আগাম আলুর দাম কম, হতাশ নীলফামারীর চাষিরা

নতুন আলু তুলতে মাঠে মাঠে ব্যস্ততা, কিন্তু ভালো দাম না পেয়ে হতাশ চাষিরানীলফামারীতে আগাম আলু চাষ করে লোকসান গুনছেন কৃষকেরা। তারা বলছেন, এবার বীজআলুর দাম ছিল বেশি। তবে দেরিতে হলেও ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু সেই ফলনের সুফল পাচ্ছেন না তারা। বাজারে আগাম এই আলুর দাম ক্রেতাদের পকেটে চাপ তৈরি করলেও মাঠ থেকে কৃষককে সেই আলু বিক্রি করতে হচ্ছে কম দামেই। দালালদের হয়রানি থেকে বাঁচতে ট্রাকে করে ঢাকায় আলু না নিয়ে স্থানীয় পাইকার ও মহাজনদের কাছেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে আগাম জাতের প্রতিকেজি হল্যান্ড সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৭৫ টাকায়। কিন্তু মাঠ থেকে এই আলু ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা কেজিতে কিনছেন পাইকার ও মহাজনরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার ৯ হাজার ১৯ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলুর চাষ হয়েছে। নীলফামারী সদরের টুপামারী, সোনারায়, কচুকাটা, বাবড়ীঝাড় ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী, নিতাই, উত্তর দুরাকটি, জলঢাকা উপজেলার দক্ষিণ দেশিবাইসহ অন্যান্য ইউনিয়নে চাষ হয়েছে এই আলু। এরই মধ্যে তা তুলতেও শুরু করেছেন চাষিরা। এ বছরে এই আলুর ফলন ভালো হলেও ভালো দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা।
জেলার জলঢাকা উপজেলার পাঠানপাড়া ও দক্ষিণ দেশিবাই গ্রামের আলু চাষি আব্দুস সামাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত বছর আগাম হল্যান্ড সাদা আলুর দাম ক্ষেতেই ছিল প্রতিকেজি ৪৫ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এবার ওই একই জাতের আলু বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতিকেজি ৩৫ থেকে ৩৭ টাকায়।’
চাষি দাম না পেলেও বাজারে নতুন আলুর দাম কম নয়আব্দুস সামাদ আরও বলেন, ‘পাইকার ও মহাজনদের কাছে আমরা ভালো দাম পাচ্ছি না। ট্রাকে করে আলু ঢাকায় নিয়ে গেলে দালালের পাল্লায় পড়ে অনেক সময় সর্বস্বান্ত হয়ে ফিরতে হয়। তাই ঝামেলা এড়াতে নগদ যা পাই, তাই নিয়ে খুশি থাকতে হয় আমাদের।’
আরও কয়েকজন আলু চাষি জানান, তাদের কাছ থেকে আলু কিনে প্রায় দ্বিগুণ দামে তা বিক্রি করছেন পাইকার ও মহাজনরা। ক্ষেত্রে ৩৭ টাকার বেশি দাম না উঠলেও বাজারে সেই আলু ঠিকই প্রতিকেজি ৭৫ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে।
একই তথ্য জানান সদরের রামনগর ইউনিয়নের রামনগর হাটের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আকবার আলী। তিনি বলেন, ‘বাজারে কেজিতে ৫৫ থেকে ৭৫ টাকা দরে আলু বিক্রি হচ্ছে।’
পাইকাররা আবার কম দামে আলু কিনে বেশি দামে বিক্রির ক্ষেত্রে পরিবহন খরচসহ বিভিন্ন খরচকে দায়ী করেন। পাইকার আবু তাহের বলেন, ‘শুধু আলু কেনার খরচই না, আমাদের তো আরও খরচ আছে। পরিবহন খরচ গুনতে হয় আমাদের। জমি থেকে আলু তোলার খরচও আমাদেরই দিতে হয়। তাই মাঠ থেকে কম দামে আলু কেনা ছাড়া উপায় নেই।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. কেরামত আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে আগাম জাতের আলু বাজারে উঠতে দেরি হয়েছে। অন্যদিকে, বাজারে দেশি জাতের আলুও উঠতে শুরু করেছে। তাই নতুন আলুর দাম কিছুটা কম।’