গুতুম মাছের কৃত্রিম প্রজননে সফল নোবিপ্রবি’র গবেষকরা

নোবিপ্রবি’র গবেষকরাপ্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে বর্তমানে বিলুপ্তির পথে থাকা গুতুম (বেতরঙ্গী/ পুইয়া/ বুইচ্ছা)  মাছের কৃত্রিম প্রজননে সাফল্য অর্জন করেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মৎস্য ও সামুদ্রিক বিজ্ঞান বিভাগের একদল গবেষক। তারা জানিয়েছেন, কৃত্রিম প্রজনন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং নতুন পোনাগুলোর স্বাস্থ্য ও বেঁচে থাকার হারও সন্তোষজনক। বউরাণী (পুতুল/ রাণী/ দাড়ি মাছ)  মাছের কৃত্রিম প্রজনন নিয়েও কাজ করছেন তারা। 

ন্যাশনাল এগরিকালচারাল ট্রেনিং প্রোগ্রাম (এনএটিপি)-২ প্রকল্পের অর্থায়নে এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন মৎস্য ও সামুদ্রিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শ্যামল কুমার পাল।

গবেষণা কর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান,বউরাণী ও গুতুম মাছের কৃত্রিম প্রজননের উদ্দেশ্যে গত বছরের আগস্ট থেকে গবেষণা প্রকল্প হাতে নেন তারা। কুমিল্লা জেলার নাঙলকোট উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুউদ্দিন কালুর মালিকানাধীন বিসমিল্লাহ মৎস্য বীজ উৎপাদন কেন্দ্র ও খামারে তারা কার্যক্রম শুরু করেন।এরপর বৃহত্তর নোয়াখালী, ময়মনসিংহ ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন প্রাকৃতিক জলাশয় ও হাওর থেকে  ব্রুডফিশ (মা ও বাবা মাছ) সংগ্রহ করে দীর্ঘ সময় ধরে পরিচর্যার মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজননের জন্য প্রস্তুত করা হয়। পূর্ণ প্রস্তুতি শেষে গত ২৮ এপ্রিল ব্রুডফিশগুলোকে বিভিন্ন উদ্দীপক হরমোন প্রয়োগ করা হয়। এভাবে নতুন পোনার জন্ম হয়।

বর্তমানে গবেষণা দলটি গুতুম ম্যাচের রেণু পোনার চাষ ও লালন-পালন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে।তবে গবেষক দল আশা করছেন, শিগগিরি বউরাণী মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও রেণুপোনা লালন-পালন প্রযুক্তি উদ্ভাবনেও সফল হবেন তারা।ছোট মাছের কৃত্রিম প্রজননে সফল নোবিপ্রবি’র গবেষকরা

গবেষণা কার্যক্রমের ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যাপক শ্যামল কুমার পাল বলেন,নোবিপ্রবি’র মৎস্য ও সামুদ্রিক বিজ্ঞান বিভাগ বাংলাদেশের মৎস্য গবেষণা সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমার দল নিয়ে বিভিন্ন দেশীয় ছোট মাছ বিপন্ন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য গবেষণা প্রকল্প শুরু করি এবং সফলতা অর্জন করি। ভবিষ্যতেও আমরা এই গবেষণা কার্যক্রম পুরোদমে চালিয়ে যাবো।’

তিনি আরও বলেন,‘সফল গবেষণা ও মানুষের সচেতনতাই পারে দেশীয় ছোট মাছকে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে।’

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষকদের আবিষ্কারের সাফল্যে আমরা আনন্দিত।এই গবেষণার ফলাফল দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাই। যাতে করে জাতি এর সুফল ভোগ করতে পারে।’

এই গবেষণা প্রকল্পে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেছেন নোবিপ্রবি’র মৎস্য ও সামুদ্রিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব ভক্ত সুপ্রতিম সরকার এবং বিসমিল্লাহ মৎস্য বীজ কেন্দ্রের  টেকনিশিয়ান জনাব উত্তম বসু। এছাড়া রয়েছেন  বিভাগে অধ্যায়নরত মাজহারুল ইসলাম রাজু, মো. বোরহান উদ্দীন আহমেদ সিয়াম, তৌফিক হাসান, মামুনুর রশিদ, মিঠুন দেবনাথ, নাজমুল হাসান, সৃজন সরকার ও কাজী ফরিদুল হাসান।