৪০০ অস্ত্রের ভুয়া লাইসেন্স: অফিস সহকারী সামছুলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

অফিস সহকারী শামসুল ইসলাম (ফাইল ছবি)

রংপুরের জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জাল করে ৪শ’ অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতার হওয়া ডিসি অফিসের অফিস সহকারী শামসুল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকালে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসানের আদালতে তিনি এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) এসআই বাবর আলী বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জিআরও বাবর আলী জানান, আজ (শুক্রবার) বিকালে শামসুল ইসলামকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

এদিকে, দুদক রংপুরের উপ-পরিচালক মোজাহার আলী জানান, শামসুল ইসলামকে দুই দফায় ৮ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই সময় তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনের নামও তিনি প্রকাশ করেছেন।

তিনি জানান, তদন্তের স্বার্থে অন্য জড়িতদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে বাকিদের গ্রেফতারে ইতোমধ্যেই অভিযান শুরু হয়েছে।

মোজাহার আলী আরও জানান, জবানবন্দিতে শামসুল ইসলাম ৩শ’ ভুয়া অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। প্রতিটি লাইসেন্সের জন্য তিনি ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা করে নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন। এছাড়া জাল লাইসেন্সের মাধ্যমে প্রায় দেড়শ’ অস্ত্র কেনা হয়েছে বলেও স্বীকার করেছেন।

দুদকের অন্য এক কর্মকর্তা জানান, শামসুল ইসলাম ভুয়া অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়ে প্রায় ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই টাকা দিয়ে বিশাল বাড়ি বানানো ও জমিজমা কেনাসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। কিভাবে ভুয়া লাইসেন্স তৈরি করতেন, এর সঙ্গে আর কারা জড়িত, তাও জানিয়েছেন শামসুল ইসলাম।

দুদক সূত্রে আরও জানা গেছে, শামসুল ইসলাম রংপুর ডিসি অফিসের জেএম শাখার অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে রংপুরের ডিসি অফিসের জেএম শাখার মাধ্যমে কয়েক শতাধিক ভুয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েছেন তিনি। এ সংক্রান্ত খবর বাংলা ট্রিবিউনসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক্স মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার পর  ডিসি অফিসের জেএম শাখায় তল্লাশি চালিয়ে ১৫টি অগ্নেয়াস্ত্রের ভুয়া লাইসেন্স ১১টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের বিপরীতে নগদ ৭ লাখ ১১ হাজার টাকা, এফডিআর ও ২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র উদ্ধার করে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাস বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে দুদক তদন্ত করছে। এরপর র‌্যাব ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে। গত ৬ জুলাই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

ওসি এবিএম জাহিদুল ইসলাম জানান, শামসুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার কোতোয়ালী থানার এসআই মামুন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি তদন্ত করছেন ওই থানার ওসি (অপারেশন) মুখতারুল আলম।

/এমএ/