X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা

আবদুর রহমান, টেকনাফ (কক্সবাজার)
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:১২আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:৩৪

১৯৯৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সুসম্পর্কের পাশাপাশি সীমান্তে চোরাচালান রোধসহ বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে টেকনাফ-মংডু সীমান্তে বাণিজ্য চুক্তি হয়। গত ২৬ বছর মিয়ানমার থেকে শতভাগ পণ্য আমদানি হলেও রফতানি হয়েছে মাত্র কয়েক ভাগ। ফলে দুই দেশের আমদানি-রফতানিতে ছয় হাজার ৬৫৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকার বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

আমদানি-রফতানির কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মিয়ানমার থেকে শতভাগ পণ্য আমদানি হলেও দেশি পণ্য রফতানি হচ্ছে ১০ ভাগ। ফলে দেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়ছে। পণ্য রফতানি গতিশীল করতে নানা পদক্ষেপ নিলেও সুফল আসছে না।

শুল্ক স্টেশন সূত্র জানায়, গত ২৬ বছরে ছয় হাজার ৬৫৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকার বেশি বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এই সময়ে মিয়ানমার থেকে ছয় হাজার ৯২৪ কোটি ৬৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫১২ টাকার পণ্য আমদানি হয়। পণ্য রফতানি হয়েছে ২৬৭ কোটি ছয় লাখ পাঁচ হাজার ৪৩৮ টাকার। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ছয় হাজার ৬৫৭ কোটি ৫৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ টাকা। এ পর্যন্ত এক হাজার ৫৮৪ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। 

তবে গত কয়েক বছরে করোনার প্রাদুর্ভাব এবং মিয়ানমারের নির্বাচন, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের কারণে উচ্চ শুল্ক হারের পণ্য আমদানি কমে গেছে। যে কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন সম্ভব হয়নি।

বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমারে পণ্য রফতানি বাড়লে ব্যবসায় ইতিবাচক সাড়া মিলবে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সহজ হবে। মিয়ানমারে দেশি পণ্যের বাজার সৃষ্টিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে। রফতানি বৃদ্ধির ব্যবস্থা না নিলে ঘাটতি আরও বাড়বে। তবে বাণিজ্য ঘাটতির জন্য মাদক, চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

বন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এরমধ্যে মিয়ানমারে রাজনৈতিক অস্থিরতায় আমদানিতে প্রভাব পড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে ব্যবসা করতে চাইলেও অবকাঠামো, জেটি, ক্রেন ও শ্রমিক সমস্যার কারণে সুষ্ঠু বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই বন্দরে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে সুবিধা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের বিকল্প নেই।

এদিকে, সীমান্ত বাণিজ্য চালুর প্রথম দিকে দুই দেশের আমদানি-রফতানি পাল্লা দিয়ে চললেও পরবর্তী সময়ে মিয়ানমারের পণ্যের আমদানি বেড়ে যায়। দেশি পণ্যের রফতানি কমে যায়। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়তে থাকে। আমদানিতে বাংলাদেশ থেকে ডলারের যে পরিমাণ ব্যাংক ড্রাফট ইস্যু করা হয়, সে তুলনায় মিয়ানমার থেকে ব্যাংক ড্রাফট আসে না। ফলে পণ্য রফতানিতে অসুবিধা হয়। তবে মাদক, চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসাও বন্ধ নেই। ঘাটতি কমিয়ে আনতে দেশি পণ্য রফতানি বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

গত ২৬ বছর মিয়ানমার থেকে শতভাগ পণ্য আমদানি হলেও রফতানি হয়েছে মাত্র কয়েক ভাগ

জানতে চাইলে টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, ‘সীমান্ত বাণিজ্যে দুই দেশে নানা সমস্যার মাঝেও আমদানি-রফতানি হচ্ছে। বন্দরে অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী মিয়ানমারের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে জড়িত। সীমিত আকারে কয়েকটি পণ্যের আমদানির জন্য ৫০ হাজার থেকে ৩০ হাজার ডলারের ব্যাংক ড্রাফট ইস্যু করা যায়। কিন্তু মুক্তবাণিজ্যের যুগে এলসির ব্যবস্থা না করলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ধীরে ধীরে কমে যাবে। তবে মিয়ানমারে পণ্য আমদানিতে যেমন সমস্যা, তেমনি রফতানিতেও হয়রানি রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘রফতানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ব্যবসায়ীরা দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। বাণিজ্যে সমস্যার কারণে অনেক ব্যবসায়ী সরে পড়েছেন। করোনার কারণে আমদানি-রফতানি কমেছে। চাহিদা অনুযায়ী বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া এবং উচ্চ শুল্ক হারে পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।’

এ বিষয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা মো. আব্দুন নুর বলেন, ‘মিয়ানমারের নির্বাচন, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণ ও করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে সীমান্ত বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে। এসব কারণে গত কয়েক অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। নানা সমস্যার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে।’

ঘাটতি কমিয়ে আনতে মিয়ানমারে দেশি পণ্যের বাজার সৃষ্টির উদ্যোগে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে কাস্টমস আন্তরিকভাবে কাজ করছে।’

/এএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
প্রথমবার পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে ভারতের নারী ট্রাকচালক
পাঁচ দিন বন্ধ থাকবে বেনাপোল বন্দর
একদিনে হিলি দিয়ে ১১৯৮ টন আলু আমদানি
সর্বশেষ খবর
২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
কুমিল্লা শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ে ঠিকাদারকে মারধর২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ