রংপুর-৩ উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে

ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের লাইনরংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তবে সকালে ভোটগ্রহণের শুরুতে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা গেছে। সকাল ৯টার আগ মুহূর্তে কামারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০ থেকে ১১ জন ভোটার দেখা গেছে। এছাড়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ভোটকেন্দ্রে দেখা গেছে পাঁচজন ভোটার।কামারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার রেজাউল করিম বলেন, ‘সবকিছু প্রস্তুত। সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।’ একযোগে ১৭৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে।
ভোটগ্রহণ উপলক্ষে ইতোমধ্যেই সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে রংপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন অফিস। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার সব কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। আর শুক্রবার (৪ অক্টোবর) কেন্দ্রে-কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বাকি নির্বাচনি সরঞ্জাম। শুক্রবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে উপ-নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রংপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম শাহাতাব উদ্দিন। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান রংপুরে কর্মরত র‌্যাব-১৩ এর কমান্ডার রেজা ফেরদৌস আহমেদ।

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ (সদর) আসনের ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪১ হাজার ২২৪ জন। এই নির্বাচনে সবকেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেওয়া হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নেওয়া হয়েছে চার স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সব কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টিম। ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বও তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সব কেন্দ্রে আয়োজন করা হয় মক (ডামি) ভোটের।’
ভোটগ্রহণের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা শাহাতাব উদ্দিন বলেছেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কোনও ধরনের সহিংসতা বা অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে কমিশন সদা সতর্ক। একটি কন্ট্রোল সেন্টার খোলা হয়েছে, যেখান থেকে পুরো আসনের নির্বাচনি পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। কোনও কেন্দ্রে ভোটার কিংবা প্রার্থীদের এজেন্টকে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে সে কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হবে।’
উল্লেখ্য, সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের স্বার্থে প্রতিটি কেন্দ্রে চারজন পুলিশ, আনসার সদস্য ছয় জন, দুই জন মহিলা আনসার নিয়োজিত করা হয়েছে। পুরো আসনে ১৮ প্লাটুন বিজিবি’র পাশাপাশি র‌্যাবও টহল দেবে। এছাড়া ২৪ জন ম্যাজিট্রেট পুরো নির্বাচনি আসনে দায়িত্ব পালন করবেন।
জরুরি প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করবে র‌্যাব
আলাদা আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১৩-এর কমান্ডার রেজা ফেরদৌস আহমেদ বলেন, র‌্যাবের ২০টি ইউনিট আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভ্রাম্যমাণ দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হলে র‌্যাব হেলিকপ্টারের মাধ্যমে দ্রুত সেখানে পৌঁছে যাবে।’ র‌্যাব সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে বলে তিনি জানান।
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৭৬টি
স্থানীয় নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রংপুর-৩ উপ-নির্বাচনের পুরো আসনের ১৭৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৭৬টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ আসন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪৯টি কেন্দ্রকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। এসব কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নজর থাকবে। তবে, এসব কেন্দ্রের ক্ষেত্রে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ শব্দটির পরিবর্তে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ শব্দ ব্যবহার করতে চান রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহাতাব উদ্দিন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমরা ৭৬টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে এবং এর মধ্যে ৪৯টিকে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছি।’
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ভোটকেন্দ্র উল্লেখ্য, রংপুর-৩ আসনে জাতীয় সংসদ উপ-নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে লাঙল মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম এরশাদের পুত্র রাহগীর আল মাহী ওরফে সাদ এরশাদ, বিএনপির প্রার্থী রিটা রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী এরশাদের ভাতিজা মকবুল শাহরিয়ার ওরফে আসিফ শাহরিয়ারসহ ৬ জন প্রার্থী। অন্যরা হলেন, গণফোরামের কাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল ও এনপিপি’র শহিদুল আলম।
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের অংশ হিসেবে শুক্রবার সকাল থেকেই পুরো নির্বাচনি এলাকায় যানবাহন চলাচল সীমিত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যম ও অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া যেকোনও বেসরকারি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বহিরাগতদের এলাকা ত্যাগের নির্দেশের পাশাপাশি বাইরের কাউকে নির্বাচনি এলাকায় প্রবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।