বৃদ্ধাকে নির্যাতনের অভিযোগ, ওসি ও কনস্টেবলের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে

বরিশাল

রাশিদা বেগম নামের এক বৃদ্ধাকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বরিশালের উজিরপুর থানার ওসি শিশির কুমার পাল ও কনস্টেবল জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে। জানা যায়, থানার সামনের একটি দোকানে বসে বৃদ্ধার কান্নার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে তা গণমাধ্যম ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। এরপর এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) নাইমুর হককে প্রধান করে গঠিত কমিটির সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন (বাকেরগঞ্জ) ও বরিশাল জেলা পুলিশের পরিদর্শক (প্রশিক্ষক) মাসুম বিশ্বাস।

শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে তদন্ত কমিটি। তবে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাইমুর হক। তিনি জানান, তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ভুক্তভোগী রাশিদা বেগম জানান, তার মূল বাড়ি মাদারীপুর। তিনি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ইচলাদি গ্রামের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। গত আগস্ট মাসে তার সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে তার কাছে মাদারীপুর থেকে বেড়াতে আসে। ১৩ আগস্ট তার মেয়েকে বাসায় এক পেয়ে ৬ বখাটে অপহরণ করে। এই ঘটনায় ১৪ আগস্ট বাদী হয়ে উজিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়েরের জন্য লিখিত অভিযোগ জমা দিলে ওসি শিশির কুমার পাল মামলা নেননি। ১৯ আগস্ট মেয়েকে উদ্ধার করে তার হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেসময় অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বললে ওসিকে তাকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু থানা থেকে মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফেরার পথে আবারও অপহরণ করা হয় মেয়েকে। রাতেই তা ওসিকে জানালে তিনি নতুন করে অভিযোগ করতে বলেন। ফের অভিযোগ লিখে দিলে তা ছিঁড়ে ফেলেন ওসি। অভিযোগপত্র পছন্দ না হওয়ায় এভাবে তিনবার অভিযোগ ছিঁড়ে ফেলেন ওসি।

তিনি আরও জানান, আগস্টের শেষের দিকে অপহরণকারীরা তার বাসায় তালা লাগিয়ে দেয়। পুলিশের কাছ থেকে কোনও সহায়তা না পেয়ে ডিআইজির কাছে অভিযোগ করা হয়। পরে ডিআইজি ওসিকে বাসা থেকে মালামাল উদ্ধার করার নির্দেশ দেন।

নির্যাতনের প্রসঙ্গে রাশিদা বেগম বলেন, ‘ডিআইজির কাছে অভিযোগ দেওয়ায় ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ওসি শিশির কুমার পাল আমাকে থানায় ডেকে নেন। আমি থানায় গেলে তিনি থানার বাইরের কোনও চায়ের দোকানে গিয়ে বসতে বলেন। বাচ্চু মিয়ার চায়ের দোকানে গিয়ে বসি। পরে কনস্টেবল জাহিদুল ইসলাম আমাকে ধমকের সুরে বাড়ির ঠিকানা জানতে চান এবং মারধর করেন, এরপর গালে সিগারেটের আগুন চেপে ধরেন। তারপর আমি ওসি শিশির কুমার পালের রুমে যাই এবং ঘটনাটি তাকে জানাই। এতে ওসি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে আমাকে গালাগাল করেন এবং থাপড়াতে থাপড়াতে রুম থেকে বের করে দেন।’  

এ ব্যাপারে পুলিশ কনস্টেবল জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বাচ্চুর চায়ের দোকানের ভেতরে গিয়ে দেখি, ওই মহিলা ওসিকে স্যারকে গালাগাল করছেন। সেখান থেকে তাকে তাড়ানোর জন্য আমিও গালাগাল করি ও মারধরের ভয় দেখাই। আমি তার গায়ে কোনও হাত দেইনি। ওই নারী বিভিন্ন স্থানে ওসি স্যার ও আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন।’  

অভিযোগ অস্বীকার করে উজিরপুর মডেল থানার ওসি শিশির কুমার পাল বলেন, ‘ওই নারী একজন খারাপ লোক ও মামলাবাজ। তার মেয়েকে অপহরণের কোনও ঘটনা ঘটেনি। আমি কোনও মেয়ে উদ্ধার করে দেইনি। তার মালামাল উদ্ধার করে ফেরত দেওয়ার জন্য ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তাকে থানায় ডেকে আনা হয়।’

বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। এজন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কমিটি তাদের কাজ শুরু করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’