ভূমির মালিক না হওয়ায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেতে জটিলতা তৈরি হয়েছে বরিশালের হিজলা উপজেলার বাসিন্দা আসপিয়া ইসলামের। যদিও প্রশাসনের তৎপরতায় আলোর মুখ দেখার পথে রয়েছে আসপিয়ার পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন। তবে শুধু প্রশাসন নয়, এ তরুণীর দুর্দিনে ও স্বপ্নের বাস্তবায়নে তাকে সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছেন অনেকে। দিতে চাচ্ছেন আসপিয়ার কাছে এ সময়ে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত এক খণ্ড ভূমি।
পুলিশ কনস্টেবল হতে মেধা ও শারীরিক যোগ্যতার সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন আসপিয়া। ছিলেন শুধু নিয়োগের অপেক্ষায়। তবে শেষ সময়ে বাধে বিপত্তি। আসপিয়া ও তার পরিবারের কেউ ভূমির মালিক না হওয়ায় ‘পুলিশে তার চাকরি হবে না’ বলে জানানো হয়। এরপরই এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয় বাংলা ট্রিবিউনে। চারদিক থেকে আশ্বাস ও ভরসা পেতে থাকেন আসপিয়া। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন আসপিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ও জমি দেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। এ ছাড়াও এ তরুণীর পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। তাদের কথা, জমির জন্য যেন কোনোভাবেই দরিদ্র এ মেয়েটি সোনার হরিণ চাকরি থেকে ছিটকে না পড়ে।
আসপিয়াকে সহায়তা করার জন্য এগিয়ে আসা একজন হলেন জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ও পার্টির বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন তাপস। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি জানার পরপরই আসপিয়ার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করি। এরপর তাকে কল করে জেলার যেকোনও জায়গায় পাঁচ শতাংশ জমি কিনে দেওয়ার কথা জানাই। এতে তার কনস্টেবল পদে চাকরি পেতে আর কোনও সমস্যায় পড়ার কথা না।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমেও আমি বলছি, জমি ক্রয় করে দিলে আসপিয়ার চাকরি হয় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব এ কাজটি করতে চাই। প্রয়োজনে আপনারাও থাকবেন। সে ক্ষেত্রে আসপিয়ারা যেখানে বসবাস করছেন সেখানে অথবা বরিশাল জেলার যে স্থানে জমি পছন্দ করবে সেখানেই আমি পাঁচ শতাংশ জমি আসপিয়ার নামে কিনে দিতে প্রস্তুত। আমার কথা হচ্ছে, কোনোভাবেই জমির জন্য আসপিয়াকে চাকরি থেকে বঞ্চিত হতে না হয়। একটি পরিবার চেয়ে আছে তার চাকরির দিকে।’
জাপার এ নেতা আরও বলেন, ‘বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত খবর পড়ে বুঝলাম, চাকরি নিশ্চিত ভেবে তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিল আনন্দ। তাদের সঙ্গে সঙ্গে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে পাড়া-প্রতিবেশীতেও। কিন্তু জমি না থাকায় সব স্বপ্ন মুহূর্তের মধ্যে ভেস্তে যায়। খবরটি আমি মন দিয়ে পড়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনারা (সাংবাদিক) বারবার প্রমাণ করছেন, সমাজের দর্পণ হচ্ছে সাংবাদিক। আবারও তা প্রমাণ হলো।’
‘জমির জন্য চাকরি হচ্ছে না’ খবরটি দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার রোকনউদ্দিন ইসলামী সালেহিয়া ডিগ্রি মাদ্রাসার শিক্ষক নূর ই আলম মিন্টু। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে বিভিন্ন মানুষের স্ট্যাটাস দেখি। এরপর আসপিয়াকে নিয়ে প্রকাশিত খবর পড়ে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। দ্রুত বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করে আসপিয়ার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করি। তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে জানতে পারি, জমির জন্য কনস্টেবলের চাকরিটা আটকে গেছে। এ সময় তাকে আমার পৈতৃক সম্পত্তি থেকে পাঁচ শতাংশ জমি দেওয়ার বিষয়টি জানাই। আসপিয়া এ সময় জানায়, ‘সরকার থেকে হিজলায় তাদের ঘরসহ জমি দেওয়া হচ্ছে। ওই জমিটা পাওয়া গেলে চাকরিতে কোনও বাধা হবে না বলে তার বিশ্বাস।’ তারপরও তাকে জমি দেওয়ার এমন অনেকের আগ্রহ দেখে সে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে তার জন্য দোয়া করতে বলে।’
বাংলা ট্রিবিউনকে আসপিয়া বলেন, ‘ইতালি থেকে এক ব্যক্তি আমাকে কল করে জমি কিনে দেওয়ার কথা বলেন। এ সময় তিনি আমার পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন। তিনি জানতে চান, জমি ছাড়া আর কোনও সমস্যা আছে কি-না? এ জন্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। ওই প্রান্ত থেকে ভদ্রলোক আমাকে বলছিলেন, ‘আমি কোনও খবর হওয়ার জন্য আপনাকে সাহায্য করছি না। আমার আবেগের জায়গা থেকে আপনাকে সহযোগিতা করতে পারলে ভালো লাগবে। আমার মোবাইল নম্বরটি রেখে দেবেন। প্রয়োজন হলেই কল করবেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে আপনার জমি কিনতে যা যা প্রয়োজন এর ব্যবস্থা করবো।’’
এভাবে বেশ কয়েকজন আসপিয়াকে কল করে জমি কিনে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বলে তিনি জানান। তারা তাকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন। আসপিয়া বলেন, ‘জমির জন্য চাকরি আটকে থাকবে না বলে সবাই আমাকে নিশ্চিত করছেন। মানুষের এ ভালোবাসা আমি কী দিয়ে শোধ করবো বলেন? বিশেষ করে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে আমি ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ। তাদের মাধ্যমেই আমার চাকরি না হওয়ার খবরটি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে আমার মোবাইলে বিভিন্ন স্থান থেকে কল আসা শুরু হয়েছে। আমি প্রতিটি কল রিসিভ করে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। এতে আমার যে কী ভালো লেগেছে তা আপনাকে বোঝাতে পারবো না।’
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল জেলার সদস্য সচিব রফিকুল আলম বলেন, ‘পুলিশের চাকরিতে এমন কোনও আইন আছে কি-না আমার জানা নেই। এখানে আসপিয়ার প্রতি মানবিক লঙ্ঘন হয়েছে। সে মেধা তালিকায় থাকার পরও শুধুমাত্র জমির জন্য চাকরি পাবে না এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমার জানা মতে, আমাদের সংবিধানে এ ধরনের কোনও আইন নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যেভাবে আসপিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে, সেটা দেখে খুবই ভালো লেগেছে। আমরা যে মানবিক এটা বোঝা গেছে। এখন আসপিয়ার চাকরির বিষয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’