মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বুধবার জামায়াত নেতা ও গাইবান্ধার সাবেক সংসদ সদস্য আবু সালেহ মো. আব্দুল আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ছয় জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন। রায়ের খবর শোনার পরপরই সুন্দরগঞ্জে আনন্দোৎসব শুরু হয়। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উল্লাস প্রকাশ করে মিষ্টি বিতরণ করেন। কিছু জায়গায় আনন্দ মিছিল ও শোভাযাত্রা বের করা হয়। এসময় আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির মাধ্যমে দেশ কলঙ্কমুক্ত হবে, এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বুধবার (২২ নভেম্বর) সকাল থেকে রায় ঘোষণা পর্যন্ত সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রায় শুনতে টেলিভিশনের সামনে ভিড় করেন। ছয় জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হওয়ার পরপরই সুন্দরগঞ্জের মানুষ আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেন।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহরের বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল চত্বরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিষ্টি বিতরণ করেন। পরে এখান থেকে তারা একটি আনন্দ মিছিল বের করেন। মিছিলটি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ড কার্যালয়ের সাবেক কমাণ্ডার এমদাদুল হক বাবলু বলেন, ‘দীর্ঘ ৪৭ বছর পর রায় ঘোষণা হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাসহ সুন্দরগঞ্জ উপজেলার আপামর মানুষ আনন্দিত। আগামী ১০ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জ হানাদারমুক্ত দিবস। তাই ১০ ডিসেম্বরের আগে ঘোড়ামারা আজিজসহ পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করে রায় কার্যকরের দাবি জানাই।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘এ রায়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কলঙ্কমুক্ত হলো। তবে ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর করা হবে, এমনটাই আশা আমাদের।’
মামলার সাক্ষী আবদুর রশিদ সরকার বলেন, ‘রায় ঘোষণা হওয়ায় আজ আমি অনেক খুশি। এ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করে দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানাই আমরা।’
এদিকে, রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মামলার সাক্ষীদের নিরাপত্তায় পুলিশ প্রশাসনের কঠোর নজরদারি দেখা গেছে। সাক্ষীদের বাড়িঘর ও আশপাশের এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিয়ার রহমান জানান, রায় ঘোষণার আগ থেকেই মামলার সাক্ষীদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়। এছাড়া যে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজ মিয়া ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত চার দলীয় জোটের অধীনে গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ-১ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। বাকিদের মধ্যে রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু (৬১) জামায়াতের সুন্দরগঞ্জ থানা শাখার সক্রিয় সদস্য, আব্দুল লতিফ জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় কর্মী এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পর্যায়ের নেতা, আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী মুক্তিযুদ্ধের আগে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সক্রিয় নেতা ছিলেন।
আজিজ ছাড়া বাকি আসামিরা হলো, রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু (৬১), আব্দুল লতিফ (৬১), আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী (৫৯), নাজমুল হুদা (৬০) ও আব্দুর রহিম মিঞা (৬২)। আসামিদের মধ্যে লতিফ ছাড়া সবাই পলাতক। এরাও বিভিন্ন সময়ে জামায়াতের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
বুধবার বেলা ১১টায় বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ রায় ঘোষণা করা হয়। আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে যে কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়েছিল তার মধ্যে গুরুতর অভিযোগটি হলো, তিনি ১৩ জন চেয়ারম্যান-মেম্বারকে ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে যান এবং তাদের তিস্তা নদীর পাড়ে নিয়ে হত্যা করেন।