চা-বিক্রেতা থেকে ‘ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’র মালিক!

সন্যামত ডায়াগনস্টিক সেন্টার (ছবি- প্রতিনিধি)

বছর পাঁচেক আগে আগৈলঝাড়া উপজেলা হাসপাতালের সামনে চা বিক্রি করতেন নজরুল সন্যামত। এর দুই বছর পর ৫০ শয্যার ওই হাসপাতালের সামনে একটি ওষুধের দোকান খুলে বসেন তিনি। এরও প্রায় বছর খানেক পর ওই ওষুধের দোকানের পেছনে একটি কথিত প্যাথলজি সেন্টার খোলেন নজরুল। দিনে দিনে সেই প্যাথলজি সেন্টার হয়ে উঠে ‘ডায়াগনস্টিক সেন্টার’। স্থানীয়দের অভিযোগ, আগৈলঝাড়া উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের ম্যানেজ করে এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী ভাগিয়ে আনা হতো এবং ভুয়া টেকনোলজিস্ট দিয়ে সেসব রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে টাকা বাগিয়ে নেওয়া হতো।


গত সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে ‘সন্যামত ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামের ওই কথিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেন স্থানীয়রা। এদিন রাতে স্থানীয়রা ‘সিকদার ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামের আরও একটি কথিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেন। পরে ‘সন্যামত ডায়াগনস্টিক সেন্টার’-এর ব্যাপারে খোঁজ নিলে এসব তথ্য বের হয়ে আসে।
স্থানীয় বাসিন্দা শামীম গাজী বলেন, ‘সন্যামত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সার্টিফিকেটধারী কোনও প্যাথলজিস্ট ছিল না। আগৈলঝাড়া উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের ম্যানেজ করে এখানে রোগী ভাগিয়ে আনা হতো। এরপর ভুয়া প্যাথলজিস্ট দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভুয়া ইসিজি রিপোর্ট দেওয়া হতো। একই কাজ করতো সিকদার ডায়াগনস্টিক সেন্টারও।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, আগৈলঝাড়া উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানেন, সন্যামত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুয়া লোকজন দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে ইসিজি রিপোর্ট দেওয়া হয়। এরপরও তারা জেনে-বুঝে এখানে রোগীদের পাঠান।
রাকিব সরদার নামে একজন বলেন, ‘আমার রোগ নির্ণয়ের কথা বলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে ভুল রিপোর্ট দিয়েছে সন্যামত ডায়াগনস্টিক সেন্টার। রিপোর্ট মতো ওষুধ খেয়ে কোনও কাজ হয়নি। পরবর্তী সময়ে অন্য হাসপাতালে পরীক্ষা করালে জানতে পারি, আমার রোগ জটিল আকার ধারণ করেছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবারও (১৮ সেপ্টেম্বর) আগৈলঝাড়া উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসক জ্যোতি রানী বিশ্বাস এক রোগীকে কথিত সন্যামত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার জন্য পাঠান। এ ব্যাপারে জ্যোতি রানী বিশ্বাস দাবি করেন, ‘সন্যামত ডায়াগনস্টিক সেন্টার যে ভুয়া টেকনোলজিস্ট দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে, আমার জানা ছিল না। আমি না জেনে এক রোগীকে ওই ক্লিনিকে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিলাম।’
এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক ডা. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আগৈলঝাড়ায় গড়ে ওঠা সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবৈধ। বরিশাল জেলা সিভিল সার্জনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন পর পর এসব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে আসেন। কিন্তু তাদের পরিদর্শনে আসার খবর আগে ভাগে পেয়ে ওই সব ভুয়া প্রতিষ্ঠানে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায় সংশ্লিষ্টরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের হাত-পা বাঁধা। অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের জন্য বার বার ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) ও পুলিশকে বলা হলেও তারা এখনও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।’

জেলা সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, 'আগৈলঝাড়ায় ভুয়া এবং নিম্নমানের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের দৌরাত্ম্যের অভিযোগের বিষয়ে গত সপ্তাহেও অভিযান চালানো হয়েছে। শিগগিরই ফের অভিযানে যাবে। এছাড়া, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকেও এ বিষয়ে সচেতন থেকে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।'