X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

বছরে খরচ ৬০ কোটি, তবু হুমকির মুখে মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথ

আবুল হাসান, মোংলা
২৭ অক্টোবর ২০২১, ২৩:৫০আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ২৩:৫০

মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথ সচল রাখতে বেশ বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। প্রতিদিন ড্রেজিং করে নৌপথ সচল রাখা হলেও মাটি ফেলার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে নদীর দুই পাশের মাঠঘাট, পুকুর ও খাস জমি ভরাট হয়ে গেছে। আবার ভরাট জায়গা দখল হয়ে যাওয়ায় মাটি ফেলার জায়গার সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল মতিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, উজান থেকে প্রতিবছর প্রায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন টন পলি মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথে আসে। এ কারণে নৌপথটি সচল রাখতে নিয়মিত ড্রেজিং করতে হয়। বর্তমানে প্রতিদিন চারটি ড্রেজার দিয়ে খননকাজ করা হয়। এতে বছরে খরচ প্রায় ৬০ কোটি টাকা। কিন্তু সমস্যা হলো ড্রেজিং করা বিপুল পরিমাণ মাটি ফেলার জায়গা নেই।

তিনি বলেন, সাধারণত নদীর তীর কিংবা কাছাকাছি স্থানে ডাইক (মাটি দিয়ে ঘেরাও করা স্থান) নির্মাণ করে ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলতে হয়। এখন আর জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না, যেখানে ডাইক নির্মাণ সম্ভব। আগের ডাইকগুলোতে মাটি ফেলতে ফেলতে ৭-৮ ফুট উঁচু হয়ে গেছে। সেগুলো ধারণক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি আমরা।

শুধু ড্রেজিং করে নৌপথটি বেশিদিন সচল রাখা সম্ভব হবে না এই কথা আগেই জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছিলেন, পলি ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। বিষ্ণু ও দাউদখালী নদীর জোয়ার-ভাটার প্লাবন ভূমিতে অসংখ্য বাঁধ নির্মাণের ফলে প্লাবন এলাকা কমে গেছে। পাশাপাশি উজান থেকে আসা মিঠাপানির প্রবাহও নদীতে কমে যাওয়ায় সমুদ্র থেকে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করছে। এসব কারণে নৌপথটিতে মারাত্মকহারে পলি জমছে।

বালু ফেলতে ফেলতে নদীর দুই পাশের মাঠঘাট, পুকুর ও খাস জমি ভরাট হয়ে গেছে

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বাগেরহাট জেলার আহ্বায়ক মো. নূর আলম শেখ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মোংলা-ঘষিয়াখালী নদী খননের ফলে নৌপথটি সচল হচ্ছে এটি মনে করছি না। কারণ এখানে সরকারি অর্থের বিরাট অপচয় হচ্ছে। ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনায় এক ধরনের ত্রুটি আছে। কারণ এখানে একপাড় ভরাট হচ্ছে, সেই ভরাটের বালু এসে আবার নদীতে পড়ছে। ড্রেজিংয়ের ফলে সরকারি সংস্থা ও রাজনৈতিক দলের সাইনবোর্ড দিয়ে এক ধরনের দখলও বেড়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আনিছুজ্জামান রকি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রতিদিন নৌপথে ড্রেজিং হচ্ছে। ড্রেজিংয়ের মাটি যে জায়গায় ফেলা হচ্ছে সেটি রাতারাতি বিভিন্ন সংস্থা দখল করে নেওয়ায় বিপাকে পড়েছি আমরা। নতুন করে জায়গা না পাওয়ায় খননকৃত মাটি ফেলা যাচ্ছে না। এ জন্য খননকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়ছে নৌপথ। সরকারের উচ্চ মহলে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী শেখ হেমায়েত হোসেন বলেন, মোংলা বন্দরের স্বার্থে নৌপথটি সংরক্ষণ করা এবং নাব্যতা ধরে রাখা খুবই জরুরি। এটি করা না গেলে নৌপথটি আবার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবো আমরা।

মোংলা বন্দরের স্বার্থে নৌপথটি সংরক্ষণ করা এবং নাব্যতা ধরে রাখা খুবই জরুরি

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ও সচিব (ভারপ্রাপ্ত) কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথ বন্ধ হয়ে গেলে মোংলা বন্দরে সরকারের অর্থনৈতিক যে প্রবৃদ্ধি, তা বাধাগ্রস্ত হবে। কাজেই নৌপথের খননকাজ কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না।

একসময় পলি পড়তে পড়তে ২০১১ সালে নৌপথটি বন্ধ হয়ে যায়। নৌপথটি বন্ধ থাকায় সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বেশ কয়েক বছর নৌযান চলাচল করতে হয়। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। একপর্যায়ে সুন্দরবনের ভেতরে শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকারডুবির ঘটনায় নৌপথটি বন্ধ হয়ে যায়।

২০১৪ সালে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথ পুনরায় খনন করে সচল করা হয়। ২০১৫ সালের মে মাস থেকে পরীক্ষামূলকভাবে নৌপথটি খুলে দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর নৌপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে নৌপথটি ১৩-১৪ ফুট গভীর ও ২০০-৩০০ ফুট প্রশস্ত বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগ।

/এএম/
সম্পর্কিত
অবরোধে সারাদেশে চলবে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন
খনন করা ১২ নৌপথের অর্ধেকই পরিত্যক্ত: প্রতিবেদন
নাবিকরা আমাদের নৌ-বাণিজ্যের প্রাণ: প্রতিমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক