এমপিপুত্রের তোলা দেয়ালে অবরুদ্ধ আ.লীগ নেতার পরিবার

দেয়ালের নিচ দিয়ে যাতায়াত করছেন আজিজের পরিবারের সদস্যরাখুলনার পাইকগাছার সরল গ্রামের বাড়িতে সত্তর বছর ধরে বসবাস করে আসছেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ গোলাদার ও তার পরিবার। কিন্তু গত এক বছর ধরে তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাড়ির চারপাশে তোলা দেয়ালের কারণে। অভিযোগ আছে, এই দেয়াল তুলেছেন স্থানীয় এমপি শেখ মোহাম্মদ নুরুল হকের ছেলে শেখ মনিরুল ইসলাম। অভিযোগ অস্বীকার করে এমপিপুত্র বলছেন, জমির প্রকৃত মালিকদের উচ্ছেদ করে সেখানে বসবাস করছেন আজিজ। বর্তমানে আজিজের পরিবারের সদস্যদের মই দিয়ে দেয়াল টপকে বা দেয়ালের নিচে মাটি খুড়ে তৈরি করা সুড়ঙ্গপথে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলা তদন্তাধীন রয়েছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন পাইকগাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম।
জানা গেছে, ওই বাড়ির পাশের একটি খাস জমির ৫০ শতকের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি লাভ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ মোহাম্মদ নুরুল হকের ছেলে শেখ মনিরুল ইসলাম। কিন্তু ওই জায়গায় তিনি জমি বুঝে পান ৩০ শতক। বাকি ২০ শতক জায়গা বুঝে পেতে তিনি আব্দুল আজিজের বাড়ির জায়গা দখলের প্রক্রিয়া শুরু করেন। এর ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২ জানুয়ারি আব্দুল আজিজের বাড়ির চারপাশে উঁচু দেয়াল তুলে দেন মনিরুল। ফলে নিজ বাড়িতেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে আজিজের পরিবার।
আব্দুল আজিজ গোলাদারের ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী মো. আসাদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত বছরের জানুয়ারি মাসে জমি দখলের প্রক্রিয়া শুরু করেন মনিরুল। ওই বছরের ২ জানুয়ারি সংসদ সদস্য নুরুল হক নিজে এসে আমাদেরকে জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। তারপরও জমি না ছাড়লে আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। ওই মামলায় বাবা (আব্দুল আজিজ) ২৬ দিন জেলও খেটেছেন।’ মিথ্যা মামলায় পলাতক থাকার সুযোগে গত বছরের ৫ জানুয়ারি বাড়ির চারপাশে দেয়াল তোলা হয় বলে জানান তিনি।
বাড়ির চারপাশে দেয়াল থাকায় এভাবেই মই দিয়ে দেয়াল টপকে বাইরে যেতে হচ্ছে বাড়ির বাসিন্দাদেরআসাদুল আরও বলেন, ‘দেয়াল তোলার পর সংবাদ সম্মেলন করে আমরা বিষয়টি সবাইকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু এর কোনও প্রতিকার পাইনি। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের মই দিয়ে দেয়াল টপকে বা দেয়ালের নিচে তৈরি করা সুড়ঙ্গপথে চলাচল করতে হচ্ছে।’
সাংসদপুত্র শেখ মনিরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ওই জমির প্রকৃত মালিক ঠাকুর দাশ হালদার ও অজিত হালদার। আব্দুল আজিজ তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ও হামলা-ভাঙচুর করে ওই জমিটি দখলে নেয়। ঠাকুর ও অজিত এ ঘটনা বাবাকে (সংসদ সদস্য নুরুল হক) জানিয়ে জমি উদ্ধারে সহযোগিতা কামনা করেন। এরপর পাওয়ার অব অ্যাটর্নির ভিত্তিতে জমির মালিকানা আমি গ্রহণ করি।’ সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে আজিজকে জমি ছেড়ে দিতে বলা হয় বলেও জানান তিনি।
বাড়ির চারপাশে দেয়াল তোলা প্রসঙ্গে মনিরুল বলেন, ‘জমির চারপাশে আমরা দেয়াল তুলেছি। কিন্তু ভেতরে আজিজের পরিবার থাকায় তাদের যাতায়াতের জন্য একটি পথ রাখা হয়। তারা সে পথ ব্যবহার না করে নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
এ ঘটনা প্রসঙ্গে পাইকগাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্থানীয় অন্য একটি পরিবারের নামে থাকা জমি অনেক আগেই খাস খতিয়ানভুক্ত হয়েছে। এরপর সেখানে ৫০ শতক জমির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি পায় শেখ মনিরুল। সেখানে জমি মেপে ৩০ শতাংশ বুঝে পেলে বাকি ২০ শতাংশ জমির জন্য আজিজের বাড়ি দখলের প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু এই বাড়িতে আজিজের পরিবার প্রায় ৭০ বছর ধরে বসবাস করছে।’
এ ঘটনায় আজিজের ছেলে সাইফুল ইসলাম পাইকগাছা থানায় মামলা দায়ের করেছেন জানিয়ে এসআই জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ওই মামলাটি আমি তদন্ত করছি। আশা করছি, খুব শিগগিরই এ ঘটনায় আদালতে একটি প্রতিবেদন দিতে পারব।’

আরও পড়ুন-

‘নার্গিস পুরোপুরি সুস্থ, বাড়ি ফিরে যাবেন শুক্রবার’

এমপি লিটন হত্যা মামলার আরেক আসামি রানা ঢাকায় গ্রেফতার

/টিআর/এপিএইচ/