X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

হাবুডুবু খাচ্ছে প্রতাপনগরের ৩৫ হাজার মানুষ

আসাদুজ্জামান সরদার, সাতক্ষীরা
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬:১২আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:৩৮

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের চার মাস পার হলেও সাতক্ষীরার আশাশুনির প্রতাপনগরের ৩৫ হাজার মানুষ পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। ভেঙে পড়েছে স্যানিটারি ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট। সীমাহীন দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছে ওই এলাকার মানুষ।

প্রতাপনগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ইয়াসের চার মাস পার হলেও কপোতাক্ষ নদ এবং খোলপেটুয়া নদীর নোনা পানি বন্যতলা এবং কুড়িকাহুনিয়া বাঁধ দিয়ে ওই এলাকায় ঢুকছে। পুরো ইউনিয়নে জোয়ার-ভাটা চলছে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি পানিতে ডুবছে আর ভাসছে। এখানকার মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।

মানুষজন বাড়ি থেকে বাঁশ, কাঠের ভেলা এবং নৌকা দিয়ে বের হয়। যাদের বাড়ি প্রধান সড়কের পাশে তারা বাঁশের সাঁকোতে যাতায়াত করছে। প্রধান সড়কেরও একই অবস্থা। কয়েক হাজার মানুষ জেলা-উপজেলায় যেতে নৌকা ব্যবহার করছে।

ভেঙে পড়েছে স্যানিটারি ব্যবস্থা, দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট

প্রতাপনগর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাসুম বিল্লাহ বলেন, ২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের একমাস পর বন্যতলা গ্রামের পরিবারপ্রতি এক হাজার টাকা করে তুলে বাঁধ নির্মাণ করে এলাকাবাসী। চলতি বছরের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বাঁধটি ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হয়। তখন থেকে শ্রীপুর, কুড়িকাহুনিয়া, কল্যাণপুর, নাকনা, সনাতনকাটি, প্রতাপনগর পশ্চিম, প্রতাপনগর পূর্ব এলাকার ৩০ হাজারের বেশি মানুষ জোয়ার-ভাটার মধ্যে বসবাস করছে। পানি থাকলে নৌকা অথবা ভেলা দিয়ে চলাচল করে। ভাটায় কাদামাটিতে বাড়ি থেকে বের হওয়া কষ্টকর।

তিনি আরও বলেন, এলাকার রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে আছে। অধিকাংশ রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গেছে। নৌকা ছাড়া যাতায়াতের মাধ্যম নেই। সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। জেলা-উপজেলা সদরের সঙ্গে যাতায়াতের সুযোগ নেই। উপজেলায় যাওয়ার একমাত্র সড়ক ঘড়ুইমহল খাল। নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। কেউ অসুস্থ হলে চরম বিপদে পড়তে হয় এলাকাবাসীর।

৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আমান উল্লাহ বলেন, আম্পানের পর ১০ মাস পানিবন্দি ছিলাম। স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ দিয়েছিলাম। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর থেকে চার মাস পানিবন্দি। জোয়ার এলে ঘরের মধ্যে পানি ঢুকছে। খাটের তলায় ইট দিয়ে বসবাস করছি। বাড়ি থেকে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে যাতায়াত করতে হয়। কখনও গলা সমান পানি ঠেলে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। আম্পানের পর থেকে অনেক পরিবার স্কুলে বসবাস করছে। বাড়ি ফিরতে পারেনি। আমরা ত্রাণ চাই না, টেকসই একটা বেড়িবাঁধ চাই।

সুপেয় পানির সংকটে দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছে ওই এলাকার মানুষ

তালতলা এলাকার এবাদুল সানা বলেন, বর্তমানে প্রতাপনগরের যে অবস্থা এমনটি জীবনেও দেখিনি। এলাকায় কেউ অসুস্থ হলে নৌকায় করে কষ্টে যেতে হয়। বাড়ি থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। চারদিকে পানি আর পানি। কাজ নেই, খাবার পানির সংকট, বসবাস করা যাচ্ছে না। অনেক লোক এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। কোথায় গেছে, কেউ জানে না। আমরা পুরোনো দিনে ফিরে গেছি। নৌকা আমাদের চলাচলের মাধ্যম।

প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ইয়াসের পর থেকে চার মাস ইউনিয়নের আট হাজার ১১৮ পরিবারের ৩৬ হাজার মানুষ পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। সরকার যথাযথভাবে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু খাদ্য তো বড় কথা না। বাসস্থান বড় কথা। নিয়মিত জোয়ার-ভাটা হচ্ছে। মানুষ বাস করবে কীভাবে? রাস্তাঘাট ভালো নেই। প্রধান সড়কগুলো খালে পরিণত হয়েছে। আশাশুনি সদরের সঙ্গে প্রতাপনগরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। কেউ অসুস্থ হলে নৌকায় করে নিতে হয়। নৌকা, ভেলা এবং সাঁকো এখানকার মানুষের ভরসা।

খোলপেটুয়া নদীর নোনা পানি বন্যতলা এবং কুড়িকাহুনিয়া বাঁধ দিয়ে ওই এলাকায় ঢুকছে

তিনি আরও বলেন, আম্পানের পর রাস্তাঘাট মেরামত করা হয়েছিল। ইয়াসের আঘাতে আবার এলাকা প্লাবিত হয়ে রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তা করতে হলে নতুন করে কাজ করতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কী কাজ করে, তাদের ডিজাইন উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় সরকার জানে না। তারা ইচ্ছামতো কাজ করে চলে যায়। বিপদে পড়ে মানুষ।

জাকির হোসেন বলেন, বাঁধ মজবুত না হওয়ায় নদীতে পানি বাড়লেই বাঁধ ভেঙে যায়। মানুষ যে কতো কষ্টের মধ্যে আছে সেগুলো চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না কারও। নেই পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার। দুর্যোগ এলে অসহায় হয়ে পড়ি সবাই। এখানের অধিকাংশ মানুষ মাছ চাষাবাদে জড়িত। গত কয়েক বছরের জলোচ্ছ্বাসে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ নেই। মানুষ দিশেহারা।

পুরো ইউনিয়নে জোয়ার-ভাটা চলছে, মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই

উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর থেকে ওই এলাকার মানুষ কষ্টে আছে। এতদিন পরও জোয়ার-ভাটায় মানুষ বন্দি। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সহায়তা দেওয়া হয়। পানিতে তলিয়ে থাকায় সড়ক মেরামত করা যাচ্ছে না। তবে ওই এলাকায় পানি ঢোকা বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেবো আমরা।

/এএম/
সম্পর্কিত
গরমে নাকাল পথচারীদের জন্য পানির ব্যবস্থা করলো ফায়ার সার্ভিস
ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর মোটরসাইকেল বহরে বোমা হামলা
আড়াই শতাধিক মানুষের তৃষ্ণা মেটালেন জবি শিক্ষার্থীরা
সর্বশেষ খবর
ঘামে ভেজা ত্বকের যত্নে...
ঘামে ভেজা ত্বকের যত্নে...
চট্টগ্রামে ক্রিকেটারদের ‘ক্লোজড ডোর’ অনুশীলন
চট্টগ্রামে ক্রিকেটারদের ‘ক্লোজড ডোর’ অনুশীলন
হাসপাতালের ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১০ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
হাসপাতালের ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১০ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
রাঙামাটিতে ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে ৬ শ্রমিক নিহত
রাঙামাটিতে ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে ৬ শ্রমিক নিহত
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা