X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফেরি যুগের অবসান, খুললো সম্ভাবনার নতুন দুয়ার 

সালেহ টিটু, বরিশাল
২৪ অক্টোবর ২০২১, ১৯:৩৬আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২১, ১৯:৩৬

খুলে দেওয়া হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের পায়রা সেতু। এই অঞ্চলের মানুষকে যুগের পর যুগ ফেরি পার হয়ে কুয়াকাটায় যেতে হয়েছে। সেতু চালুর মধ্য দিয়ে ফেরি যুগের অবসান হলো। একই সঙ্গে কাঁঠালবাড়ি থেকে কুয়াকাটার সঙ্গে প্রায় ২১৩ কিলোমিটার সড়কের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপন হলো। সেতু দিয়ে পটুয়াখালী-বরগুনা জেলাসহ উপকূলীয় ১০ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন দেখা যাবে।

ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী এলাকার খরস্রোতা পায়রা নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। রবিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুর ১২টায় ভিআইপিরা পটুয়াখালী প্রান্ত থেকে সেতুর টোলপ্লাজা পেরিয়ে বরিশালের উদ্দেশে আসেন। এরপর সাধারণ যানবাহন চলাচল শুরু হয়। সেতু চালু হওয়ায় অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে।

তবে সেতুতে অতিরিক্ত টোল নির্ধারণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এতে বাস-ট্রাক এবং অন্যান্য যানবাহনের ভাড়া বাড়বে বলে আশঙ্কা তাদের। পায়রা সেতুতে প্রথম টোল দেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর। তিনি বলেন, সড়ক যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে পায়রা সেতু। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি রক্ষার দায়িত্ব জনগণের।

দুপুর থেকে যাত্রীবাহী বাস ও বিভিন্ন যানবাহনের উভয় দিক থেকে আসা-যাওয়া শুরু হয়। কিন্তু ফেরির চেয়ে ভাড়া বেশি হওয়ায় হতাশ পরিবহনশ্রমিকরা।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের টোল ও এক্সেল শাখা থেকে পায়রা সেতুতে সর্বোচ্চ ৯৪০ এবং সর্বনিম্ন ১০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। কনটেইনারবাহী লরির টোল ৯৪০ টাকা, ভারী ট্রাক ৭৫০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ৩৭৫ টাকা, বড় বাস ৩৪০ টাকা, ছোট ট্রাক ২৮০ টাকা, ট্রাক্টর ২২৫ টাকা, মিনিবাস ১৯০ টাকা, মাইক্রোবাস ১৫০ টাকা, পিকআপ ১৫০ টাকা, প্রাইভেটকার ৯৫ টাকা, অটোরিকশা ৪০ টাকা, মোটরসাইকেল ২০ টাকা, রিকশা-ভ্যান-সাইকেল ও ঠেলাগাড়ির ১০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।

খুলে দেওয়া হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের পায়রা সেতু

বরিশাল নগরীর রূপাতলী মিনিবাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলামিন হোসেন বলেন, সিদ্ধান্ত ছিল উদ্বোধনের পর চার ঘণ্টা টোল ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল করবে। কিন্তু ১২টা থেকে যানবাহন চলাচল শুরুর পর টোল আদায় শুরু হয়।

তিনি বলেন, ফেরিতে বাসের ভাড়া ছিল ৭৫ টাকা। আসা-যাওয়ায় ১৫০ টাকা লাগতো। কিন্তু সেতুর টোল ধরা হয়েছে ৩৪০ টাকা। আসা-যাওয়ায় দিতে হবে ৬৮০ টাকা। সেতু উদ্বোধনের আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন দফতরে চিঠি দেওয়া হলেও টোল কমানো হয়নি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশালের সদস্য সচিব রফিকুল আলম বলেন, পায়রা সেতু আমাদের যাতায়াতের পথ সুগম করেছে। সময় বাঁচিয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানও বাড়বে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে। কিন্তু টোল নির্ধারণ যথাযথ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরকে ভাবতে হবে। না হয় বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে।

এদিকে, সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর উৎসুক মানুষের চাপ পড়ে সেতুতে ওঠার জন্য। এতে যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। সাধারণ মানুষ ফোরলেন সেতুতে উঠে আনন্দ প্রকাশ করেন। তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল ফেরি ছাড়া চলাচলের। সে আশা প্রধানমন্ত্রী পূরণ করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

উদ্বোধনের দিনের ইতিহাস ধরে রাখতে ছবি তুলেছেন দর্শনার্থীরা। এতে দুর্ভোগে পড়তে হয় যানবাহন চালক ও যাত্রীদের। তবে সবাই সেতুর সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন। অনেকে গাড়ি থেকে নেমে ফোরলেন সড়ক এবং টানা সেতুর সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক ও বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ। তারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। এই অঞ্চলের মানুষকে উন্নয়নের মহাসড়কে পৌঁছে দিয়েছেন। এখানে সড়ক যোগাযোগ উন্নত হলে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বাড়বে।

সেতু চালুর মধ্য দিয়ে ফেরি যুগের অবসান হলো

পায়রা সেতু প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল হালিম বলেন, সেতু উদ্বোধনের ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ চালু হলো। এতে ফেরিঘাটের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেলো মানুষ। সেতুর নান্দনিকতায় পর্যটক আকৃষ্ট হবেন। দেশের একমাত্র সেতু পায়রায় নিজস্ব হেলথ মনিটরিং সিস্টেম রয়েছে। ফলে যেকোনও ধরনের দুর্যোগ-দুর্ঘটনার আগাম তথ্য পাবে সেতু কর্তৃপক্ষ।

লেবুখালী এলাকার খরস্রোতা পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই। এক হাজার ১১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল স্ট্রেট নকশায় নির্মিত সেতুর দৈর্ঘ্য এক হাজার ৪৭০ মিটার এবং প্রস্থ ১৯.৭৬ মিটার। চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লং জিয়ান রোড অ্যান্ড সেতু কোম্পানি সেতুটি নির্মাণ করে।

সেতু চালু হওয়ায় কাঁঠালবাড়ি থেকে সরাসরি কুয়াকাটার সঙ্গে প্রায় ২১৩ কিলোমিটার সড়কের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। এর মাধ্যমে স্থানীয়দের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরের ব্যবহার বাড়বে, সর্বোপরি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। 

সেতুতে হেলথ মনিটরিং সিস্টেম ব্যবহার করার কারণ হলো- ভূমিকম্প, বজ্রপাতসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা ওভারলোড গাড়ির কারণে সম্ভাব্য ক্ষতি এড়ানো। এটি দেশের দ্বিতীয় সেতু, যা এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল সিস্টেমে তৈরি করা হয়েছে। পায়রা নদীর তলদেশে বসানো হয়েছে ১৩০ মিটার দীর্ঘ পাইল, যা দেশে সর্ববৃহৎ। ৩২টি স্প্যানের মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেস্ট পাইলসহ ১০টি পিয়ার, পাইল ও পিয়ার ক্যাপের ওপর নির্মিত। এ ছাড়া ১৬৭টি বক্স গার্ডার সেগমেন্ট রয়েছে। ফলে দূর থেকে সেতুটিকে ঝুলন্ত মনে হবে। জোয়ারের সময় নদী থেকে সেতুটি ১৮.৩০ মিটার উঁচুতে থাকবে। চারলেনের সেতুটির উভয় পাশে ১২৬৮ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ