‘চাপে পড়ে’ সাক্ষাৎকার দিতে এলেও মিয়ানমারে ফেরত যেতে চান না রোহিঙ্গারা

উখিয়ার বালুখালী এলাকায় রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী বসতি। ছবি: বাংলা ট্রিবিউনজাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়ের প্রতিনিধিদের ‘চাপের’ মুখে অবশেষে সাক্ষাৎকার দিতে এলেন প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত কয়েকজন রোহিঙ্গা। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট)  দুপুর দেড়টার দিকে আট-দশ জন রোহিঙ্গা টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে নির্ধারিত স্থানে সাক্ষাৎকার দিতে আসেন। তবে তারা সবাই জানিয়েছেন, এখনই তারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে চান না। টেকনাফের জাদিমোরা শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ খালেদ হোসেন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মোহাম্মদ খালেদ হোসেন জানান, আজ সকাল থেকে মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে মতামত জানানোর কথা ছিল তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে নির্ধারিত স্থানে সাক্ষাৎকার দিতে আসেননি তাদের কেউ। পরে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়ের প্রতিনিধিরা তাদের সাক্ষাৎকার দিতে আসার জন্য উৎসাহিত করার চেষ্টা করেন। দুপুর দেড়টার পর আট থেকে দশ জন সাক্ষাৎকার দিতে আসেন।

তিনি আরও জানান, যারা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তাদের সবাই মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

সাক্ষাৎকার দিয়ে বের হয়ে আসার পর আবু সিদ্দিক নামের এক রোহিঙ্গা জানান, ‘আমরা বর্তমান অবস্থায় মিয়ানমারে ফেরত যেতে চাই না। মিয়ানমারে আমাদের ওপর নির্যাতনের বিচার করতে হবে, আমাদের সম্পত্তি ফেরত দিতে হবে, আমাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। এরপরই আমরা সেখানে ফেরত যাবো। এই কথাই আমরা সাক্ষাৎকারে বলেছি।’

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু করে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন। পুরনো ও নতুন মিলিয়ে এখন উখিয়া-টেকনাফের ৩০টি শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। জাতিগত নিধন ও গণহত্যার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়।

আরও পড়ুন- 

সাক্ষাৎকার দিতে আসেননি প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গারা

‘রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা ও সুরক্ষার আশ্বাস না পেলে সাক্ষ্য নেওয়া কঠিন হবে’