বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেছেন, ‘বাংলাদেশের চলমান নির্বাচনব্যবস্থায় ভয়ানক শুভংকরের ফাঁক রয়েছে। অতীতের তথাকথিত ফেয়ার ইলেকশন মূল্যায়ন করলে এটি স্পষ্ট হয়। এই অবৈধ নির্বাচনের কারণেই ফ্যাসিবাদ তৈরি হয় এবং চলমান নির্বাচনপদ্ধতির সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে নতুন করে ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে।’
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিকালে যশোরের জেলা পরিষদ মিলনায়তনে শাপলা চত্বরে গণহত্যা, পিলখানা গণহত্যা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার বিচার ও খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে খেলাফত মজলিস যশোর জেলা শাখা আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মামুনুল হক আরও বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা নামক ভারতীয় প্রেসক্রিপশন ভারতকে ফেরত দিতে হবে। বাংলাদেশে আর কোনও বিদেশি রাষ্ট্রের প্রেসক্রিপশন চলবে না। আমরা দিল্লির গোলামি ছিন্ন করেছি ওয়াশিংটনের গোলামি করার জন্য না। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যেকোনও ষড়যন্ত্র, যেকোনও পরিকল্পনা আমরা প্রয়োজনে রাজপথে রক্ত দিয়ে রুখে দেবো।’
রাজপথের সকল ঐক্যকে অবিচ্ছেদ্য রাখার আহ্বান জানিয়ে সকল রাজনৈতিক দলকে আরও উদার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি ঐক্য বিনষ্টের কারণে আবার সেই স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসার সুযোগ পায়, তাহলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ আমাদের ক্ষমা করবে না। পারস্পরিক প্রতিযোগিতা থাকবে, কিন্তু সেই প্রতিযোগিতা যেন বিদ্বেষ ছড়ানোর হাতিয়ার না হয়।’
পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতি নিয়ে দুটি পক্ষের অবস্থানকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে মামুনুল হক একটি সুষ্ঠু সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে পৌঁছানোর আহ্বান জানান। তিনি উভয়পক্ষকে ছাড় দিয়ে খেলাফত মজলিস ঘোষিত মাঝামাঝি পন্থা অবলম্বনের পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী, সংসদ হবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। নিম্নকক্ষে তিন থেকে চারশ আসন হতে পারে এবং উচ্চকক্ষে একশ আসন। নিম্নকক্ষে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত ব্যক্তি সংসদ সদস্য হবেন এবং বাকি সংরক্ষিত আসন রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদ সদস্য পাবে।
বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘দেশবিরোধী এবং ইসলামবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড করলে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে খেলাফত মজলিস কঠোর আন্দোলন ঘোষণা করবে। জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হলেও “জুলাই ঘোষণাপত্র” আজও ঘোষণা হয়নি, যার দায় বর্তমান সরকারকেই নিতে হবে।’ তিনি এই জুলাইয়ের মধ্যেই কাঙ্ক্ষিত জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের দাবি জানান।
মামুনুল হক বলেন, ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা খেলাফত মজলিসকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করেছিলেন এবং আমাদের এমন কোনও নেতা নেই যাদের জেলখানায় নির্যাতন করা হয়নি। এরপরও আমরা কোনোদিন স্বৈরাচারের কাছে মাথানত করিনি।’
খেলাফত মজলিস যশোরের সভাপতি আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক নিয়ামতউল্লাহ, প্রশিক্ষণ সম্পাদক জহিরুল ইসলামসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।