রাবি শিক্ষক জলির ‘আত্মহত্যা’: সহকর্মী আতিকুরকে আসামি করে চার্জশিট

আক্তার জাহান জলি (ছবি- সংগৃহীত)রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আক্তার জাহান জলিকে ‘আত্মহত্যা’ প্ররোচণার মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। চার্জশিটে একমাত্র আসামি করা হয়েছে জলির সহকর্মী আতিকুর রহমানকে।

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজশাহী নগরীর মতিহার থানার উপ-পরিদর্শক ব্রজ গোপাল। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত শেষে গত মাসে (আগস্ট) আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তবে তারিখটি এখন মনে পড়ছে না। মামলাটি এখন বিচারাধীন রয়েছে।’



আকতার জাহান জলির সাবেক স্বামী তানভীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে ব্রজ গোপাল বলেন, ‘মামলাটি তদন্ত করে আতিকুর রহমানের নাম পাওয়া গেছে। চার্জশিটে সেটাই উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমি হলেও এখানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন। আমি একা কিছু করিনি। সবার সিদ্ধান্ত নিয়ে করা হয়েছে। তদন্তে শিক্ষকরাও সহযোগিতা করেছেন। এখানে প্রযুক্তিরও সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে।’

এদিকে জলির সাবেক স্বামী তানভীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটি এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। 
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম জানান, ‘তদন্ত প্রায় শেষের দিকে। আগামী মাসেই তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবেন।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর বিকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের আবাসিক কক্ষের দরজা ভেঙে সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে সেই কক্ষ থেকে শিক্ষকদের উপস্থিতিতে তল্লাশির সময় কীটনাশকের বোতল ও টেবিলে ল্যাপটপের নিচে একটি সুইসাইডাল নোট পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। শারীরিক, মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যা করলাম। সোয়াদকে (আকতার জাহানের ছেলে) যেন ওর বাবা কোনোভাবেই নিজের হেফাজতে নিতে না পারে। যে বাবা সন্তানের গলায় ছুরি ধরতে পারে, সে যে কোনও সময় সন্তানকে মেরেও ফেলতে পারে বা মরতে বাধ্য করতে পারে।’ মৃতদেহ ঢাকায় না পাঠিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে দিতেও অনুরোধ করা হয়েছিল ওই সুইসাইডাল নোটে।

এ ঘটনায় জলির ছোট ভাই কামরুল হাসান বাদী হয়ে পরের দিনই (১০ সেপ্টেম্বর) আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর ৪ নভেম্বর জলির সহকর্মী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আতিকুর রহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৫ নভেম্বর বিকালে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এ সময় পুলিশ দাবি করে, ‘জলির সঙ্গে আতিকুর রহমানের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। এই আত্মহত্যার ঘটনায় তার (আতিকুর) সংশ্লিষ্টতার বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। আতিকুর রহমান চাইলেই জলিকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারতেন।’ 
গ্রেফতার থাকায় গত ২৯ নভেম্বর রাবির সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আতিকুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে গত ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টে শুনানি শেষে আদালত তাকে জামিনের আদেশ দেন।
অন্যদিকে শিক্ষক জলির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তার সাবেক স্বামী এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহমদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠতে থাকে। ওইসব অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৪৭০তম সভায় তানভীর আহমদকে বিশেষ ছুটি দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে অভিযোগ তদন্ত করার জন্য পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন,সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিমা জোহরা হাবিব ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসিম রেজা। তাদেরকে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কমিটি যতদিন পর্যন্ত তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেয়, ততদিন তানভীরকে ছুটিতে থাকতে হবে।

আরও পড়ুন: দক্ষিণ এশিয়ায় চীনা কূটনীতি: আঞ্চলিক গণমাধ্যমে ব্রিকস