রাউধার মৃত্যুতে সহপাঠীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

আদালত চত্বরে রাউধার বাবামালদ্বীপের মডেল ও মেডিক্যাল শিক্ষার্থী রাউধা আথিফের মৃত্যুর ঘটনায় তার এক সহপাঠীকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আথিফ। রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলে রাউধার মৃত্যুর ১২ দিন পর আজ সোমবার (১০ এপ্রিল) তার বাবা রাজশাহীর আদালতে এই মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সোমবার দুপুরের দিকে রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আথিফ রাজশাহী মহানগর আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলামের আদালতে উপস্থিত হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে উল্লেখ করেছেন রাউধার সহপাঠী সিরাত পারভীন মাহমুদের নাম।
বাদীপক্ষের আইনজীবী কামরুল মনির বলেন, আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলা দায়েরের পর ডা. আথিফ বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই এটি একটি হত্যাকাণ্ড। আমরা রাউধার মৃত্যুর খবর পেয়ে বাংলাদেশে ছুটি এসেছি। ওর (রাউধা) গলায় হাতের ছাপ আছে। তাই এটা আত্মহত্যা হতে পারে না।’
রাউধা আথিফপেশায় চিকিৎসক ডা. আথিফ আরও বলেন, ‘রাউধাকে যে হত্যা করেছে, সে ডানহাতি। তাকে শ্বাসরোধ করেই হত্যা করা হয়েছে। যদি রাউধা আত্মহত্যা করে থাকে, তাহলে কেন পুলিশ আসার আগেই তাকে নামানো হলো? প্রাথমিক অবস্থায় হাসপাতালের ভেতরের রুম দেখেও মনে হয়েছে এটা হত্যাকাণ্ড।’ এখন এই মামলার তদন্ত রাজশাহীর পুলিশ ভালোভাবে করবে বলে আশাবাদ জানান তিনি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আরও বলেন, ‘মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে সিরাত ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে রাউধাকে ফলের জুস খেতে দেয়। ওইদিন বিষয়টি রাউধা তার মাকে জানিয়েছিল। এছাড়া, রাউধার মৃত্যুর পর কাউকে জানানোর আগেই সিরাত একাই রাউধার রুমের দরজা ভেঙে নিজেই লাশ নামিয়েছে বলে সবাইকে জানায়। কিন্তু ওই রুমের দরজা বা ছিটকানি ভাঙার কোনও চিহ্ন নেই। রাউধার মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত সিসিটিভি ক্যামেরা সচল থাকলেও ওই রাতে তা অকেজো ছিল বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ রাউধার পরিবারকে জানিয়েছে। এসব বিষয় থেকেই রাউধাকে হত্যা করা হয়েছে বলে তার পরিবারের সদস্যরা সন্দেহ করছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।’
রাউধা হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন আসামি করা হয়েছে রাউধার সহপাঠী সিরাত পারভীন মাহমুদকে। এ দু’জনের সম্পর্ক প্রসঙ্গে ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজের সেক্রেটারি আব্দুল আজিজ রিয়াদ বলেন, ‘ভারতের কাশ্মীরের মেয়ে সিরাতের সঙ্গে রাউধার ভালো সর্ম্পক ছিল। এটা আমরা জানতাম। দু’জনই দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, দু’জনেই বিদেশি ব্লকে থাকত।’
সিরাতের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হওয়া প্রসঙ্গে আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে আমরা একাডেমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেব। তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে আমাদের পক্ষ থেকে।’
উল্লেখ, গত ২৯ মার্চ রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউথা আথিফের লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশে জানিয়েছিল, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে কাপড় বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে রাউধা আত্মহত্যা করে। তবে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই তার সহপাঠীরা রাউধার লাশ নামিয়ে ফেলেছিল। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) রাউধার লাশ দেখতে রাজশাহীতে আসেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আয়েশাথ শান শাকির এবং তার মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা। শুক্রবার (৩১ মার্চ) তার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। রাউধা আত্মহত্যা করেছে উল্লেখ করে বোর্ড ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে ওই দিনই রাজশাহীর হেতেম খাঁ কবরস্থানে রাউধাকে দাফন করা হয়
রাউধা রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। রাউধা পড়ালেখার পাশাপাশি মডেলিং করতেন। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্বখ্যাত ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের ভারতীয় সংস্করণের প্রচ্ছদে আরও পাঁচ নারী মডেলের সঙ্গে ছিলেন রাউধা।

আরও পড়ুন-

কেউ জানে না কেন রাউধার আত্মহত্যা!

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন চ্যালেঞ্জ করেছেন রাউধার বাবা, মামলার প্রস্তুতি

রাউধাকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে দাবি বাবার, পুলিশ বলছে ‘চান্স ফিফটি-ফিফটি’

/টিআর/