দেশে চলতি বর্ষা মৌসুমে আকস্মিক বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। আবার ভারী বর্ষণের ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় এ সময় কম-বেশি ভূমিধস হচ্ছে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও নেহাৎ কম নয়। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবকদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক।
প্রশিক্ষণার্থীরা দেশের দুর্যোগে জরুরি উদ্ধার কাজে জনগণকে সহযোগিতা করবেন এবং আহত জনগোষ্ঠীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করবেন।
বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারের ইনানীর অর্কিড ব্লু হোটেলে ২০ জন প্রশিক্ষণার্থীর অংশগ্রহণে শেষ হয় ব্যতিক্রমধর্মী এই প্রশিক্ষণ।
ব্র্যাক জানায়, প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে ১১ জন পুরুষ ও ৯ জন নারী ছিলেন। ‘দুর্যোগে সাড়াদান ও জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম’ শীর্ষক পাঁচ দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ গত ২৯ আগস্ট শুরু হয়েছিল। প্রশিক্ষণ শেষে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করা হয়।
ভূমিধস, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, জরুরি অনুসান্ধান ও উদ্ধার এবং প্রাথমিক চিকিৎসায় করণীয় নিয়ে ছিল মূল প্রশিক্ষণের আয়োজন। অস্ট্রেলিয়ান সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় ব্র্যাকের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতাধীন দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস সেক্টর এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। প্রশিক্ষণ বাস্তবায়নে সহযোগী হিসেবে ছিল বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
ব্র্যাক জানায়, তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক সমন্বিত এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। এরমধ্যে ছিল ভূমিধস ও আগুন লাগার ঘটনায় স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে কেউ আহত হলে তাদের উদ্ধারে কী করণীয়, জরুরি সময়ে আহত মানুষকে উদ্ধার করার পদ্ধতি, কেউ অগ্নিদগ্ধ হলে কীভাবে তাদের সেবা দিতে হবে, সে বিষয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা ও ব্যবহারিক জ্ঞান। এর পাশাপাশি ভূমিধসের ধরন অনুযায়ী, কীভাবে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোপাত করা হয়।
প্রশিক্ষণের তৃতীয় দিনে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক।
তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকদের দক্ষতা বৃদ্ধির কোনও বিকল্প নেই। এরকম একটি মানবিক কাজে ব্র্যাক উদ্যোগ গ্রহণ করায় আমরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকে এখন পর্যন্ত ব্র্যাক কক্সবাজার জেলায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির আওতায় ৮ হাজার ৬শ’ স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে ১২০ জনকে এই প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সরকারি সূত্র অনুযায়ী, দেশে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির আওতায় স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন ৭৬ হাজার।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষণ) আব্দুল মোমেন, প্রশিক্ষক শামস আরমান, উপ-সহকারী পরিচালক মো. আব্দুললাহ, সহকারী প্রশিক্ষক শাহ ইমরান। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলার উপ-পরিচালক মো. রুহুল আমিন। অনুষ্ঠানে ব্র্যাক কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কর্মসূচির লিড আব্দুললাহ আল রায়হান, সেক্টর স্পেশালিস্ট শুভ কুমার সাহা ও সহকারী প্রকল্প অফিসার মতিয়ার রহমান।