X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
দেশে যৌন হয়রানি বেড়েছে

৮ মাসে ৮১৩ কন্যাশিশু ধর্ষণ

জুবায়ের আহমেদ
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২২:১৭আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২৩:১০

দেশে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যৌন নির্যাতন। অন্যতম শিকার কন্যাশিশুরা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশে ৮১৩ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে ১২৭ জন কন্যাশিশুকে। এর মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ৫২৩ জন, গণধর্ষণের শিকার ১১০ জন ও ৭৯ জন প্রতিবন্ধী কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের ‘কন্যাশিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন-২০২১’এ এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ফোরাম থেকে জানানো হয়েছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ২৪টি পত্রিকা (জাতীয়, স্থানীয় এবং দুটি অনলাইন) থেকে কন্যাশিশুদের প্রতি নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুল সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এসব তথ্য প্রকাশ করে।

তথ্যসূত্র: কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম

বাল্যবিয়ে বেড়েছে

ধর্ষণ ছাড়াও কন্যাশিশুদের প্রতি বিভিন্ন মাত্রায় নির্যাতন করা হচ্ছে। এ চিত্র তুলে ধরে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৮ মাসে ১১২ জন কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে চারজন বিশেষ শিশুও রয়েছে। 

তথ্যসূত্র: কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালের তুলনায় এবছর যৌন হয়রানি বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ। পাশাপাশি গৃহশ্রমিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২৬টি। এর মধ্যে ১৩ জন শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তিনজনকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ১০ জন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে ১৪০ কন্যাশিশু। এরমধ্যে অপহরণের শিকার হয়েছে ৫৮ জন। প্রতিবেদনে এও বলা হয়, প্রেমের ফাঁদে ফেলে ৪৭ কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে।

করোনাকালে সরাসরি তৃণমূলে ১৩৬টি ইউনিয়নে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ১২৫৩ জন কন্যাশিশু। যা ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। ওই সকল ইউনিয়নে আরও প্রায় ১৫৩৫ জন কন্যাশিশুর বিয়ে হয়েছে। কিন্তু তারা মুখ খুলতে চায়নি বলে জানিয়েছে কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।

তথ্যসূত্র: কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম

কেন তারা মুখ খুলতে চায়নি, বাংলা ট্রিবিউনের এমন প্রশ্নে ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি বলেন, ‘পারিবারিক চাপ এবং পারিবারিকভাবে সমস্যার আশঙ্কা থেকে তারা মুখ খোলেনি। তবে ফোরামের স্থানীয় মাঠকর্মীদের মাধ্যমে তথ্যগুলো জোগাড় করা হয়েছে।’

 

৮ মাসে ১৯৩ জন কন্যাশিশুকে হত্যা, আছে আত্মহত্যাও

কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৮ মাসে ১৯৩ কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার অন্যতম কারণগুলো ছিল—পারিবারিক দ্বন্দ্ব, পূর্বশত্রুতার জের, ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন। এ ছাড়াও বিগত কয়েক মাসে ২৪ কন্যাশিশুকে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রেখে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। 

গত ৮ মাসে ১৫৩ জন কন্যাশিশু আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। নেপথ্যের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়—স্কুল বন্ধ থাকায় হতাশা, পারিবারিকভাবে মতানৈক্য বা দ্বন্দ্ব, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়া এবং শারীরিকভাবে যৌন নির্যাতন যা প্রকাশ করার মতো অভয় আশ্রয়স্থলের অভাব।

তথ্যসূত্র: কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম

 

আইন কী বলছে?

কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের অভিযোগ—ধর্ষণের ঘটনায় কেবলমাত্র জিডি, কেস ফাইল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক অল্পসংখ্যক আটকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। চূড়ান্ত শাস্তির কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। আটককৃত ব্যক্তিদের অধিকাংশই জামিনে মুক্তি পেয়ে সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদেরকে বিভিন্ন রকম হুমকি দিচ্ছে।

সংগঠনটি জানায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এ ধারা ২০(৩)-এ বলা আছে বিচারের জন্য মামলা প্রাপ্তির তারিখ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে ট্রাইবুনালকে কাজ শেষ করতে হবে। আইনে থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না।

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের সমাজে নারীদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয় না। সেক্ষেত্রে পরিবার থেকে প্রতিটি প্রজন্ম শিখছে মেয়েরা মানুষ নয়, তারা শুধু ব্যবহারের জন্য। এভাবে পরিবার থেকেই মূলত নারীর প্রতি অসম্মানের শুরু। এতে বাড়ছে নারী ও শিশু নির্যাতনের হার। নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের কথা বলছে রাষ্ট্র। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা নারীদের সম্মানের জায়গায় তুলে ধরতে পারছি না।’

তথ্যসূত্র: কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম

নারী নির্যাতন রোধে করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পরিবার থেকেই নারীদের সম্মান দেওয়ার শিক্ষাটা জরুরি। পাশাপাশি আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় যা রয়েছে তা একপ্রকার ইঁদুর দৌড়ের মতো। আমরা শুধু দৌড়াচ্ছি আর দৌড়াচ্ছি। মানবিক শিক্ষা না শিখে ডিগ্রির পেছনে দৌড়াচ্ছি। পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানবিক শিক্ষা শুরু করা দরকার।’

এ বিষয়ে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘কন্যাশিশুর পরিস্থিতি এখনও নাজুক। তাদের যে অবস্থান থাকার কথা, যে অধিকার পাওয়ার কথা, তা নিশ্চিত হয়নি। করোনাকালে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। বাল্যবিয়ে ও যৌন নির্যাতন দ্বিগুণ হয়েছে। এর বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’

/বিএইচ/এসটিএস/এফএ/
সম্পর্কিত
ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা মামলায় মাদ্রাসাশিক্ষকের ১০ বছরের কারাদণ্ড
‘সাইবার স্পেসে নারীর নিরাপত্তা নানাভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে’
চিকিৎসা করাতে ‍এনে কিশোরীকে ধর্ষণ, আসামির যাবজ্জীবন
সর্বশেষ খবর
ক্যাসিনো কাণ্ডের ৫ বছর পর আলো দেখছে ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স
ক্যাসিনো কাণ্ডের ৫ বছর পর আলো দেখছে ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
পিএসজির অপেক্ষা বাড়িয়ে দিলো মোনাকো
পিএসজির অপেক্ষা বাড়িয়ে দিলো মোনাকো
অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে আটকা পড়েছে শতাধিক পাইলট তিমি
অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে আটকা পড়েছে শতাধিক পাইলট তিমি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি