রাবার ব্যবসায়ী পরিচয়ে ‘ছায়ানীড়ে’ ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গিরা


অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধারের পর ছায়ানীড়ের বাসিন্দাদের নেওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। পরে তাদের নেওয়া হয় সীতাকুণ্ড থানার পুলিশ হেফাজতে
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের প্রেমতলায় যে বাড়িটিতে ‘অ্যাসল্ট সিক্সটিন’ অভিযান পরিচালনা করে সোয়াত টিম সে বাড়িটির নিচতলার একটি ফ্ল্যাট এ বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে রাবার ব্যবসায়ী পরিচয়ে ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গিরা। ‘ছায়ানীড়’ নামের বাড়িটির মালিক রেহানা বেগম বৃহস্পতিবারের ওই অভিযান শেষে বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।  
ওই অভিযানের সময় বাড়িটির অন্য পরিবারগুলোর সঙ্গে ছোট ছেলে নাসিরুদ্দিনসহ রেহানা বেগমও অবরুদ্ধ হন। অভিযান শেষে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা তাদের উদ্ধার করেন। সে সময়ে বাংলা ট্রিবিউনের এক প্রশ্নের জবাবে রেহানা বেগম জানান, জানুয়ারির শেষ দিকে ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী এক যুবক নিজেকে রাবার ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে সপরিবারে বাস করবে বলে তার নিচতলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। তবে ঘটনার বিহ্বলতায় বাসা ভাড়া নেওয়া যুবকের নাম মনে করতে পারেননি তিনি।

অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধারের পর ছায়ানীড়ের বাসিন্দাদের নেওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। টানা ১৯ ঘণ্টার এই অভিযানের সময় আটকা পড়ায় তাদের চেহারায় বিমর্ষভাব স্পষ্ট। ছবি: ফোকাস বাংলা
তবে তিনি জানান, ‘মাসিক ৬ হাজার টাকা ভাড়া চুক্তিতে নিচতলার একটি ফ্ল্যাট তাদের ভাড়া দিয়েছিলাম। এরপর লোকটা তার ১৯-২০ বছর বয়সী স্ত্রী আর ছয়-সাত মাস বয়সী বাচ্চাসহ ফ্ল্যাটে ওঠে। তাদের সঙ্গে প্রায় ৩৫ বছর বয়সী আরেকজন লোকও থাকতো। ওই লোককে নিজের সম্বন্ধী (স্ত্রীর বড় ভাই) পরিচয় দিয়েছিল ওরা।’
তাদের আচরণ কেমন ছিল জানতে চাইলে রেহানা বেগম বলেন, ‘সন্দেহ করার মতো কিছু দেখিনি। তবে মাঝে মধ্যেই বাড়ির পুরুষরা দুই-তিন দিন বাসায় থাকতো না। আমি ভেবেছি ব্যবসার কারণেই হয়তো বাইরে যেতো।’
অভিযান শেষে বাড়িটি থেকে উদ্ধার হওয়া অন্য সদস্যদের সঙ্গে রেহানা বেগম ও তার ছেলে নাসিরুদ্দিনকেও  প্রথমে হাসপাতালে ও পরে সীতাকুণ্ড থানায় পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ছায়ানীড় নামের ওই বাড়িটিকে জঙ্গি আস্তানা হিসেবে সন্দেহ করে বুধবার বিকাল থেকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও স্থানীয় সোয়াত টিম ঘিরে রাখার পর বৃহস্পতিবার ভোরে সেখানে অভিযান চালায় ঢাকা থেকে আসা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সোয়াত টিমের সদস্যরা। এসময় বাড়িটিতে বসবাসরত অন্য পরিবারগুলোকে জিম্মি করে ফেলে জঙ্গিরা। অভিযানে এক নারী ও তিন পুরুষ জঙ্গি এবং একটি ৬/৭ বছরের শিশু নিহত হয়। ‘অ্যাসল্ট সিক্সটিন’ নামের এ অভিযানের পর তাৎক্ষণিক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে নিহত নারী ও পুরুষ সদস্যদের নব্য জেএমবির সদস্য হিসেবে দাবি করেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম।
এ সময় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে সোয়াত টিমের সদস্যরা পাশের ভবন থেকে ছায়ানীড়ের ছাদে প্রবেশের চেষ্টা করে। এসময় জঙ্গিরা দোতলায় উঠে ‘আল্লাহু আকবর’ আওয়াজ তুলে হামলা চালায়। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়। আরেকজন আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়।’

অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে নারী-শিশু ও বৃদ্ধসহ উদ্ধার পাওয়া ছায়ানীড়ের বাসিন্দাদের নেওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। ছবি: ফোকাস বাংলা
ডিআইজি বলেন, ‘অভিযানে এক নারী ও তিন পুরুষ জঙ্গি নিহত হয়েছে। তাদের সবাই নব্য জেএমবির সদস্য। এদের মধ্যে দু’জনের মরদেহ পুরোপুরি ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। ফলে তাদের চেনাই যাচ্ছে না।’ এ ঘটনায় আরেকটি ছয়-সাত বছরের শিশু নিহত হওয়ার কথাও জানান তিনি। শিশুটি জঙ্গিদের পরিবারের সদস্য হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ব্রিফিংয়ে ডিআইজি শফিকুল ইসলাম অপারেশন অ্যাসল্ট সিক্সটিনের সমাপ্তি ঘোষণা করে বলেন, ‘‘ছায়ানীড়’ নামের এই বাড়িতে যে অংশে জঙ্গিরা থাকত, সেখানে প্রচুর গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক রয়েছে এবং সেখানে ডাম্পিং অপারেশন চলবে।’ অভিযান চালানোর সময় সোয়াত টিমের দুই জন, পুলিশের একজন ও ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় সোয়াতের দুই সদস্য গুরুতর আহত হন। তাদেরকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জঙ্গিদের মরদেহগুলো পুলিশ পাহারায় রয়েছে এবং এগুলো চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়ার কথা রয়েছে। এ ঘটনায় এখনও কোনও মামলা হয়নি।

/টিএন/

আরও পড়ুন: