলতি মাসে দেশে মহামারি করোনার সংক্রমণ কমে এসেছে। নিম্নমুখী হয়েছে দৈনিক শনাক্ত, শনাক্তের হার এবং মৃত্যু সংখ্যা। কিন্তু ইতোমধ্যেই শঙ্কা বাড়িয়েছে ডেঙ্গু। কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে তাদের করোনা পরীক্ষার পাশাপাশি ডেঙ্গু পরীক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ‘মৌসুম এডিস জরিপ ২০২১’ এর ফলাফলে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কিছু কিছু এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব অনেক বেশি পাওয়া গেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ পাওয়া গেছে মগবাজার, নিউ ইস্কাটন, বাসাবো ও গোড়ান এলাকায়।

গত রবিবার ( ২২ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ‘মৌসুম এডিস জরিপ ২০২১’ এর ফলাফল প্রকাশ করে।

জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ৯৮টি ওয়ার্ডের ১০০টি স্থানে জরিপ পরিচালনা করে। যার মধ্যে উত্তরের ৪১টি এবং দক্ষিণের ৫৯টি এলাকা রয়েছে। জরিপের সময় এসব এলাকার ৩ হাজার বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করা হয়।

কোন এলাকায় কত ‘ব্রুটো ইনডেক্স’
কোনও এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব পরিমাপের একক-কে ব্রুটো ইনডেক্স বলা হয়। ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি হলেই তাকে ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বলা যায়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১০টি ওয়ার্ডের ১৯টি এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ৪০ এর বেশি পাওয়া গেছে। দুই সিটি করপোরেশনের ৫৬টি এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ছিল ২০ বা তার বেশি।

জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসাবো ও গোড়ান এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স সর্বোচ্চ ৭৩ দশমিক ৩। এছাড়া ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ৬৬ দশমিক ৭, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আরকে মিশন রোড ও টিকাটুলিতে ৫০, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বনশ্রীতে ৪০ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মিন্টো রোড ও বেইলি রোডে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪০ শতাংশ।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ৫৬ দশমিক ৭ পাওয়া গেছে। এই ওয়ার্ডে রয়েছে মগবাজার, নিউ ইস্কাটন এলাকা। এছাড়া বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও নিকুঞ্জ নিয়ে গড়া ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রুটো ইনডেক্স ৪৮ দশমিক ৪। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কল্যাণপুর ও দারুস সালাম এলাকায় ৪৬ দশমিক ৭, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়ায় ৪৩ দশমিক ৩ এবং মহাখালী ও নিকেতন এলাকা নিয়ে ডিএনসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪০।

উত্তর সিটি করপোরেশনের আফতাবনগর ও মেরুল বাড্ডা এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বংশালের ব্রুটো ইনডেক্স শূন্য, অর্থাৎ এসব এলাকায় মশার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।

এ বছর মশার উপস্থিতি বেশি
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যে দেখা গেছে, গত বছরের চেয়ে এ বছর মশার উপস্থিতি বেশি। এ বছর ডিএসসিসির ৩০টি এবং ডিএনসিসির ২৬টি এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি পাওয়া গেছে। আর ২০২০ সালের জরিপে ডিএসসিসির ১৭টি এবং ডিএসসিসির ৯টি এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি পাওয়া গিয়েছিল।

অধিদফতর জানায়, জরিপে পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি পজিটিভ কনটেইনারের মধ্যে রয়েছে মেঝেতে জমানো পানি। ১৮ দশমিক পাঁচ শতাংশ জায়গায় মেঝেতে জমানো পানি পাওয়া গেছে। ১২ দশমিক এক শতাংশ প্লাস্টিক ড্রামে, প্লাস্টিক বালতিতে শূন্য নয় দশমিক চার শতাংশ, ফুলের টব এবং ট্রেতে শূন্য সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ, পরিত্যক্ত গাড়ির টায়ারে ছয় দশমিক নয় শতাংশ, রং এর কৌটায় তিন দশমিক দুই শতাংশ আর অন্যান্য পজিটিভ কনটেইনারে পাওয়া গেছে ছয় দশমিক ছয় শতাংশ।

এডিস মশার প্রজননস্থল নির্মাণাধীন বহুতল ভবন
এডিস মশার পজিটিভ প্রজনন স্থানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে নির্মাণাধীন বহুতল ভবন। বহুতল ভবনে ৪৪ দশমিক দুই শতাংশ, একক ভবনে ২৫ শতাংশ, নির্মাণাধীন ভবনে ১৮ দশমিক দুই শতাংশ, বস্তি এলাকায় নয় দশমিক সাত শতাংশ আর খালি জমিতে তিন শতাংশ বলেও জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

তবে দেশে যে এবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে সে বিষয়ে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, গত জুন মাসেই এ বিষয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলাম। আর বর্তমান যে অবস্থায় সেটা চলবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম যদি চলমান রাখতে হবে, যদি সেটা থাকে তাহলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখনকার চেয়ে বাড়বে না।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ডেঙ্গু আক্রান্ত সর্বোচ্চ রোগী পাওয়া গেছে আগস্ট মাসে। কেবল তাই নয়, চলতি মাসে এখন পর্যন্ত যত রোগী ডেঙ্গুতে শনাক্ত হয়েছেন সেটা আগের সাত মাসের দ্বিগুণেরও বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানায়, আগস্টের ২৫ দিনে ৬ হাজার ১৯৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

একইসঙ্গে কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে শনাক্ত হয়েছেন ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে নয়জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিনজন, মে মাসে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন আর জুলাইয়ে শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ২৮৬ জন। অর্থাৎ চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে মোট শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৬৫৮ জন।

এ ছাড়াও ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত  মারা গেছেন ৪০ জন। যার মধ্যে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত মারা গেছেন ২৮ জন আর জুলাই মাসে মারা গেছেন ১২ জন।

কন্ট্রোল রুমের বুধবার (২৫ আগস্ট) পাওয়া তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ২৭৮ জন। তাদের মধ্যে ২৩০ জনই ঢাকার, আর ঢাকার বাইরের ৪৮ জন। সারাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ১ হাজার ৯০ জন রোগী ভর্তি আছেন। এরমধ্যে ঢাকায় আছেন ৯৮৭ জন, আর বাকি ১০৩ জন অন্যান্য বিভাগের। এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত ৮ হাজার ৮৫৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং ছাড়া পেয়েছেন ৭ হাজার ৭২১ জন।

/এমআর/ইউএস/
সম্পর্কিত
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে, মোকাবিলায় কী করছে ডিএনসিসি
মেয়র আতিকের হুঁশিয়ারিকোথাও এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে জেল-জরিমানা
ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাসব্যাপী কর্মসূচি ডিএনসিসির
সর্বশেষ খবর
বেড়েছে রাবার উৎপাদন, আয় এক কোটি ১৭ লাখ টাকা
হলদিয়া রাবার বাগানবেড়েছে রাবার উৎপাদন, আয় এক কোটি ১৭ লাখ টাকা
টিভিতে আজকের খেলা (১ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১ মে, ২০২৪)
মন্ত্রী-এমপি’র আত্মীয়দের নিয়ে আ.লীগ কী ‘ইউটার্ন’ নিচ্ছে!
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপি’র আত্মীয়দের নিয়ে আ.লীগ কী ‘ইউটার্ন’ নিচ্ছে!
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
সর্বাধিক পঠিত
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
সাতক্ষীরার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 
সাতক্ষীরার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 
আজকের আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস