চট্টগ্রামে শেষ মুহূর্তের ঈদ বাজার

শপিংমলে ক্রেতা নেই, জমজমাট ফুটপাত

বিক্রয় প্রতিনিধিরা আছেন, কিন্তু ক্রেতা নেই (ছবি- চট্টগ্রাম প্রতিনিধি)

আর দুই দিন পরেই ঈদ। অন্যান্য বছর এমন দিনে বেচাকেনার ধুম পড়ে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বিপনীবিতান ও শপিংমলে। কিন্তু এবার চিরচেনা সেই দৃশ্যপট নেই। ঈদের চার দিন আগে সরকারি ছুটি শুরু হওয়ায় নগরবাসী আগেই কেনাকাটা সেরে রেখেছেন। তাই ক্রেতার অভাবে এবার অনেকটা অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা। বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের দোকানেও ক্রেতাদের তেমন আনাগোনা নেই। নগরীর বিভিন্ন এলাকার বিপনীবিতান ও শপিংমল ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

তবে রমজানের শেষ দিকে এসে জমে উঠেছে নগরীর ফুটপাতের দোকানগুলো। বেতন-বোনাস পাওয়ায় গার্মেন্টসকর্মীদের অনেকেই আগ্রাবাদ, নিউমার্কেট মোড়, ষোলশহর দুই নম্বর গেইটসহ নগরীর ফুটপাতের দোকানগুলোয় ভিড় করছেন। শেষ দিকে এসে নিজের এবং পরিবারের জন্য পছন্দের পোষাক কিনছেন তারা। নিম্ন আয়ের মানুষেরাও ঈদের কেনাকাটায় এখন ভিড় করছেন ফুটপাতের দোকানে।

শুক্রবার বিকালে নগরীর সানমার ওসানসিটি, আফমি প্লাজা, ইউনোস্কো সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে, ওইসব মার্কেটের অধিকাংশ দোকানেই তেমন একটা ভিড় নেই। বিক্রেতারা অলস সময় পার করছেন। দুয়েক ক্রেতা মাঝে মধ্যে দোকানে আসছেন। পুরো দোকান ঘুরে পছন্দ হলে কিনছেন, না হয় ঘুরে ফিরে বেরিয়ে যাচ্ছেন।

বিকাল সাড়ে ৩টায় দিকে নগরীর জিইসি ওআর নিজামস্থ জেন্টেল পার্ক শো-রুমে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র ৪-৫ জন ক্রেতা পোশাক দেখছেন। অথচ, ওই শো-রুমে ১০-১২ বিক্রয় প্রতিনিধি অলস দাঁড়িয়ে রয়েছেন। একই অবস্থা দেখা যায় ম্যাপল ও শৈল্পিক-এর শো-রুমে। ওই দুই প্রতিষ্ঠানেও ক্রেতাদের তেমন আনাগোনা নেই। বিক্রয় কর্মীরা অলস দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

ক্রেতাশূন্য দোকান (- ছবি- চট্টগ্রাম প্রতিনিধি)

জেন্টেল পার্ক শো-রুমের বিক্রয়কর্মী রায়হান বলেন, 'গতকাল (বৃহস্পতিবার) এবং আজ (শুক্রবার) বেচাকেনা অনেক কম। এর আগে ক্রেতার ভিড়ে দম ফেলার সুযোগ পাওয়া যায়নি। অথচ, এখন আমরা অলস দাঁড়িয়ে রয়েছি, ক্রেতা নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ১০-১৫ জন ক্রেতা তাদের শো-রুমে এসেছেন। তবে যারা আসছেন তাদের অনেকে কেনাকাটা করেছেন। ঈদের ছুটি আগে শুরু হওয়ায় লোকজন শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। তাই বেচাকেনা কম।'

তবে এবার শেষ দিকে এসে জমে উঠেছে নগরীর ফুটপাতগুলো। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ফুটপাতে ততই বেচাকেনা বাড়ছে। খেটে খাওয়া মানুষ ও নিম্ন আয়ের লোকজন পরিবার-পরিজনদের জন্য কেনাকাটা করতে শেষ মুহূর্তে এসে ভিড় করছেন ফুটপাতে। বিক্রেতারা বলছেন, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত বেচাকেনা চলছে। আর ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে বিকিকিনি ততই বাড়ছে।

হকার্স মার্কেটে উপচে পড়া ভিড় ক্রেতাদের (ছবি- রবিন চৌধুরী)

শুক্রবার দুপুরে নগরীর নিউমার্কেট, জহুর হকার্স মার্কেট এবং জলসা মাকেটের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। ঈদ উপলক্ষে বেতন-বোনাস পাওয়ার পর ছেলেমেয়েদের নিয়ে তারা ছুটে এসেছেন মার্কেটে, পছন্দসই জামাকাপড় কিনতে। বিক্রেতারাও পার করছেন ব্যস্ত সময়। শেষ মুহূর্তে এসে ধম ফেলার ফুসরত নেই তাদের।

নগরীর দেওয়ানহাট এলাকায় বসবাসরত পোশাকশ্রমিক পারভীন আক্তার দুই ছেলেকে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন জহুর হকার্স মার্কেটে। তিনি বলেন, 'বৃহস্পতিবার বেতন-বোনাস পেয়েছি, শনিবার গ্রামের বাড়িতে যাবো। তাই কেনাকাটা করতে এসেছি। আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য তো হকার মার্কেটই একমাত্র ভরসা।'

পছন্দের জামা বাছাইয়ে ব্যস্ত ক্রেতারা (ছবি- রবিন চৌধুরী)

নিউ মার্কেট মোড়ের বাটার শো-রুমে সামনে শার্ট-প্যান্ট বিক্রি করছেন নুরুল আমিন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'আমাদের কাস্টমার হলো নিম্ন আয়ের লোকজন। গত দুই তিন দিনে আমাদের বেচাবিক্রি অনেক বেড়েছে। ঈদের রাত পর্যন্ত বেচাবিক্রি জমজমাট থাকবে বলেই আশা করছি।’

/এমএ/