ঝালকাঠিতে বাদীকে ভয় দেখিয়ে থানায় ডেকে এজাহারে স্বাক্ষর

ঝালকাঠি

ঝালকাঠির নলছিটিতে গ্রামীণফোন টাওয়ারের ব্যাটারি চুরির ঘটনা ধামাচাপা দিতে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে লুকোচুরির অভিযোগ উঠেছে। টাওয়ারের ব্যাটারি চুরি করে পালানোর সময় একটি পিকআপ ও ৯ পিস ব্যাটারিসহ স্থানীয় জনতার হাতে চোরাই চক্রের এক সদস্য আটক হওয়া সত্ত্বেও কোনো মামলা ছাড়াই ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে বাদীকে থানায় ডেকে প্রধান অভিযুক্তকে বাদ দিয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা অভিযোগও রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। ঘটনার ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও কাউকে আটক করতে পারেনি তারা।















স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ৯ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের গোপালপুর এলাকায় গ্রামীণফোন টাওয়ারের গ্রিল ভেঙে ২ লাখ টাকা মূল্যের ৯টি ব্যাটারি চুরি করে পালাচ্ছিল একটি চোর চক্র। চুরি করে ব্যাটারি নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় জনতা ধাওয়া করে আলী ড্রাইভার নামের একজনকে চোরাই ব্যাটারি ও পিকআপসহ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। তবে পুলিশ আলীকে ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়।
এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে ওই টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী মধ্য গোপালপুর গ্রামের মো. সুলতান হাওলাদারকে ভয় দেখিয়ে গত ২০ জানুয়ারি থানায় ডেকে এনে বাদী সাজিয়ে আলী ড্রাইভারকে বাদ দিয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করান নলছিটি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আনোয়ার হোসেন।
মামলার বাদী মো. সুলতান হাওলাদার বলেন, ‘ঘটনায় দিন চোর চক্রের একজন সদস্যকে একটি পিকআপসহ স্থানীয় লোকজন আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এর কিছুদিন পর উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আনোয়ার হোসেন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের ভয় দেখিয়ে আমাকে থানায় ডেকে নিয়ে একটি কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামলায় কাকে আসামি করা হয়েছে সে ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। এমনকি মামলার এজাহারে বাদীর নাম ঠিকানার নিচে লেখা মোবাইল নম্বরটিও আমার নয়।’
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চুরির ঘটনায় আটক হওয়া পিকআপের (বরিশাল মেট্রো-ন-১১-০৪৯০) মালিক মো. জামাল হাওলাদার একজন ভাঙারি ব্যবসায়ি এবং বরিশাল মহানগর বিএনপির প্রথম সারির নেতা। তিনি বাকেরগঞ্জের বেহারিপুর গ্রামের আলী আকব্বর হাওলাদারের ছেলে। চোরাই ব্যাটারিসহ আটক হওয়া আলী ড্রাইভার জামাল হোসেনের দোকানের কর্মচারী। আলীকে আটকের খবর পেয়ে ওই দিনই জামাল হাওলাদার আত্মগোপনে চলে যান।
অভিযোগ রয়েছে, জামাল হাওলাদার ভাঙারি ব্যবসার আড়ালে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িত। সে দীর্ঘদিন ধরে ভাঙারি মালের আড়ালে চোরাই ব্যবসা করে আসছে। এরআগেও চোরাই বৈদ্যুতিক তারসহ আটক হওয়ার পর দীর্ঘদিন জেলহাজতে ছিলেন তিনি।
তবে জামাল হাওলাদার একটি চুরি মামলায় জেলহাজতে থাকার কথা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করলেও গ্রামীণফোন টাওয়ারের ব্যাটারি চুরির সঙ্গে কোনোভাবে তিনি জড়িত নন বলে জানান।
মামলার ব্যাপারে নলছিটি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে ওসি স্যার ভাল বলতে পারবেন।’
নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, চোরাই ব্যাটারিসহ আলী ড্রাইভারকে আটকের পর কেউ মামলা না করায় ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতে চালান করা হয়। পরবর্তীতে সুলতান হাওলাদার নামের একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় মামলা করলে আলী ড্রাইভারকে ওই মামলায় ‘শ্যোন এরেস্ট’ দেখানো হয়েছে।
তবে আটক আলী ড্রাইভারকে কেন ওই মামলায় এজাহারনামীয় আসামি করা হল না; জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কোন উত্তর দিতে পারেননি।