‘দিন বদলের স্বপ্ন আমার, একটি বাড়ি একটি খামার’

-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগের প্রথমটি হচ্ছে, ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প। গ্রামের দরিদ্র মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে সরকারের এই প্রকল্প একটি বিপ্লবে পরিণত হয়েছে। এই বিপ্লবের মূল সুর হচ্ছে ‘দিন বদলের স্বপ্ন আমার, একটি বাড়ি একটি খামার’। এ প্রকল্পের ভিশন হচ্ছে, নিজস্ব পুঁজি গঠন ও বিনিয়োগে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং জীবন জীবিকায়নের মাধ্যমে দারিদ্র নিরসন ও টেকসই উন্নয়ন। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প গত ১ জুলাই থেকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। এ ব্যাংকের ৪৯ শতাংশ অংশের মালিক এ প্রকল্পের উপকাভোগীরা। প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।  

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের আশা, দেশের বর্তমান দারিদ্র্যে হার ২২ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে এ প্রকল্প বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। একইসঙ্গে ২০২০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের হার ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে কাজ করছে এই প্রকল্প। প্রকল্পটি গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, তৃণমূলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সংগঠিতকরণ, তাদের সঞ্চয়ে উৎসাহ দেওয়া, সদস্যের সঞ্চয়ের বিপরীতে সমপরিমাণ অর্থ বোনাস দেওয়া, সদস্যদের প্রশিক্ষণ, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় পুঁজি গঠনে সহায়তা এবং আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করাসহ বহুমুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনা। এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’ হাতে নেয়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ২০০১ সালে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে প্রকল্পটি ফের চালু করা হয়।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালের মধ্যে বর্তমানে দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা এক কোটি পরিবারকে প্রকল্পভুক্ত করে দারিদ্র্যকে শূন্যের কোটায় নামাতে রোডম্যাপ তৈরি করেছে মন্ত্রণালয়। এর আওতায় রয়েছে সরকারের লিজ নেওয়া মজা খাস পুকুর ডোবা খাল পুনঃখনন করে তাতে মাছ ও হাঁস চাষ করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় নিচু জমি ভরাট করে তাতে শাকসবজি, ফলজ ও ঔষধি গাছ লাগানো এবং বসত বাড়ি দুর্যোগ সহনীয় করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাও রোডম্যাপের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।  

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত সরাদেশে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের আওতায় উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা ২৯ লাখ ৩৫ হাজার ৮৪৩। প্রকল্পের প্রত্যক্ষ উপকারভোগীর সংখ্যা এক কোটি ৪৭ লাখ। প্রকল্প এলাকায় নিম্নআয়ের পরিবারের সংখা ১৫ শতাংশ থেকে কমে তিন শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রকল্প এলাকায় অধিক আয়ের পরিবারের সংখ্যা ২৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় ৪০ হাজার ২১৩টি গ্রাম উন্নয়ন সংগঠনের মাধ্যমে ২৯ লাখ দরিদ্র পরিবারের এক কোটি ৪৭ লাখ লোক দারিদ্র্য বিমোচনের প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে।’ সম্প্রতি তিনি জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত ক্ষুদ্র সঞ্চয় মডেলের ওপর প্রতিষ্ঠিত দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প, যা দেশের সব উপজেলায় সব ওয়ার্ডে একযোগে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

তিনি জানান, ২০০৯ সালের জুলাই থেকে গতবছরের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পে তিন হাজার ১৬২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সরকারিভাবে ব্যয়ের পরিমাণ দুই হাজার ৬৯৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৯ লাখ ৩৫ হাজার ৮৪৩টি দরিদ্র পরিবারের উপকারভোগী সদস্যরা নিজেদের প্রয়োজনের নিরিখে উঠান বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে তিন হাজার ৬২৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি পালন, নার্সারি, মৎস্য চাষ এবং কৃষিসহ স্থানীয়ভাবে উপযুক্ত বিভিন্ন ট্রেডে ২৭ লাখ ৭৭ হাজার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আয়বর্ধক খামার গড়ে তুলেছে এবং পারিবারিক আয়বৃদ্ধিসহ বিভিন্নভাবে উপকৃত হচ্ছে। 

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এ প্রকল্পের আওতায় যারা সদস্য খামার গড়ে তুলেছেন তাদের বার্ষিক আয় বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ৯২১ টাকা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং আইএমইডির সম্পৃক্ততায় করা একাধিক মূল্যায়নে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।

এদিকে, ২০২১ সালের পর ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প এভাবে আর থাকছে না। কারণ, আগামীতে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত বছরের ২৪ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রম (রিয়েল টাইমিং) উদ্বোধনকালে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘দেশে এখন ক্ষুদ্রঋণ বলতে কিছুই নেই। কারণ, মানুষ এখন গ্রুপভিত্তিক ঋণ গ্রহণ করে। সারাদেশের মানুষকে ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’র আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তবে এখনও সবাই এরা আওতাভুক্ত হয়নি। আশা করছি সবাই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। তখন এ প্রকল্পের আর প্রয়োজন থাকবে না। অর্থাৎ ২০২০-২০২১ সালে প্রকল্পটি আর চালু রাখার প্রয়োজন হবে না।’

অর্থমন্ত্রী জানান, ১৯৮৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়ে দেশের মানুষের মধ্যে সঞ্চয়মুখী মনোভাব গড়ে ওঠে। এটা দেশের অর্থনীতিতে একটা বড় পরিবর্তন। ইতোমধ্যেই পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ৪৮৫টি শাখা অনলাইনের আওতায় এসেছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটা খুবই ভালো খবর। দেশের আর কোনও ব্যাংক এত বড় কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারেনি।’

২০১৪ সালের ২ জুলাই জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন-২০১৪’ জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করলে তা পাস হয়। আইন অনুযায়ী ২০১৬ সালের জুন মাসের ৩০ তারিখে প্রকল্পটি ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়। এর আগেই প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকটির ১০০টি শাখার উদ্বোধন করেন।

এ আইনের বিধান অনুযায়ী, এ ব্যাংকের মালিকানা থাকবে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সুবিধাভোগী সমিতিগুলোর হাতে। তাদের হাতে ৪৯ শতাংশ এবং সরকারের হাতে ৫১ শতাংশ মালিকানা থাকবে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় দেশের সব ইউনিয়নে ৪৪ হাজার ২১৫টি সমিতির মাধ্যমে প্রায় ২৯ লাখের বেশি সুবিধাবঞ্চিত পরিবারকে সংগঠিত করা হয়েছে। প্রত্যেক সদস্যের সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য মাসিক ২০০ টাকা সঞ্চয়ের বিপরীতে সমপরিমাণ ইনসেনটিভ দেওয়া হয়েছে।