X
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
৩১ বৈশাখ ১৪৩২

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে ‘সিদ্ধান্তহীন’ চিকিৎসকেরা

সালমান তারেক শাকিল
১৭ নভেম্বর ২০২১, ১৪:৩৫আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২১, ১৪:৫০

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই। গত ১২ অক্টোবর রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তির পর ৭ নভেম্বর বাসায় ফেরেন, তখন তার শারীরিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। ছয় দিন পর আবারও ১৩ নভেম্বর হাসপাতালেই ফিরতে হয় তাকে। বর্তমানে এভার কেয়ারের সিসিউইতে ‘আইসিইউ’র চিকিৎসা চলছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর। দলীয়ভাবে পঞ্চমবারের মতো বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানানো হলেও এখন পর্যন্ত (বুধবার দুপুর ১২টা) এ সংক্রান্ত কোনও অগ্রগতি নেই।

দলীয় ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে নানা তথ্য। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক প্যারামিটারগুলো আপডাউন করছে। বেগম জিয়ার ‘মাল্টিফাংশনাল’ রোগ থাকায় হাসপাতাল হিসেবে এভার কেয়ারের সেবাব্যবস্থাও অনেকটাই সীমিত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে অসুস্থতাগুলো ক্রমাগত বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ৭ নভেম্বর আবারও হাসপাতালে নেওয়া হলেও বড় ধরনের কোনও উন্নতি নেই তার। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাকা হলেও তারা আগ্রহের সঙ্গে রোগী দেখতে সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যুক্ত ‘এক্সপার্টরা’ বলছেন, এভার কেয়ার হাসপাতালে মাল্টি ফাংশনাল চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় বাইরের হাসপাতালগুলো থেকে চিকিৎসক ডাকা হয়। এসব চিকিৎসকেরা আগ্রহের সঙ্গে সাড়া দিলেও সামনাসামনি অসুস্থ খালেদা জিয়াকে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে’ নানা দিক থেকে পরিস্থিতির শিকার হন। যে কারণে স্বাস্থ্যগত মতামত দিলেও চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না তারা।

খালেদা জিয়া কারাগারে থাকার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ) একটি চিকিৎসক বোর্ড গঠন করেছিল। ওই বোর্ডের প্রধান ছিল অধ্যাপক ডা. জিলন মিয়া সরকার। তিনি খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘উনার বাত, ডায়বেটিস রোগ তো অত্যন্ত পুরনো। তিনি হাইপ্রেশারের রোগী, বয়সও হয়েছে অনেক। তার হাইকেয়ার অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট দরকার।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বোর্ডের একজন চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেগম জিয়ার বাতের সমস্যাটি অনেক বড়। এক-দেড় বছর আগেও যখন চিকিৎসা করানো হয়, তখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এ ক্ষেত্রে উন্নতমানের ড্রাগস দিতে হয়, ভালো কেয়ার লাগে, ভালো সেন্টার লাগে। ভ্যাকসিন দিয়ে এই হাইড্রাগস নিতে হয়। উনার এই রোগটি কখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, আমরা একই মত দিয়েছি সবসময় সময়। আমরা বলেছি, তার ডায়াবেটিস, রিউম্যাটোলজি, হাই প্রেশার সমস্যা রয়েছে। তার রিউম্যাটোলজি অ্যাগ্রিসেভ ফর্মে আছে, এ জন্য অ্যাগ্রেসিভ ট্রিটমেন্ট দরকার।’

এভার কেয়ারের চিকিৎসক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি বিশেষ মেডিক্যাল টিম খালেদা জিয়ার ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থাপনা করলেও পুরো কার্যক্রম দিনরাত সুপারভাইজ করছেন ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. আল মামুন মাঝে মাঝে আসলেও পুরো চিকিৎসা প্রক্রিয়াটি মোটাদাগে ‘সিদ্ধান্তহীন’ অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার পরিবার, ভাই-বোন ও তার বড়পুত্র তারেক রহমানের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে চিকিৎসকদের ‘সিদ্ধান্তগ্রহণে’ সুনির্দিষ্ট করে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে না। ‘পেশেন্ট’ হিসেবে খালেদা জিয়ার ‘অবস্থানগত স্পর্শকাতরতার’ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে ‘চিকিৎসক’ সংকট। পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে অনেকটাই, ‘এ বলছে ওকে, ও বলছে একে’।

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘হাসপাতালে ম্যাডামের পরিবারের সদস্যরা নিয়মিত দেখভাল করতে যান, খোঁজ খবর নেন। কিন্তু কে কখন যান সেটা আমি নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না। কারণ আমি হাসপাতালে নেই।’

সংশ্লিষ্ট একজন জানান, বেগম জিয়ার শরীরে বর্তমানে পেইন কিলার কাজ করছে না। উন্নত চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে সিসিইউতেই আইসিইউ’র সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকার চিকিৎসকদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের যৌথ মতামতের ভিত্তিতে চিকিৎসা চলছে।

বুধবার (১৭ নভেম্বর)  সকালে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার কাছে ম্যাডামের বিষয়ে কোনও কিছু জানতে চাইবেন না। দলের মহাসচিবের কাছে উত্তর খোঁজেন। আমি চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজ ছাড়া পত্র-পত্রিকায় বিবৃতি, বক্তব্য দিতে পারবো না। আমার কাজ ম্যাডামের চিকিৎসা করা।’

চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তহীনতার পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হলে একমাত্র কার্যকর ‘এখনি মাল্টি ফাংশনাল’ চিকিৎসাযোগ্য উন্নত চিকিৎসাকেন্দ্র। দেশের বাইরে বিশেষজ্ঞ ও মাল্টি ফাংশনাল চিকিৎসাকেন্দ্র ছাড়া বেগম জিয়ার নির্মোহ চিকিৎসা করা অনেকটাই অসম্ভব।

বুধবার সকালে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের পক্ষ থেকে সাংবাদিক শওকত মাহমুদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আবেদন করার পরও সরকার মানবিক আচরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, সুচিকিৎসার নিশ্চিত করতে তাকে বিদেশে আরও সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন হাসপতালে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। কিন্তু সরকার কোনও কিছুই কর্ণপাত করছে না।’

 

 

/এসটিএস/আইএ/
সম্পর্কিত
আটক আ.লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ছাত্রদল নেতাকর্মীর
আওয়ামী ষড়যন্ত্রকারীদের কোনও সুযোগ দেওয়া যাবে না: আমিনুল হক
সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে হত্যার হুমকি বিএনপি নেতার, প্রতিবাদে মানববন্ধন
সর্বশেষ খবর
চুলের গ্রোথ বাড়াতে এই ৫ উপায়ে ডিম ব্যবহার করতে পারেন
চুলের গ্রোথ বাড়াতে এই ৫ উপায়ে ডিম ব্যবহার করতে পারেন
যশোরে পথচারীদের জন্যে বিশ্রাম পানি স্যালাইনের ব্যবস্থা
তীব্র দাবদাহযশোরে পথচারীদের জন্যে বিশ্রাম পানি স্যালাইনের ব্যবস্থা
বৃদ্ধি পেয়েছে ট্রাম্পের জনসমর্থন, কমেছে মার্কিনিদের মন্দার উদ্বেগ
বৃদ্ধি পেয়েছে ট্রাম্পের জনসমর্থন, কমেছে মার্কিনিদের মন্দার উদ্বেগ
মুন্সীগঞ্জ আদালতে নারী কারাবন্দিদের জন্য পাঠাগার
মুন্সীগঞ্জ আদালতে নারী কারাবন্দিদের জন্য পাঠাগার
সর্বাধিক পঠিত
বিমানবন্দরে তিন উপদেষ্টা, জেরার মুখে দায়িত্বরতরা
সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগবিমানবন্দরে তিন উপদেষ্টা, জেরার মুখে দায়িত্বরতরা
হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল ইতিহাসে এটাই প্রথম: প্রধান বিচারপতি
হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল ইতিহাসে এটাই প্রথম: প্রধান বিচারপতি
বাড়লো স্বর্ণের দাম, বুধবার থেকে কার্যকর
বাড়লো স্বর্ণের দাম, বুধবার থেকে কার্যকর
রাতে চিয়া বীজ খেলে এই ৬ উপকার পাবেন
রাতে চিয়া বীজ খেলে এই ৬ উপকার পাবেন
সোনালী ব্যাংকের নিজস্ব পেমেন্ট সুইচ চালু
সোনালী ব্যাংকের নিজস্ব পেমেন্ট সুইচ চালু