চালের দাম আরও বেড়েছে

মোটা চালের দাম আবারও কেজিতে বেড়েছে এক থেকে দুই টাকা। সরু বা চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন মোকামে চালের দাম চড়া। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঢাকায় চাল আনতে খরচ বেশি পড়ছে। এ কারণে তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫৪ থেকে ৫৮ টাকায়। তবে একটু নিম্নমানের এই চাল গত সপ্তাহে ৪৭ টাকা কেজিতেও বিক্রি হয়েছে। এখন ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাঝারি মানের চালের (বিআর ২৮) দাম এই সপ্তাহে কেজিপ্রতি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। গত সপ্তাহে এই চাল ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায় পাওয়া গেছে।

ব্যবসায়ীরা মানভেদে সরু চাল বিক্রি করছেন প্রতিকেজি ৭০ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত। সরু চালের মধ্যে মিনিকেট ও নাজিরশাইলের বিক্রি বেশি। ভালো মানের মিনিকেটের কেজি ৭৫ টাকা, আর নাজিরশাইল কিনতে গুনতে হচ্ছে ৮৫ টাকা। যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি।

দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে আটা ও ময়দাও। যদিও বিশ্ববাজারে গমের দাম কমেছে। কিন্তু দেশের বাজারে আটার দাম এখনও বাড়তি। খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫৩ থেকে ৫৫ টাকায়। প্যাকেটজাত আটার দুই কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২৫ টাকায়। খোলা ময়দা কেজিপ্রতি রাখা হচ্ছে ৬০ টাকার কাছাকাছি। দোকানিরা বলছেন, প্যাকেট আটার দাম কেজিতে বেড়েছে দুই টাকার মতো। অর্থাৎ যে আটা (প্যাকেট) ৫০ টাকা কেজিতে পাওয়া যেতো, এখন তা কিনতে হচ্ছে ৫২ টাকায়।

খোলা ময়দার দাম বেড়েছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা। দোকানিরা গত সপ্তাহে খোলা ময়দা ৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও এ সপ্তাহে বিক্রি করছেন ৬৫ টাকা। এছাড়া ৫৮ টাকা কেজি দরের খোলা ময়দা চলতি সপ্তাহে বিক্রি করছেন ৬০ টাকা।

এদিকে গত সপ্তাহে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা মসুর ডাল (ছোট দানা) এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা। আর  ১৩৫ টাকা কেজি দরের (নেপালি) মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। বাজারে এখনও মোটা ডাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা। গত সপ্তাহের ২৪ টাকা কেজি দরের (হলেন্ডার) আলু চলতি সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকায়। কোথাও কোথাও ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি।

এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে গরুর মাংসের দাম ১০ টাকা বেড়েছে। বেড়েছে গুঁড়াদুধের দামও।

রাজধানীর বাজারগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। আগের সপ্তাহের মতোই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম, মাছ, ব্রয়লার মুরগিও।

এর বাইরে চীন থেকে আমদানি করা আদা ও রসুন কিনতে হচ্ছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে। প্রতিকেজি আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, আর রসুন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিশ্ববাজারে দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পাম তেল ও চিনির দাম কমিয়ে নির্ধারণ করলেও বাজারে তার কোনও প্রভাব নেই। এখনও সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকার খোলা চিনির দাম নির্ধারণ করেছে কেজিপ্রতি ৮৪ টাকা। অথচ পাইকারি বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ৮৭ টাকা কেজি দরে। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি। প্যাকেটজাত চিনি কেজিপ্রতি ৯৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।

রাজধানীর কাওরান বাজারে এসেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা আছাদুল ইসলাম। তিনি  বলেন, ‘দাম বেশি হওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষরা আগের মতো বাজার করতে পারে না।’ তিনি উল্লেখ করেন, বাজারে সব কিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু আয় বাড়েনি, এ কারণে বাধ্য হয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা কমিয়ে দিয়েছি।

রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজির দামও বেশ চড়া দেখা গেছে। পেঁপে ছাড়া কোনও সবজির কেজি ৫০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। মানভেদে প্রতিকেজি বেগুন, করলা, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। নতুন শিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা। কচুমুখী, কচুর লতি, ঝিঙে, ধুন্ধল ও পটল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর প্রতি পিস বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। শীতের আগাম সবজির মধ্যে বাজারে ওঠা মুলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে।

এদিকে খুচরা বাজারে এখনও প্রতি ডজন ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে গরুর মাংস প্রতিকেজি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭১০ টাকা।

নতুন করে বেড়েছে গুঁড়াদুধের দামও। বিক্রেতারা জানান, চলতি বছরে এর আগে তিন দফা দাম বেড়েছিল এ নিত্যপণ্যটির। এখন আবারও বাড়ানো হয়েছে। এ দফায় দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলো ব্র্যান্ড অনুযায়ী প্রতি কেজি দুধের দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানিভেদে দুধের দাম ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এখন প্রতি কেজি ডানো ৮৫০ টাকা, ডিপ্লোমা ৮৪০ টাকা, ফ্রেশ ৭১০ টাকা ও মার্কস ৭৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে মাছের দামও বাড়তি। প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০ টাকা, রুই ২৫০ টাকা, পাঙাশ ১৬০ টাকা, সিলভার কার্প ১৪০ টাকা, শিং মাছ আকার ভেদে ৫০০-৭৫০ টাকা এবং চিংড়ি মাছ ৬০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে আকার ভেদে কেজি প্রতি ইলিশের দাম বেড়েছে ৫০-১০০ টাকা। গতকালও যে ইলিশ ৭০০ টাকা ছিল, সেটি আজ ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সামনে আরও দাম বাড়তে পারে। ১৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়।

এছাড়া ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৩০০ থেকে ৩৭০ টাকা, ৫০০ গ্রামের অধিক ওজনের ইলিশের কেজি ৬৫০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৮০০ টাকা, ৮০০ থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশের কেজি ৯৫০ থেকে ১০৫০ টাকা।  এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ১০০০ থেকে ১২৫০ টাকা। দেড় থেকে ২ কেজি ওজনের ইলিশের বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায়।