ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রশাসন হেফাজতিদের নির্দেশে চলে বলে মন্তব্য করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘হেফাজতিরা যা বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রশাসন তাই করে। জেলার আইনশৃঙ্খলা, গোয়েন্দা বাহিনী কোনও কাজের নয়। তারা হচ্ছে হেফাজতিদের দাস। তা না হলে আসামি যারা রয়েছে এখনও গ্রেফতার হয়নি কেন? কারণ তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এই মন্ত্রী সেই মন্ত্রীর লুঙ্গির নিচে থেকে ঘুরে বেড়ায়।’
বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর প্রাঙ্গণে আয়োজিত জাতীয় শ্রমিক লীগের দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন।
উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘আমি যা বললাম, প্রকাশ্যে বলছি, কেউ আইসা আমাকে চ্যালেঞ্জ করুক, আমি মিথ্যা বলছি। ডিসি, এসপিতো আপনাদের সঙ্গে আছে, তারা তো আপনাদের কথায় কাজ করে। আমি রাজি আছি তাদের সামনে বইসা এ কথা বলতে।’
তিনি বলেন, ‘কিছু দিন আগে শুনলাম, সাজিদুর রহমান, মুফতি মোবারক উল্লাহরা আমার রোগ মুক্তির জন্য দোয়া করেছে। আসলে কি রোগ মুক্তির জন্য নাকি মৃত্যুর জন্য দোয়া করছে। তারা মিথ্যা কথা বলে, হেফাজতি কোনও নেতাদের আমি বিশ্বাস করি না। তারা অল আর লায়ার্স (মিথ্যাবাদী)। তাদের মধ্যে কোনও অনুতাপ নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয় জন এমপি আছেন, মহিলা এমপি আছেন কয়েকজন। একজন এমপি, মন্ত্রীও হেফাজতের নিন্দা করেনি। তাই আমি একজন ব্যর্থ এমপি ও আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে বিদায় নেবো। হেফাজতিরা এসে সবকিছু পুড়িয়ে দিলো আপনার কেউই কোনও কথা বললেন না। শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য সবাই জীবন দিতে প্রস্তুত, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙেছে আপনি কী করেছেন বা আমি কী করেছি?’
উবায়দুল মোকতাদির বলেন, ‘আমাদের এখানে কিছু লোক আছে, যারা বাংলাদেশ সরকারের গোয়েন্দা মনে করেন। তারা নালিশ করেছেন, ২৭ মার্চ হওয়া মিছিলের কারণে হেফাজতিরা ভাঙচুর চালিয়েছে। তাহলে ২৬ মার্চ কেন ভাঙচুর করেছে সেটার জবাব কি আপনারা দিতে পারবেন? এটার জবাব প্রধানমন্ত্রীও দিতে পারবে না।
বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল যখন ভাঙচুর করা হয় তখন আমি এক হেফাজত নেতাকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কিন্তু মুফতি মোবারক উল্লাহ, সাজিদুর রহমানরা যদি চাইতো তাহলে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর হতো না। আজ শ্রমিক লীগের সম্মেলনে এতো নেতারা এলেন, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? তাই এসব স্লোগানে কোনও লাভ নেই।’
এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমি আজ শ্রমিক লীগের পোগ্রামের এসেছি। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আপনাদের শ্রমিক লীগটাকে দাঁড় করানো যায় কি-না। তবে আওয়ামী লীগকে দাঁড় করানো যাবে না। আওয়ামী লীগের ভেতর এতো ইন্দন সৃষ্টি হয়েছে, বাতারি তৈরি হয়েছে তারা দলের ঐক্যটাকে কেটে দিচ্ছে। তাই এই ধরনের মানুষদেরকে নিয়ে আমার কোনও চিন্তা নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতিরা এবার বঙ্গবন্ধু শাহাদাত বার্ষিকী পালন করেছে। আর শাহাদাত বার্ষিকীতে তারা নাকি কোরআন খতম দিয়েছে। আসলে এগুলো মিথ্যা কথা। তারা বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকীর পালন করার কারণ হচ্ছে, যাকাতের টাকা এবার মাদ্রাসায় কম উঠেছে। সদকা-লিল্লার টাকা গিয়েছে মাদ্রাসায়। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা কইরা তারা বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী পালন করেছে।’
শ্রমিক নেতাদের তিনি বলেন, ‘যাই হোক এগুলো বুঝে চলবেন। শ্রমিক লীগের নেতারা যারা আমার কাছে ওয়াদা করেছেন, ভালো কাজ করবেন। কারণ আপনারা ঠিক থাকলে পুলিশের কেউই আপনাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে পারবে না। আপনারা সুন্দরভাবে কাজ করবেন সেটাই আমি চাই।’
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান খান বাবুল, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকারসহ জেলা শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা।