X
শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
৫ আষাঢ় ১৪৩২

পাচারকৃত সম্পদের বিবরণ জানাতে ব্রিটেনকে অনুরোধ অন্তর্বর্তী সরকারের: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:১৮আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:২২

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগীদের সম্পদের বিবরণ জানাতে যুক্তরাজ্যকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আগের শাসনামলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীদের দুর্নীতির বিচারের অভিযানের অংশ হিসেবে এই বিষয়টি সামনে এলো। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এই খবর জানিয়েছে।

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, শেখ হাসিনা ব্যাংক খাত থেকে ১ হাজার ৩শ’ কোটি পাউন্ড সমমূল্যের অর্থ ব্রিটেনে পাচার করেছেন কিনা, তা তদন্ত করে দেখছে নতুন প্রশাসন। এজন্য ব্রিটেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থের গন্তব্যের একটি দেশ ব্রিটেন বলে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের ধারণা। গভর্নর মনসুর আরও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও অর্থ পাচার করা হয়ে থাকতে পারে।

গভর্নর বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্যের সরকার পক্ষ থেকে আমরা অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। হাই কমিশনার আমার কার্যালয়ে এসেছিলেন। তাদের পক্ষ থেকে কারিগরি সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।’

জনাব মনসুর বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আমলের ভূমি মন্ত্রীর ব্রিটেনে প্রায় ১৫ কোটি পাউন্ড সমমূল্যের সম্পদের তথ্য রয়েছে ঢাকার কাছে। মূলত এই সম্পদের বিবরণ আর তা পুনরুদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে ব্রিটিশ সরকারের সহায়তা নিয়েই আলোচনা চলছে।

বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করলেও আলোচ্য বিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি ব্রিটিশ কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের একাংশ শেখ হাসিনা ও তার সরকারের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে  দীর্ঘদিন থেকেই দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছিলেন। দেশের বিদ্যমান আইনে যেখানে একজন নাগরিক প্রতিবছর মাত্র কয়েক হাজার ডলার বৈধ পথে বিদেশে পাঠাতে পারেন, সেখানে‘সরকারপ্রধানের অজ্ঞাতসারে এত বড় অঙ্কের অর্থ পাচার করতে পারার কথা নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন জনাব মনসুর। তবে তদন্ত এখনও চলমান আছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

গত মাসে পদত্যাগের পর দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার অবস্থান বা যোগাযোগের পদ্ধতি নিয়ে তথ্য প্রকাশ করেনি ভারত সরকার। ফলে, এসব অভিযোগের বিষয়ে তার ভাষ্য গ্রহণ করতে পারছে না সংবাদমাধ্যম।

ব্রিটেনের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের জন্য এই অভিযোগগুলো অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। কেননা শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকি নতুন লেবার সরকারে নগর বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। অবশ্য মিজ সিদ্দিক নিজে কোনও অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত কিনা, তার প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করলে তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ ইউনূস নিজেও ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। পাচারকৃত অর্থের বিষয়ে ব্রিটেনের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

ড. ইউনূসের প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধার আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।’

শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের মধ্যে দুর্নীতি সবসময় অন্যতম অভিযোগ ছিল। আওয়ামী লীগের সদস্যদের বিদেশে থাকা অর্থসম্পদ নিয়ে দেশবিদেশে প্রচুর সমালোচনা চলেছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে চলতি বছরের শুরুর দিকে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে একটি কোম্পানির সংযোগ খুঁজে পায়। প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে খোঁজ নিতে শুরু করলে তাদের তত্ত্বাবধানে বিপুল ভূসম্পত্তির হদিস পাওয়া যায়। তারা মন্তব্য করেছে, এই ‘ব্যাখ্যাহীন সম্পদের’ উৎস নিয়ে তদন্ত করা উচিত বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের।

ব্রিটেনের ভূমি রেজিস্ট্রি ও কোম্পানি হাউজ রেকর্ডস এর ফাইল ঘেঁটে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেখানে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যে জনাব চৌধুরীর সম্পত্তির অন্তত ২শ’ ৮০টি খাত খুঁজে পাওয়া গেছে। এর আর্থিক মূল্য অন্তত ১৫ কোটি পাউন্ড।

ভূমি রেজিস্ট্রির তথ্য অনুসারে, এইসব সম্পত্তি ২০১৬ সাল থেকে ক্রয় করা শুরু হয়। তবে সবচেয়ে বেশি সম্পদ ক্রয় করা হয় ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়কালে। আর জনাব চৌধুরী মন্ত্রী ছিলেন ২০১৯ থেকে ২০২৪ মেয়াদে।

তার ক্রয়কৃত সম্পদের মধ্যে রয়েছে লন্ডনের মধ্যাঞ্চলে বিলাসবহুল বাড়ি, পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটে ৬১টি প্লট এবং ব্রিস্টল শহরে সুপারমার্কেটে মালিকানা। এই সম্পদ ক্রয়ের অর্থের উৎস অজানা। তবে এগুলোর অর্থায়নে বন্ধকি ঋণের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে জনাব চৌধুরীর আইনজীবী আজমালুল হোসাইন দাবি করেছেন, তার মক্কেলের লুকানোর কিছু নেই। আর তিনি অবৈধ পথে অর্থও উপার্জন করেননি। জনাব চৌধুরীর চার প্রজন্মের পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। তিনি ৯০ এর দশক থেকেই প্রতিপত্তি অর্জন শুরু করেন।

সাবেক মন্ত্রী চলতি বছরের শুরুর দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আন্তর্জাতিক ব্যবসার মুনাফা থেকে তিনি বিদেশে সম্পদ ক্রয় করেছেন।

এই বিষয়ে  প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, ব্রিটেন তাদের দীর্ঘদিনের নীতি অনুযায়ী চলবে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ আইনি বিষয়ে তাদের কাছে অনুরোধ করেছে কিনা, সে বিষয়ে তারা এখন কোনও মন্তব্য করবে না।  

/এসকে/
সম্পর্কিত
ইরান যুদ্ধে জড়ানোর বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প: হোয়াইট হাউজ
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তত ৮৪
ইরানে খামেনি সরকারের পতনই ইসরায়েলি হামলার মূল লক্ষ্য
সর্বশেষ খবর
ইডেনের সেই ছাত্রীকে কারাগারে বিয়ে করেছেন নোবেল
ইডেনের সেই ছাত্রীকে কারাগারে বিয়ে করেছেন নোবেল
ইরান যুদ্ধে জড়ানোর বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প: হোয়াইট হাউজ
ইরান যুদ্ধে জড়ানোর বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প: হোয়াইট হাউজ
হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ১০ মাস পর হত্যা মামলা, বেরোবির শিক্ষক কারাগারে
হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ১০ মাস পর হত্যা মামলা, বেরোবির শিক্ষক কারাগারে
প্রয়াত সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়
প্রয়াত সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়
সর্বাধিক পঠিত
আর চুপ থাকার পরিস্থিতি নেই, ইশরাক ইস্যুতে উপদেষ্টা আসিফ
আর চুপ থাকার পরিস্থিতি নেই, ইশরাক ইস্যুতে উপদেষ্টা আসিফ
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে মহাজোটের ২ শরিককে আমন্ত্রণ, নুর ও ইরানের ক্ষোভ
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে মহাজোটের ২ শরিককে আমন্ত্রণ, নুর ও ইরানের ক্ষোভ
নানার সূত্রে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে রাজি জায়ান হাকিম
নানার সূত্রে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে রাজি জায়ান হাকিম
ইরানে হামলার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন ট্রাম্প
ইরানে হামলার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন ট্রাম্প
ভাঙা নয়, মূল নকশায় ফিরছে ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য
ভাঙা নয়, মূল নকশায় ফিরছে ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য