বিজয় নিশান এক দিন পর উড়েছিল কিশোরগঞ্জে

স্মৃতিসৌধ ‘বিজয় ৭১’ (ছবি– প্রতিনিধি)

সারাদেশের মানুষ বিজয়ের আনন্দ উপভোগের একদিন পরে ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের আকাশে বিজয় নিশান উড়ে। ১৬ ডিসেম্বর গভীর রাত পর্যন্ত এ জেলায় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড লড়াই হয়েছে, রক্ত ঝরেছে।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৭ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ মুক্ত দিবস। ৪৭ বছর আগে এই দিনে বাংলার মুক্তিকামী সূর্যসেনারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে কিশোরগঞ্জকে মুক্ত করে উত্তোলন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। এদিন স্বজন হারানোর ব্যথা ভুলে হাজার হাজার উৎফুল্ল জনতা রাস্তায় নেমে আসে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে আকাশ প্রকম্পিত করে তুলে সেই আনন্দ।

তারা আরও জানান, বাংলার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের জন্মভূমি এই কিশোরগঞ্জে। এ ছাড়া, বীর প্রতীক সেতারা বেগম, বীর প্রতীক কর্নেল হায়দার, বীর প্রতীক নূরুল ইসলাম খান পাঠানের বাড়িও কিশোরগঞ্জে, যাদের নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ গর্ব করে।

১৬ ডিসেম্বর সারারাত পাকিস্তানি বাহিনীর দোসরদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই চলে। অবশেষে ১৭ ডিসেম্বর বিজয়ের কাঙ্খিত মুহূর্তটি আসে। শহরের চারদিক থেকে চতুর্মুখী আক্রমণে ১৭ ডিসেম্বর সকাল ৮টার দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর দোসরদের হটিয়ে মুক্ত করেন কিশোরগঞ্জকে।

১৭ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে শহরের পূর্ব দিক দিয়ে কমান্ডার কবীর উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে প্রথমে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল কিশোরগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে। এর পর পরই অন্য প্রবেশপথ দিয়েও মুক্তিযোদ্ধারা দলে দলে শহরে প্রবেশ করতে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযানের খবরে মুক্তিকামী জনতাও উল্লাস করে স্বাধীনতার শ্লোগান দিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। সামান্য প্রতিরোধের পরই পাকবাহিনীর এদেশীয় দোসররা আত্মসমর্পণ করে। শহরের শহিদী মসজিদ প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনীর দোসররা।

স্থানীয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এদেশীয় দোসরদের গভীররাত পর্যন্ত গোলাগুলি চলতে থাকে। কিন্তু আমরা কোনও নির্দেশ ছাড়া ভেতরে প্রবেশ করতে পারছিলাম না। যখন সিগন্যাল পাই, তখন আমরা চারদিক থেকে পাক-দোসরকে ঘেরাও করে ফেলি। এরপর ভোরের দিকে ধীরে ধীরে ভেতরে প্রবেশ করি এবং সব পাকসেনা ও আলবদরদের আত্মসমর্পণ করাতে বাধ্য করি।

কিশোরগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. আসাদউল্লাহ বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আমরা মুক্তিযোদ্ধারা কিশোরগঞ্জ শহরকে চারিদিক থেকে ঘেরাও করি। কিন্তু তখনও পাকসেনারা, আলবদর বাহিনীরা আত্মসমর্পণ করেনি। পরেরদিন ভোরে সব রাজাকারসহ পাক দোসররা আত্মসমর্পণ করলে আমরা ভেতরে প্রবেশ করে কিশোরগঞ্জকে হানাদারমুক্ত করি।’