রফিউর রাব্বিকে গ্রেফতারের দাবি শামীম ওসমানের

সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন শামীম ওসমাননারায়ণগঞ্জে নিহত মেধাবী শিক্ষার্থী তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বিকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ নিয়ে কটুক্তির অভিযোগে জেলা হেফাজতে ইসলামের এক নেতার মামলা দায়েরের দুই দিন পর শুক্রবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে ‘নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মুসলমান’ ব্যানার নিয়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে এ দাবি ওঠে।

সমাবেশে উপস্থিত হয়ে এ দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। তিনি বলেন, ‘মঞ্চ থেকে যে দাবি উঠেছে, আমিও তার সঙ্গে একমত। প্রতিবেদনে যদি রফিউর রাব্বীকে অভিযুক্ত করা হয়, তখন প্রশাসন কোনও ধরনের গাফিলতি করলে আমি নিজেই মাঠে নামবো। এমপি-মন্ত্রী আমার কাছে বড় না। ইসলামের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে শামীম ওসমান কখনও আপোস করবে না। নারায়ণগঞ্জে ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করা হলে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।’

রফিউর রাব্বির ছেলে ত্বকী হত্যারও বিচার চেয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমিও ওই বাচ্চা ছেলের হত্যার বিচার চাই। অচিরেই সংবাদ সম্মেলন করে বিচার বিভাগীয় বিচার চাইবো।’

সমাবেশ থেকে বক্তারা রফিউর রাব্বির দ্রুত গ্রেফতার দাবি করেন। তারা বলেছেন, ‘যেহেতু আদালতে মামলা হয়েছে, আদালত ৭ মে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে সেহেতু আমরা ওই পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। যদি এরপর প্রশাসন কিংবা পুলিশ গাফিলতি করে তাহলে কোনও ধরনের ছাড় দেবো না। প্রয়োজনে রক্ত দেবো। তবুও নারায়ণগঞ্জে নাস্তিকদের ঠাঁই দেবো না।’

শহরের ডিআইটি কেন্দ্রীয় রেলওয়ে জামে মসজিদের সামনে বঙ্গবন্ধু সড়কে মঞ্চ সাজিয়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা হেফাজতে ইসলামের আমীর মাওলানা আবদুল আউয়াল। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রাব্বির বিরুদ্ধে মামলার বাদী জেলা হেফাজতের সমন্বয়ক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান, যার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক নাশকতার মামলা।

সমাবেশে মূলত হেফাজতে ইসলাম ও আওয়ামী লীগসহ এর সহযোগী সংগঠনের সদস্যদের আধিক্য ছিল। তবে হেফাজতে ইসলামের অন্যান্য সমাবেশের তুলনায় জনসমাগম কম ছিল শুক্রবার। যদিও শামীম ওসমান গত কয়েকদিন ধরেই এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রস্তুতি সমাবেশ করেন, তারপরও লোক কম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আজকের সমাবেশে অনেক মাদ্রাসা থেকে লোকজন আসার কথা ছিল। কিন্তু আমি তাদের বারণ করেছি। বলেছি এত লোকজন এলে শহরে আরও যানজট হবে, এমনকি তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে কোনও অঘটন ঘটাতে পারে।’

এদিকে নিজের বক্তব্যের একটি অংশে দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারেরও বিষোদাগার করে শামীম ওসমান বলেন, ‘যে পত্রিকা আমাদের নবীজীকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন করে, ওই পত্রিকা কিনে পড়াটাও নাজায়েজ। তাই আমি বলবো আপনারা নারায়ণগঞ্জের কেউ টাকা দিয়ে কিনে এটা পড়বেন না।’
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনার পেছনে ‘জামায়াত’ ছিল উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘ওই গণ্ডগোল করেছিল জামায়াত। সে খবর আমাদের কাছে আছে।’

বক্তব্যে যোগ করে শামীম ওসমান বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলেম-ওলামাদের বৈঠকের পর অনেকের গা জ্বলে যাচ্ছে, তারা বিভিন্ন ধরনের সমালোচনা করছে। অনেককেই উস্কে দিচ্ছে তা আমরা জানি। রফিউর রাব্বির পেছনে কারা আছে ও ইন্ধন দিচ্ছে সব জানি। কিন্তু আওয়ামী লীগ করি, দল করি, এমপি হওয়ায় সবকিছু বলতে পারছি না। যদি দল ছেড়ে দেই তাহলে নারায়ণগঞ্জে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না। বাংলাদেশে কিছু আঁতেল আছে যারা ফ্যাশন করে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলে। কিন্তু এদেশে এসব বলে আপনারা পার পাবেন না, কারণ এটি আমার নেত্রী শেখ হাসিনার দেশ। নারায়ণগঞ্জেও সে ধরনের কিছু আঁতেল লোকজন আছে। কিছু বাম আর কমিউনিস্ট আছে যারা ঢাকায় বসে সমালোচনা করে। অথচ শেখ হাসিনার আশীর্বাদ না থাকলে তারা ‘মেম্বার’ পাশ করার যোগ্যতাও হারাতো।”

কিছু গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ না করে শামীম ওসমান বলেন, ‘কিছু পত্রিকা লিখে দিলো শামীম ওসমান হেফাজত হয়ে গেছে। আমি বলতে চাই, হেফাজতের সঙ্গে আমার মিল আছে। সেই মিলটি হলো হেফাজত রাসূলকে নিয়ে ইসলামকে নিয়ে কটুক্তি করলে আন্দোলন করে, আমি শামীম ওসমানও করি।’

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা চিকিৎসক ফোরামের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি আবু জাফর বিরু, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার নুরুল হুদা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সামিউল্লাহ মিলন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, হেফাজত নেতা কামাল উদ্দিন দায়েমী, জাকির হোসেন কাসেমী, মুফতি মশিউর উল্ল্যাহ, মুফতি হারুনুর রশিদ, সিরাজুল ইসলাম মনির প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে রফিউর রাব্বির বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতে ইসলামের আমীর মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বাদী হয়ে গত ১৯ এপ্রিল দুপুরে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা আদালত গ্রহণ করে আগামী ৭ মে’র মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে ডিবিকে নির্দেশ দিয়েছে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় শহীদ মিনারে এক অনুষ্ঠানে রফিউর রাব্বি ইসলাম ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এনে বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যদি বাংলার মানুষ জানতো সংবিধান বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম দিয়ে শুরু হবে, দেশ হবে সাম্প্রদায়িকতার দেশ, তাহলে ৩০ লাখ শহীদের মুক্তিযুদ্ধে কেউ অংগ্রহণ করতো না।’

মামলায় বাদী অভিযোগ তোলেন, ‘রফিউর রাব্বির সেই বক্তব্যে বাদীসহ সারাদেশের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর ধর্মীয় আঘাত হানার শামিল। তাছাড়া এটা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিষয়ে কটুক্তির শামিল।’

রফিউর রাব্বি হলেন তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির জেলা শাখার আহ্বায়ক। একই সঙ্গে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চেরও আহ্বায়ক তিনি।

/জেএইচ/