রাজশাহীতে আইসোলেশনে চারজন, করোনার চিকিৎসাসেবার পরিকল্পনা চূড়ান্ত

রামেক

রাজশাহীতে এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোনও রোগী শনাক্ত হননি। তবে  জ্বর-সর্দি-কাশির মতো করোনার উপসর্গ নিয়ে রাজশাহীর সংক্রমণ ব্যাধি (আইডি) হাসপাতালে চারজন রোগী এখন আইসোলেশনে রয়েছেন। তারা করোনা আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষা করা হবে। এছাড়াও তিনজনকে রামেক হাসপাতালের পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনার চিকিৎসার জন্য গঠিত কমিটির নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) সকালে এ তথ্য জানানো হয়।

কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক আজাদ বলেন, আইসোলেশনে থাকা চারজন রোগীর মধ্যে তিনজন নতুন। এদের একজন রাজশাহী শহরের। একজন এসেছেন রাজশাহীর চারঘাট থেকে। অন্যজন এসেছেন পাবনা থেকে। তাদের প্রত্যেকে আলাদা আলাদা করে রাখা হচ্ছে। এদের বয়স যথাক্রমে ৩৫, ২৫ ও ১৮। প্রত্যেকেই মাস্ক পরে আছেন। চিকিৎসকরা সুরক্ষিত পোশাক পরছেন।

তিনি বলেন, করোনা ওয়ার্ডের চারজনের মধ্যে একজন কিশোরী। তার বাড়ি রাজশাহী চারঘাটে। গত ১০ দিন ধরে সে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত ছিল। তবে এখন অনেকটাই সুস্থ। চারঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি থেকে তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্ত করোনা পরীক্ষা না করে এলাকাবাসী তাকে গ্রামে ঢুকতে দিচ্ছে না। এ কারণে তাকে রাজশাহীতে পাঠানো হয়।

তিনি আরও জানান, আইসোলেশনে থাকা চারজনের মধ্যে একজন প্রচণ্ড আতঙ্কিত। তাকে কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। ওষুধও দিতে হচ্ছে। আতঙ্ক মাঝামাঝি জায়গায় থাকলে ভালো। আতঙ্ক না থাকলে মানুষ অসচেতন থাকে, তখন ভাইরাস ছড়াতে পারে। কিন্তু আতঙ্ক তীব্র হলে রোগীগুলো সমস্যায় পড়েন। এত তীব্র আতঙ্ক আমাদের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

ডা. আজিজুল হক আজাদ বলেন, মঙ্গলবারের মধ্যেই এই চারজন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হবে। কেউ যদি আক্রান্ত শনাক্ত হন তবে তাকে কখনোই সন্দেহভাজন রোগীর সঙ্গে রাখা হবে না। আমরা বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতাল অধিগ্রহণের চেষ্টা করছি। এটা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কেউ শনাক্ত হলে তাকে প্রাইভেট হাসপাতালেই রাখা হবে। সেখানে কারও অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে গেলে তাকে নিয়ে আসবো রামেক হাসপাতালের ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে। এখানে কেউ সংকটাপন্ন হয়ে গেলে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হবে।

ডা. আজাদ বলেন, জ্বর-সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আরও তিনজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে স্থাপিত পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডে রেখে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হবে না তাদের করোনা ওয়ার্ডে পাঠিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।

পরিকল্পনা চূড়ান্ত উল্লেখ করে ডা. আজাদ বলেন, চিকিৎসকদেরও টিম করা হয়েছে। একজন চিকিৎসক টানা সেবা দিতে পারবেন না। আক্রান্ত রোগীর সাতদিন চিকিৎসা করার পর তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে পাঠাতে হবে। চিকিৎসক-নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়েছে। তারা তাদের কর্তব্যস্থল থেকে কীভাবে ফিরবেন, কোথায় কীভাবে থাকবেন- প্রত্যেকটা বিষয় মাথা রাখা হয়েছে। এই মুহূর্তে ১৫টি ভেন্টিলেটর রয়েছে। আরও পাঁচটি আসতে পারে।

রামেক হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, করোনা পরীক্ষার জন্য উপজেলা পর্যায় থেকে রোগী রাজশাহীতে আসার দরকার নেই। কারণ, তিনি আক্রান্ত হলে তা আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গ্রামে কারও জ্বর-সর্দি-কাশি-শ্বাসকষ্টের মতো করোনার উপসর্গ দেখা দিলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই খবর দিতে হবে। সেখান থেকেই তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে।