সোমবার সকালে বুড়ির বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, সারাদিন ধরে মাছ ধরার জন্য আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ যেন ভেঙে পড়েছে নদীর তীরে। কেবল পুরুষরাই নয়, নারী-শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও নেমে পড়েছেন মাছ ধরতে। কারও হাতে খেওয়া জাল, কারও হাতে লাফি জাল, কারও হাতে পলো। অনেকেই কোনও সরঞ্জাম ছাড়া খালি হাতেই নেমে পড়েছেন মাছ ধরতে। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর একটি পরিবেশ বিরাজ করছে শুক নদীর তীরে।
এই উৎসবে আবার কেবল মাছ ধরতেই সবাই ব্যস্ত নেই, কেউ কেউ ব্যস্ত হয়েছেন অন্য কাজেও। বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় বসেছে খাবারের হোটেল, ফলের দোকান, খেলনা ও প্রসাধনীর দোকান। বাইরে থেকে আসা মানুষের মোটরসাইকেল ও সাইকেল রাখার জন্য তৈরি হয়েছে অস্থায়ী গ্যারেজও।
স্থানীয়রা বলছেন, ১৯৮২ সালের দিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য সদর উপজেলার আকচা ও চিলারং ইউনিয়নের সীমানায় শুক নদীতে বুড়ির বাঁধ নামের একটি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। জলকপাটে আটকে থাকা পানিতে প্রতিবছর মৎস্য অধিদফতর বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়ে। এ পোনাগুলো যেন কেউ ধরতে না পারে, তা দেখভাল করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ। পরে শীতের শুরুতে এখানকার মাছ ধরার জন্য জলকপাট উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এভাবেই ওই সময় থেকে প্রতিবছর এলাকাবাসী পালন করে আসছে মাছ ধরার উৎসব।
আকচা গ্রাম থেকে মাছ ধরতে আসা আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের গ্রামে এ দিনটিতে মেয়েরা বাপের বাড়িতে নাইওর আসে। আর মাছ ধরার পর চলে খাওয়ার উৎসব।’
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরাও বছরের এই সময়টির জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন। মাছ কিনতে শুরুর দিন সকাল থেকেই ভিড় করেছেন তারাও। অনেকেই স্থানীয়দের কাছ থেকে মাছ কিনে বাঁধেই বিক্রি করছেন, কেউ কেউ মাছ নিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছেন শহরের বাজারে।
মাছ কিনতে আসা পাইকারী ব্যবসায়ী পরিমল রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভোর থেকে মাছ কিনতে শুরু করেছি। এ পর্যন্ত (সকাল ১১টা) ৩০ হাজার টাকার মাছ কিনতে পেরেছি। ওইসব মাছ বাজারে পাঠিয়ে দিয়েছি। আশা করছি, ভালো লাভ হবে এবার।’
সদর উপজেলার চেয়ারম্যান তৈমুর রহমান বলেন, ‘এ জায়গাটি আমার গ্রামের অনেক কাছাকাছি। এরকম মাছ ধরা উৎসব নিয়ে আমাদের অনেক স্মৃতি। প্রতিবছর এখানে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। শুধু গ্রাম নয়, শহরের মানুষও এখানে মাছ ধরার জন্য ভিড় করেন।’
আরও পড়ুন-
‘টিফিনের সময় পেট ভইরা কলের পানি খাই’
কালীগঞ্জে চুরি-ডাকাতি প্রতিরোধে জঙ্গল পরিষ্কার করলেন ইউএনও