X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গাড়ির চাকায় জীবন বাঁধা

বিজয় রায় খোকা, কিশোরগঞ্জ
২৮ আগস্ট ২০২১, ২০:৪৯আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২১, ২০:৫৫

দুই সন্তানকে বিয়ারিংয়ের গাড়িতে বসিয়ে জীবনের চাকা ঘুরাচ্ছেন সুমি আক্তার। গাড়ির চাকা ঘুরলে জীবিকা হয়। চাকা থেমে গেলে জীবিকার চাকাও থেমে যায়। জীবন-জীবিকার গাড়ির চাকা ঘুরিয়ে কেটে গেছে তার চার বছর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ শহরের বত্রিশ বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা সুমি। স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে তার সংসার। দুই সন্তানকে গাড়িতে বসিয়ে খেলনা বিক্রি করেন কিশোরগঞ্জের অলিতে-গলিতে। ১৩ বছর বয়সে বত্রিশ বাসস্ট্যান্ড এলাকার রাকিব মিয়ার সঙ্গে সুমিকে বিয়ে দেয় পরিবার। পশ্চিম তারাপাশার নুর ইসলাম বুদুর প্রথম স্ত্রীর একমাত্র সন্তান সুমি। 

বাবা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে মানুষের কান পরিষ্কার করে অর্থ উপার্জন করেন। সুমির মাকে ছেড়ে আবার বিয়ে করেন বুদু। এ জন্য জন্ম থেকেই জীবন সংগ্রামে জড়িয়ে গেছেন সুমি। লেখাপড়া করা হয়নি অভাবের কারণে। স্বামীর সংসারেও সুখের দেখা পাননি।

স্বামী রাকিব মিয়া বর্তমানে বত্রিশ আমলীতলা অটোস্ট্যান্ডে দিনমজুরির কাজ করে প্রতিদিন ২০০-৩০০ টাকা পান। কোনোভাবেই সংসার চলে না এই টাকায়। বিয়ের দুই বছর পর জন্ম হয় প্রথম কন্যাসন্তান রাহিমার। সংসার চালাতে হিমশিম খান স্বামী। তখন সুমি সিদ্ধান্ত নেন নিজেও কিছু করার। তারপর কাঠ দিয়ে বাক্স আকারের গাড়ি তৈরি করেন। সেই গাড়িতে মেয়েকে বসিয়ে কয়েকশ টাকার খেলনা কিনে যাত্রা শুরু। বিয়ারিংয়ের গাড়িটাই এখন তাদের জীবন গাড়ি। 

কিশোরগঞ্জ শহরের বত্রিশ বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা সুমি

চার বছর ধরে এই গাড়ি টেনে অলিতে-গলিতে খেলনা বিক্রি করছেন এই সংগ্রামী নারী। এরই মধ্যে জন্ম হয়েছে দ্বিতীয় মেয়ে সাদিয়ার। সাদিয়ার বয়স এখন সাত মাস। রাহিমা ছোট বোনকে কোলে নিয়ে বসে থাকে গাড়ির ওপর। মা টানেন গাড়ি।

ভাঙাচোরা রাস্তায় বিয়ারিংয়ের চাকা কিছুতেই চলতে চায় না। সব শক্তি দিয়ে টেনে নিতে হয়। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অলিতে-গলিতে খেলনা বিক্রি করলে ২০০-২৫০ টাকা আয় হয়। স্বামী-স্ত্রী দুজনের আয়ে চলে চার জনের সংসার। তবে খেলনা বিক্রি করেও ভাগ্য বদলায়নি তাদের। কোনও রকমে তিন বেলা খেয়ে জীবনযাপন করছেন।

সুমি জানান, কখনও কখনও মহাজনের দোকান থেকে বাকিতে খেলনা এনে বিক্রি করেন। পরে টাকা পরিশোধ করেন। সুমির স্বপ্ন, একটি দোকান দিয়ে খেলনা বিক্রি করতে চান। মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে বড় করতে চান। 

দুই সন্তানকে গাড়িতে বসিয়ে খেলনা বিক্রি করেন কিশোরগঞ্জের অলিতে-গলিতে

সুমির কথায় অনেক বড় স্বপ্ন এটি। নিজে দোকান দেওয়ার সামর্থ্য কবে হবে তা জানা নেই। দোকান দিতে লাখ টাকা প্রয়োজন। যতদিন স্বপ্নপূরণ না হয় ততদিন সন্তানদের বসিয়ে এই বিয়ারিংয়ের চাকার জীবন গাড়ি চালানো ছাড়া বিকল্প নেই তার।

বাংলা ট্রিবিউনকে সুমি জানান, জীবনে কারও কোনও সহযোগিতা পাননি। স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে কয়েকবার গিয়েও আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাননি। কেউ যদি স্বপ্নপূরণে সহযোগিতা করে তবে এত পরিশ্রমের কাজটি তাকে করতে হবে না।

সুমি বলেন, জন্ম থেকেই কষ্ট করছি। এখন কষ্ট সয়ে গেছে। একটাই চাওয়া আমার মেয়েদের যেন এই গাড়ি টানতে না হয়। গরিবকে কেউ দেখে না। যদি কখনও একটি দোকান করতে পারি তবে মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবো। এই গাড়ি টানতে খুব কষ্ট হয়। জিরিয়ে জিরিয়ে টানতে হয়। গাড়ির অবস্থাও ভালো না। কোন দিন যে ভেঙে যায়, জানি না। আমার অনেক দিনের স্বপ্ন একটি দোকান দেওয়ার। সেখানে এসব মালামাল বিক্রি করবো। যদি কারও সহযোগিতা পাই কৃতজ্ঞ থাকবো।

/এএম/
সম্পর্কিত
আড়াই শতাধিক মানুষের তৃষ্ণা মেটালেন জবি শিক্ষার্থীরা
২৭ বছর পর বাড়ি ফিরলেন শাহীদা, পূরণ হয়নি যে আশা
পেনশনের টাকা নিয়ে গেছে একমাত্র ছেলে, বৃদ্ধাশ্রমে চোখের জলে ঈদ কাটলো নিঃস্ব মায়ের
সর্বশেষ খবর
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া
বিএনপি গণতন্ত্রে অকার্যকর ডামি রাজনৈতিক দল: ওবায়দুল কাদের
বিএনপি গণতন্ত্রে অকার্যকর ডামি রাজনৈতিক দল: ওবায়দুল কাদের
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী