দখলে দূষণে মৃতপ্রায় ডাকাতিয়া

ডাকাতিয়া নদীতে প্রভাবশালীরা ঘরবাড়ি তুলেছে

ধীরে ধীরে মরা খালে পরিণত হচ্ছে একসময়কার খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদী।  দখল আর দূষণে ক্রমেই রুগ্ন হয়ে যাচ্ছে, এমনকি নদীর কোলজুড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা ও পৌরসভার বর্জ্যে ঝিমিয়ে গেছে নদীটি।

স্থানীয়রা বলছেন, একসময় দক্ষিণ কুমিল্লার প্রাণ হিসেবে পরিচিত ছিল নতুন ডাকাতিয়া নদী। পাল তোলা নৌকা চলতো। ছিলো লঞ্চ ও মালবাহী ট্রলারের রুট। শুষ্ক মৌসুমেও নদীটি থেকে পর্যাপ্ত পানি পেতো কৃষক। কিন্তু এখন ভরা মৌসুমেও সেখানে টলটলে স্রোত দেখা পাওয়াই ভার! পদে পদে অবৈধ স্থাপনার কারণে নিস্তরঙ্গ জলাশয়ে পরিণত হচ্ছে এক সময়ের দুরন্ত ডাকাতিয়া নদী।

কুমিল্লার সদর দক্ষিণ, লালমাই, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর পাড়জুড়ে ঘাঁটি গেড়েছে অবৈধভাবে দখলদাররা। নদী ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এমনকি অটো রাইস মিল ও ইটের ভাটা স্থাপন করে এলাকার পরিবেশ পর্যন্ত নষ্ট করা হচ্ছে। রাইস মিলের দূষিত বর্জ্য নদীতে ফেলে ভরাট করা হচ্ছে নদীর অংশবিশেষ। এদিকে দীর্ঘদিন খননের কাজ না হওয়ায় পলিতে ভরে গেছে নদীর পেট। ফলে পানি ধারণের জায়গা কমে গেছে নদীতে, অল্প বৃষ্টিতেই তীর উছলে ভেসে যায় দু’কূল। সেচের মৌসুমে নদীর তলানিতেও পানি খুঁজে পাওয়া যায় না। কৃষকরা পানি পাবে কোথা থেকে, স্রোত তুলে চলার মতো নদীর নিজেরই পানি থাকে না।

নদী ভরাট করে গড়ে উঠছে স্থাপনা

নদী এলাকা ঘুরে জানা গেছে, নতুন ডাকাতিয়া নদীটি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বাগমারা বাজার, দৌলতগঞ্জ বাজার এবং মনোহরগঞ্জ বাজারসহ কয়েকটি স্থানে ডাকাতিয়া নদীর বিভিন্ন অংশ দখল হয়ে গেছে। ১৩০ ফুট চওড়া নদীটি কোথাও কোথাও ৬০ ফুটে পরিণত হয়েছে। দৌলতগঞ্জ বাজারের রাজঘাট, গোলবাজার, সামনীর পুল, পশ্চিমগাঁও, সিংজোড়, হামিরাবাগ, কালিয়াপুর এবং মনোহরগঞ্জ বাজার, আমতলী, চিতোশীসহ বিভিন্ন স্থানে ডাকাতিয়ার দু’তীরে দখলদাররা তাণ্ডব চালাচ্ছে। এসব স্থানে অবৈধভাবে বিল্ডিং, মার্কেট ও স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এর ফলে নদীর অস্তিত্বই এখন হুমকির মুখে পড়েছে। নদীটি দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে লাকসামের প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল জলিল বলেন, ডাকাতিয়া নদীকে কেন্দ্র করে লাকসামের দৌলতগঞ্জ বাজারটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। তবে প্রভাবশালী এখন নদী দখল করে নিচ্ছে।

মনোহরগঞ্জের আবদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি বলেন,নদী দূষণ আর দখলের নেতৃত্ব দিয়েছে বিভিন্ন সময়ের ক্ষমতাসীনরা। ডাকাতিয়া নদী এক সময় দক্ষিণ কুমিল্লার আর্শীবাদ ছিলো, এখন তা অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ডাকাতিয়া নদীতে প্রভাবশালীরা ঘরবাড়ি তুলেছে

লাকসাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল হক লাকসামের দৌলতগঞ্জ বাজার এলাকায় নদী দখল হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, নদী দখলকারীদের তালিকা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এগিয়ে এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া পৌরসভার বর্জ্য নদীতে না ফেলার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার (পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) নির্বাহী প্রকৌশলী এবিএম খান মোজাহেদী বলেন, নতুন ডাকাতিয়া নদীর লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ অংশে কিছু দখলের অভিযোগ পেয়েছি। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া নদী খননের বিষয়েও পরিকল্পনা চলছে বলে জানান তিনি।