মহাসড়কে বেপরোয়া যান, এক সপ্তাহে নিহত ১২

 

বগুড়াবগুড়ার মহাসড়কে যানবাহনের বেপরোয়া গতি ও সরকারি নির্দেশ অমান্য করে থ্রি-হুইলার চলাচল করায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে সদর, শাজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত আরও ২০ জন।

হাইওয়ে ও অন্যান্য পুলিশ দুর্ঘটনার জন্য দুই কারণ চিহ্নিত করলেও প্রতিরোধে কোনও কার্যকর কোনও ভূমিকা রাখছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার চাঁদার বিনিময়ে মহাসড়কের অবৈধ যানবাহন চলাচলের সুযোগ দেওয়ার কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বগুড়া শহরতলির মাটিডালি থেকে শেরপুর উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার মহাসড়কে হাটবাজারসহ ৩৫টি দুর্ঘটনা প্রবণ স্পট রয়েছে। এছাড়া মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা।

অভিযোগ রয়েছে, সরকারি দলের কয়েকজন নেতাকর্মী সমিতি খুলে চাঁদা আদায় করে অবৈধ এসব যানবাহন চলাচলের সুযোগ দিচ্ছে। পুলিশও এ কাজে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অদক্ষ চালক ও তাদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে ওইসব স্পটে মাঝে মাঝে দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। গত এক সপ্তাহে মাটিডালি থেকে শেরপুর পর্যন্ত মহাসড়কে দু’জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীসহ ১২ জনের প্রাণহানী হয়েছে। লাখ লাখ টাকা সম্পদের ক্ষতিসহ আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন মানুষ।

সর্বশেষ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দুপুরে বগুড়ার শেরপুরের গাড়িদহ এলাকায় ট্রাক ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাসের হেলপার ও ট্রাকের চালক নিহত হন। আহত হন অন্তত ১০ যাত্রী। একই দিন বগুড়া সদরের মাটিডালি এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় এক বাইসাইকেল আরোহী কিশোর মারা যায়। ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে শাজাহানপুরের বনানী লিচুতলা এলাকায় ট্রাক সিএনজি অটো রিকশার সংঘর্ষে চালকসহ তিনজন নিহত এবং তিনজন আহত হন। একইদিন দুপুরে শেরপুরের ট্রাক ও ভটভটি সংঘর্ষে এক চাল ব্যবসায়ী নিহত ও তিনজন আহত হয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে শাজাহানপুরের সাজাপুর এলাকায় ট্রাক ও মোটরবাইকের সংঘর্ষে দুই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বন্ধুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। একইদিন শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের সামনে স্কুল বাসের চাপায় এক শিক্ষক নিহত হয়েছেন। ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে শাজাহানপুর উপজেলার বি-ব্লক বাজার এলাকায় ট্রাকের চাপায় এক কিশোর পথচারী ও নয়মাইল এলাকায় বাসের ধাক্কায় এক বৃদ্ধ মারা গেছেন।

অধিকাংশ দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবার মামলা না দেওয়ায় পুলিশ সুযোগটি কাজে লাগায়। জরিমানা নিয়ে বা সাধারণ মামলা দিয়ে ওইসব অবৈধ যানবাহন ছেড়ে দেওয়া হয়। আবার সমিতির মাধ্যমে নিয়মিত কাঙ্ক্ষিত চাঁদা না পেলে পুলিশ অভিযান চালায়। পরে প্রতিটি গাড়ি ছাড়তে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হয়।

তুহিন নামে এক চালক অভিযোগ করেন, শাজাহানপুর থেকে সাতমাথা পর্যন্ত মহাসড়কে সিএনজি চালানোর বিনিময়ে সমিতিকে প্রতিদিন ৬০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। ওই সমিতি থেকে থানায় টাকা না দিলেই পুলিশ আটক অভিযান শুরু করে। টাকা দিলেই পুলিশ রাতে গাড়ি ছেড়ে দেয়। তবে শাজাহানপুর থানার ওসি (তদন্ত) আবদুল হাকিম থ্রি-হুইলার চালকদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিয়মিত থ্রি-হুইলার আটক ও জরিমানা করা হয়। দুর্ঘটনা ঘটলেও নিহতের পরিবার মামলা দেয়না। ফলে তাদের কিছু করার থাকেনা।

হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া অঞ্চলের পুলিশ সুপার ইসরাফিল হাওলাদার জানান, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালোনোর কারণে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় যানবাহনের গতি কমাতে স্পিডগান ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মহাসড়কে চলাচলকারী থ্রি-হুইলারের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

/এসএনএইচ/