X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

দেড় মাস আগেও স্বাস্থ্যের এই শাখা থেকেই ফাইল গায়েব হয়েছিল

জাকিয়া আহমেদ
৩১ অক্টোবর ২০২১, ১১:০০আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২১, ১৬:৪৯

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের ১৭টি ফাইল গায়েব হয়েছে। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এবারই প্রথম নয়, মাত্র দেড় মাস আগেও একই শাখা থেকে ফাইল গায়েব হয়েছিল। তবে সেই ঘটনার এখনও কোনও সুরাহা হয়নি।

প্রসঙ্গত, ১৭টি ফাইল ছিল স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শাহাদৎ হোসাইনের কক্ষের লাগোয়া কক্ষে। সে কক্ষে বসেন ক্রয় ও সংগ্রহ শাখা-২-এর সাঁট মুদ্রাক্ষরিক ও কম্পিউটার অপারেটর মো. জোসেফ সরদার ও আয়েশা সিদ্দিকা। ফাইলগুলো এই দুই কর্মীর কেবিনেটে ছিল এবং এই কেবিনেটের চাবিও থাকে তাদের দুজনের কাছেই বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের সূত্র।

এই দুটি চাবি দিয়েই কেবিনেট খোলা হয় বলে জানায় সূত্র।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জিডিতে বলা হয়েছে, গত ২৭ অক্টোবর অফিস করে নথিগুলো ফাইল কেবিনেটে রাখা হয়। পরদিন দুপুর ১২টায় কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় ফাইলগুলো কেবিনেটের মধ্যে নেই। যে নথিগুলো গায়েব হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজসহ অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজের কেনাকাটা সংক্রান্ত একাধিক নথি, ইলেকট্রনিক ডেটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি, নিপোর্ট অধিদফতরের কেনাকাটা, ট্রেনিং স্কুলের যানবাহন বরাদ্দ ও ক্রয়সংক্রান্ত নথি। আর এগুলোর বেশিরভাগই বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও বিভাগের কেনাকাটার সঙ্গে সম্পর্কিত।

সেইসঙ্গে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর ও স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদফতরের বিভিন্ন প্রকল্পের নথি রয়েছে।

এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. শাহাদাৎ হোসাইন।

তিনি জানান, ফাইল গায়েবের ঘটনায় শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) রাতে অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. শাহ্ আলমকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন চিকিৎসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো আহসান কবীর এবং উপ-সচিব আবদুল কাদের। এ কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মো. শাহাদাৎ হোসাইন বলেন, ‘ফাইল গায়েব হওয়ার ঘটনায়  জিডি করা হয়েছে শাহবাগ থানায়। সিআইডি, এনএসআই এসেছে। এখন তো আমাদের আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া আর কোনও পথ নেই। তারা আমাদের সবার মোবাইল নম্বর নিয়েছে। আগামীকাল থেকে এর হদিস বের করার চেষ্টা করা হবে। রবিবারে সব স্টাফরা আসার পর পুলিশসহ সবাই তদন্ত করবে।’

নথি গায়েবের ঘটনাকে ভয়াবহ ব্যাপার উল্লেখ করে শাহাদাৎ হোসেন বলেছেন, ‘এটা অনেক ভয়াবহ একটা ব্যাপার, কারণ নথি তো একটা ডকুমেন্ট।’ তিনি বলেন, ‘এটা সরকারি ডকুমেন্ট। এই সরকারি ডকুমেন্ট নাই— এটা তো বারবার ঘটতে পারে। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, পুনরাবৃত্তি না হয় এবং এর একটা ‘সলিউশন’ যেন হয়, সে  জন্য যেভাবে যা করার আমরা করছি।’

কী উদ্দেশ্যে এসব ফাইল গায়েব হয়েছে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি আসলে বুঝতে পারছি না, এই প্রশাসনিক আদেশ দিয়ে তাদের কী হবে? ১৭টি ফাইল, সব ফাইল সম্পর্কে আমারও আইডিয়া নেই। কী কারণে, কাকে কে স্যাবোটাজ করছে, এটা বুঝতে পারছি না।’

মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘তবে এর ভেতরে নিশ্চয়ই কোনও রহস্য আছে। না থাকলে এতগুলো ফাইল নেবেই বা কেন।’ এর ভেতরে কিছু একটা তো আছেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এখন সেই কিছুটা কী, সেটাই বুঝতে হবে।’

কক্ষের দরজা খোলা ছিল কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেভাবে নেওয়া হয়েছে ফাইলগুলো, এটা বোঝা যাচ্ছে যে তাদের কাছে চাবি রয়েছে। কারণ, দরজা ভাঙা নয়, কোনও ঘষামাজা, ধাক্কাধাক্কির চিহ্ন নেই। যে পয়েন্টে চাবি ঢোকে সেটা একেবারেই নরমাল। বোঝা যাচ্ছে, হয় ডুপ্লিকেট চাবি আছে, অথবা অরিজিনাল চাবি রয়েছে। কারণ চাবি না থাকলে এত সূক্ষ্মভাবে কেউ ফাইল নিতে পারতো না।’

তিনি বলেন, ‘আমার তো এখন সন্দেহ হচ্ছে, ১৭টি ফাইল একবারে নাও নিতে পারে, একেকদিন একেকটা ফাইল নিয়েছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটা বাইরের কেউ না, আমাদের অফিসেরই লোক, সেটা যে শাখারই হোক, যে জায়গারই হোক।’

তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র শনিবার (৩০ অক্টোবর) নিশ্চিত করেছে, এবারই প্রথম নয়। এর মাত্র দেড় মাস আগেও এই শাখা থেকেই ফাইল গায়েব হয়ে গিয়েছিল। সেই ফাইলটি ছিল রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ সংক্রান্ত। ফাইল গায়েব হওয়ার পর তিন দিনের ভেতরে ফাইল খুঁজে দেওয়ার জন্য আয়েশা সিদ্দিকাকে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি চিঠির জবাব দেননি। পরে তাকে শোকজ করা হয়।

আয়েশা সিদ্দিকা বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা। সে সময় চিঠির জবাবে তিনি বেশিরভাগই তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানান। তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

‘এরপর নিয়ম অনুযায়ী, সে জবাব সন্তোষজনক না হওয়াতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনিক শাখায় অভিযোগ পাঠিয়ে দেওয়া হয়’, বলছে সূত্র। পরে তার শরীরের অবস্থা বিবেচনা ও সন্তানের ওপর কোনও প্রভাব পড়ে কিনা চিন্তা করে অ্যাকশনের বিষয়টি স্লো হয়ে যায়। সূত্র জানায়, আমরা বিষয়টিকে নিষ্পত্তি করিনি। ঝুলিয়ে রেখেছি। কিন্তু প্রথম ঘটনার সুরাহা হওয়ার আগেই এবার দ্বিতীয় ঘটনাটা ঘটে গেলো।

তবে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে একাধিকবার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিভাগের সচিব আলী নূরকে ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

/এমআর/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কেউ হতাশ হবেন না: প্রধানমন্ত্রী
কেউ হতাশ হবেন না: প্রধানমন্ত্রী
বিশ্বকাপ ফিরছে ব্রাজিলে
বিশ্বকাপ ফিরছে ব্রাজিলে
৮১তম জন্মদিনে একক বক্তৃতা দেবেন মেনন
৮১তম জন্মদিনে একক বক্তৃতা দেবেন মেনন
শরীফার গল্প ফেরাতে প্রতিবাদ করবে উদীচী
শরীফার গল্প ফেরাতে প্রতিবাদ করবে উদীচী
সর্বাধিক পঠিত
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বিতর্ক
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বিতর্ক