চট্টগ্রামে খালে জমে থাকা আবর্জনার স্তূপে তলিয়ে যাওয়া কামাল উদ্দিনের (১২) সন্ধান ৪৮ ঘণ্টা পরও মেলেনি। গত সোমবার বিকাল ৪টায় নগরীর ষোলশহর ভূমি অফিসের সামনে চশমা খালে তলিয়ে যায় সে।
কোতোয়ালি থানার আন্দরকিল্লা মাছুয়াঝরনা এলাকার কাউসার আলীর ছেলে কামাল। বাবা-ছেলে ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় থাকে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে কামাল সবার ছোট। কাউসারে অন্য সন্তানরা ঢাকায় থাকে। তাদের মা নেই।
কাউসার আলী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, খবর পাওয়ার পর থেকে পরিবারের লোকজন সোমবার রাত পর্যন্ত সেখানে কামালকে খুঁজতে থাকে। গতকাল সকাল থেকে আবারও তারা খালের বিভিন্ন অংশে কামালকে খুঁজে দেখে। পরে স্থানীয়দের পরামর্শে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খালে নামে ফায়ার সার্ভিস ডুবুরি দল।
স্থানীয়রা জানায়, গত সোমবার বিকালে বন্ধু রাকিবকে নিয়ে ষোলশহর ভূমি অফিস সংলগ্ন চশমা খালে বোতল কুড়াতে নামে কামাল। সেখানে একটা খেলনা দেখতে পেয়ে তারা সাঁতার কাটে। সামান্য আসার পর স্রোতের মুখে পড়ে। এ সময় রাকিব নিজেকে রক্ষা করতে পারলেও কামাল হারিয়ে যায়। ভয়ে এ ঘটনা সঙ্গে সঙ্গে জানায়নি রাকিব। সন্ধ্যার দিকে কামালের বাবাকে জানায়। তিনি এসে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ছেলের সন্ধান পাননি। মাঝখানে টহল পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও না পাওয়ার অভিযোগ করেন।
নিখোঁজের একদিন পর মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কোডেকের এক কর্মী জানতে পেরে স্থানীয় সাংবাদিকের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। পরে বিকাল ৪টার পর ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। এতে সরঞ্জাম ও জনবল দিয়ে সহয়োগিতা করে সিটি করপোরেশন।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক ফরিদ আহমেদ জানান, মঙ্গলবার বিকালে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। তিনটি ইউনিট উদ্ধার কাজ চালিয়েছে। কিন্তু রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সন্ধান মেলেনি।
তিনি বলেন, খালে থাকা ময়লা আবর্জনার জন্য উদ্ধার কাজে বেগ পেতে হয়েছে। সিটি করপোরেশন আমাদের সহযোগিতা করেছে। তাদের স্কেভেটর দিয়ে ময়লা অপসারণ করেছে। ওখানে একটি বাঁধ আছে। তাই কামালের অন্যত্র চলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে মূল শপিং কমপ্লেক্সের সামনে রাস্তার ওপর একটি ক্রস ড্রেন আছে। ওই ড্রেনে প্রচুর ময়লা। সেখানে বেশি সন্ধান করা সম্ভব হয়নি।
ফায়ার সার্ভিস আগ্রাবাদ স্টেশনের কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, বুধবার সকাল থেকে উদ্ধার অভিযানে নামে ফায়ার সার্ভিসের দুই ডুবুরি দল। আজকে অভিযানে ওই ক্রস ড্রেনে বেশি গুরুত্ব দিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছি।
সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী বলেন, চসিকের স্কেভেটরের পাশাপাশি ১২ জন কর্মী ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে উদ্ধার কাজ চালিয়েছে। সেখানে ময়লা-আবর্জনা একেবারে পরিষ্কার করে ফেলেছি। দুই ট্রাক ময়লা পরিষ্কার করেছি।
চট্টগ্রাম নগরে গত পাঁচ মাসে খাল ও নালায় পড়ে চার জনের প্রাণ গেছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া নগরের শেখ মুজিব রোডের নালায় তলিয়ে যায়। ঘটনার পাঁচ ঘণ্টা পর তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ২৫ আগস্ট টানা বৃষ্টিতে ষোলশহর এলাকায় পানিতে তলিয়ে গেলে নালায় পড়ে নিখোঁজ হন সবজি ব্যবসায়ী ছালেহ আহমদ (৫০)। তার খোঁজ আজও মেলেনি।
এর আগে চলতি বছরের ৩০ জুন একটি সিএনজিচালিত আটোরিকশা চশমা হিল এলাকায় খালে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটলে চালক মোহাম্মদ সুলতান (৩৫) ও যাত্রী খাদিজা বেগমের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন—
পাঁচ ঘণ্টা পর ময়লা সরিয়ে উদ্ধার হলো কলেজছাত্রীর লাশ