X
রবিবার, ১২ মে ২০২৪
২৯ বৈশাখ ১৪৩১

পাঁচ জেলায় চলছে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:২১আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:২১

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) তিন শিক্ষার্থী হতাহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাস পোড়ানোর প্রতিবাদে চার দফা দাবিতে বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় পরিবহন ধর্মঘট চলছে। রবিবার (২৮ এপ্রিল) ভোর ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার এ কর্মসূচি পালন করছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় চলছে না গণপরিবহন। একই সঙ্গে চলছে না ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রাঙ্গামাটি, ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-খাগড়াছড়ি, ঢাকা-বান্দরবানসহ বিভিন্ন জেলার গণপরিবহন।

এদিকে, গণপরিবহন সংকটের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব জেলার বাসিন্দাদের। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পরিবহনের জন্য যাত্রীদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। গণপরিবহন না পেয়ে সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে তাদের গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের দাবিগুলো হলো– জেলার বিভিন্ন পোস্ট ও স্টেশন থেকে লাইনম্যানসহ অনেক পরিবহন শ্রমিককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম দিয়ে গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দেওয়া বন্ধ করা; চুয়েটের তিন শিক্ষার্থীর দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে সড়কে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ; কক্সবাজারে তিন মাস আগের একটি সড়ক দুর্ঘটনার জেরে সংশ্লিষ্ট পরিবহনের অন্য একটি বাস স্থানীয় একজন চেয়ারম্যান আটকে যাত্রীদের নামিয়ে দেন এবং এই কাজে একজন স্থানীয় এমপির নাম ব্যবহার করা হয়, এসব বন্ধ করা; অবৈধ ও অনুমোদনহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করা।

চট্টগ্রাম জেলা পরিবহন মালিক গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৪ দফা দাবিতে আজ (রবিবার) ভোর ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি। এ বিষয়ে আজ আমাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের বৈঠক আছে। সেখানে যদি ফলপ্রসূ আলোচনা হয় তাহলে আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসবো। তা না হলে আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।'  

গণপরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি ক্যাবের

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে ৪৮ ঘণ্টার অবৈধ ধর্মঘট আহ্বানের প্রতিবাদে রবিবার গণমাধ্যমে এক বিবৃতি পাঠিয়েছে ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ বা অন্য যারা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তারা সবাই সরকারি দলের নেতা বা কর্মী। আর তারাই বিভিন্ন সময়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দাবি আদায়ের জন্য জনগণকে বারবার জিম্মি করেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’ সরকারদলীয় নেতাকর্মী হিসেবে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় সে ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে তাদের বিরত থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন তারা।

নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রতিনিয়তই সড়ক দুর্ঘটনার কারণে যে সমস্ত মূল্যবান জীবন হারিয়ে যাচ্ছে, তার ক্ষতিপূরণ কি কোনোভাবেই সম্ভব? অথচ তারা অদক্ষ চালক, লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো বন্ধ করলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব হতো। আর এই চিহ্নিত স্বার্থান্বেষী মহল গণপরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য সৃষ্টি, নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদবাজি অব্যাহত রাখতে দেশবাসীকে জিম্মি করে বারবার এ ধরনের ষডযন্ত্রমূলক কাজে জড়িত। এ বিষয়ে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এই মহলটি জনগণের বহুল প্রত্যাশিত নতুন সড়ক পরিবহন আইন সম্পর্কে বিভ্রান্তি ও গুজব ছড়িয়ে আইন বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে।’

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘গণপরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে প্রণোদনা দেওয়ার কারণে তারা বারবার জনগণকে জিম্মি করে এ ধরনের অবৈধ ধর্মঘট ও কর্মবিরতি আহ্বান এবং আইন প্রয়োগে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে বাধা দিচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বরং পুরস্কার হিসেবে তাদের মন্ত্রী, এমপি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা বানাচ্ছে। আর এ খাতে অন্যতম অংশীজন ভোক্তারা কোনও প্রণোদনা তো দূরের কথা আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির সদস্যও হতে পারছে না। ফলে সড়কে নৈরাজ্য থামছে না। সড়ক পরিবহন খাতে যেকোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা মিলে তাদের মতো করে যাবতীয় নীতি প্রণয়ন এবং সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। বিআরটিএ এবং ট্রাফিক পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ করে প্রতিকার পাওয়া কঠিন। কারণ সবকিছুর ওপর পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরাই রাজত্ব করছেন। সড়ক পরিবহন খাতে নৈরাজ্য থামাতে হলে ভোক্তা ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সম অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি।’ গণপরিবহন সেক্টরে যেকোনও দাবি-দাওয়া আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত বলে জানান তারা।

দাবি আদায়ের নামে জনগণকে জিম্মি করে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে দেশকে অচল করার ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে এসে জরুরি ভিত্তিতে কর্মবিরতির নামে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।

বিবৃতিদাতারা হলেন– ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, মো. সেলিম জাহাঙ্গীর ও ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান।  

/এমএএ/
সম্পর্কিত
শান্তি চুক্তি হলেও পাহাড়ে এখনও আস্থা তৈরি হয়নি
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
কেএনএফ দমন অভিযান: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি
সর্বশেষ খবর
মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফলে এগিয়ে মেম্বার মা
মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফলে এগিয়ে মেম্বার মা
‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দেরির অজুহাত হতে পারে না’
‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দেরির অজুহাত হতে পারে না’
গোপালগঞ্জে তৃতীয় রাবেয়া-আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ
গোপালগঞ্জে তৃতীয় রাবেয়া-আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ
জিপিএ-৫ না পাওয়ায় গলায় ফাঁস
জিপিএ-৫ না পাওয়ায় গলায় ফাঁস
সর্বাধিক পঠিত
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে সুপারিশ আর কার্যকর নেই: শিক্ষামন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে সুপারিশ আর কার্যকর নেই: শিক্ষামন্ত্রী
আজ বিশ্ব মা দিবস
আজ বিশ্ব মা দিবস
পাস করা ছাত্রছাত্রীদের ডিপ্লোমায় ভর্তির আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর
পাস করা ছাত্রছাত্রীদের ডিপ্লোমায় ভর্তির আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর
বোন রেহানাকে নিয়ে নিক্সন চৌধুরীর বাসায় শেখ হাসিনা
বোন রেহানাকে নিয়ে নিক্সন চৌধুরীর বাসায় শেখ হাসিনা
ঈদের পর শনিবার স্কুল খোলা থাকছে না
ঈদের পর শনিবার স্কুল খোলা থাকছে না