বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়: আহসান এইচ মনসুর

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত এ বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ শতাংশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ঠিক করা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা তা অর্জন করা সম্ভব হবে না। ফলে সরকারকে ব্যয়ের লক্ষ্যও কমাতে হবে। অর্থাৎ সরকার যে বাজেট প্রস্তাব করেছে, তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। কারণ সরকারের পরিকল্পনার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। তিনি উল্লেখ করেন, লেংড়া ঘোড়াকে যদি জোরে দৌড়াতে বলা হয়, তাহলে কি সেই ঘোড়া জোরে দৌড়াতে পারবে? আমাদের রাজস্ব আদায়ের যে কৌশল, সেটা আসলে সেরকমই।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করার পর এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাজেটের যে ঘাটতির কথা বলা হয়েছে, সেটা মেটানোর সামর্থ্য আমাদের আছে কিনা, সেটাও বড় প্রশ্ন। আমি মনে করি, আগে বাজেট ঘাটতি আমাদের ৫ শতাংশ বা তার একটু বেশি হলেও সমস্যা হতো না। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সেই সক্ষমতা নেই। কারণ সরকারের আয় আসে রাজস্ব থেকে। সেই রাজস্ব সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। ফলে রাজস্ব আদায় কমে গেছে। ধার করা সামর্থ্য তো প্রকৃত সামর্থ্য না।

তিনি আরও বলেন, রাজস্ব সক্ষমতা কমার কারণেই আমাদের আর্থিক খাত দুর্বল হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, আর্থিক খাতকেও ধ্বংস করা হয়েছে। এতে আমাদের আমানত প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। আর আমানত কমে যাওয়ায় সরকারের ধার করার ক্ষেত্রও কমে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি ধার করবে, হাই ভ্যালু মানি হিসেবে যা সরাসরি মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলবে।

বাজেট ঘাটতি পূরণের সক্ষমতা আমাদের নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের বৈদেশিক ক্ষেত্রে ধার করার সক্ষমতাও কমে গেছে। আন্তর্জাতিক ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান মুডিসও বাংলাদেশের ঋণমান একধাপ কমিয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও আমাদের বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ১২ বিলিয়ন ডলার বা এক লাখ কোটি টাকারও বেশি আমাদের বিদেশ থেকে ধার করতে হবে। সেটাও সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয় না।

জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সংসদে পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।