শনিবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় ফুলবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের বারাইপাড়া এলাকায় জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম ক্যানেল খননের কাজের উদ্বোধন করেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল হক সুমন, ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টনসহ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা।
তবে এই খনন কাজের বিরোধিতা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ওপর দিয়ে ক্যানেল খনন কার্যক্রমে বাধা দেন প্রায় অর্ধশত জমির মালিক। তাদের দাবি- ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ওপর দিয়ে ১৮ ফিট ক্যানেল নির্মাণ করলে তাদের অনেক ক্ষতি হবে। জমিগুলোতে আবাদ হবে না এবং ক্যানেল পানিতে ধসে অন্য জমিরও ক্ষতি হবে।
এই বাধায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জমির মালিকদের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এই হাতাহাতির ঘটনায় অজ্ঞান হয়ে পড়েন জমির মালিক সালেহা বেগম ও আহত হন হারুন-উর রশিদ। এছাড়াও অনেক জমির মালিক মারধরের শিকার হন।
জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য জমির মালিকরা দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরে ক্যানেল খনন কার্যক্রম শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে ক্যানেলটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ওপর দিয়ে নির্মিত হওয়ার শুরুতেই আপত্তি জানান জমির মালিকরা। এরপরে পানি উন্নয়ন বোর্ড ক্যানেল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এর এক বছর পর প্রশাসন হুট করে ক্যানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। শনিবার ক্যানেল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।
এ সংবাদের পরপরই ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মানববন্ধন করে এবং উদ্বোধনকালে প্রশাসনের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করে। তবে প্রশাসন কাজ বন্ধ না করে তাদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেয়। এমন কথায় তারা ক্যানেল করতে বাধা প্রদান করে।
বারাইপাড়া গ্রামের তসিমউদ্দিনের ছেলে ফজর আলী বলেন, আমার দুই ছেলে তাদেরকে মাদ্রাসায় পড়াই। টাকা দিতে পারছি না। আর এই সময়েই আমার অনেক বড় ক্ষতি হলো। আমার জমি নাই, ভ্যান চালিয়ে খাই। এখন আমার যে ফসল নষ্ট হলো, আমাকে আগে থেকে কেউই কিছু জানায়নি। আমার যে ক্ষতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ চাই। আর মাত্র ২০ দিন পরেই ধান উঠতো। ক্ষতিপূরণ চাওয়াতে আমাকে মারধর করা হয়েছে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সামনেই।
একই গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, আমরা চাই না এই ক্যানেল হোক। আমার ১০ কাঠা জমিতে বেগুন আবাদ করেছি, আর এই বেগুন ক্ষেত নষ্ট করে ক্যানেল করা হচ্ছে। আগে থেকে বলা হয়নি, এমনকি কোনও ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়নি।
সানোয়ারা বেওয়া বলেন, আমার কিছু নাই, শুধু জমিটুকুই আছে। আমরা ঠিকভাবে জানিও না যে এই ক্যানেল হবে। আগে যেদিক দিয়ে ক্যানেল ছিল, সেদিক দিয়ে না করে আবাদি জমির ওপর দিয়ে খনন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর ক্ষতিপূরণ চাই আমরা।
এদিকে জলাবদ্ধতা শিকার জমির মালিক জালাল উদ্দিন বলেন, কয়েক বছর ধরেই আমাদের জমিতে ফসল হচ্ছে না। ক্যানেল হওয়াতে এখন আমাদের ওইসব জমিতে ফসল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলো।
বারাইপাড়া এলাকার জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা জানি না, যে যেসব জমির ওপর দিয়ে ড্রেন হচ্ছে, তাদেরকে ক্ষতিপূরন দেওয়া হবে কিনা। তবে শুনেছি যে তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তবে আগে ক্যানেলটি চন্ডীপুর এলাকা দিয়ে ছিল। ওখানে প্রভাবশালীরা দখল করে পুকুর নির্মাণ করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
ক্যানেল খনন করা হলেও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ওপর দিয়ে কেন এবং তাদেরকে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে জানতে চাইলে কিছুই জানাতে রাজি হননি ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল হক সুমন। তিনি বলেন, জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি এটা ঠিক।
তবে এর জন্য সরকারিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে কিনা, আর কোন প্রকল্পের অধীনে এটি খনন হচ্ছে, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। তবে প্রকল্পের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।
দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদ্য বিদায়ী নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান বলেন, ওই এলাকায় যে ক্যানেলটি করার কথা ছিল, সেটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ওপর দিয়ে হওয়ায় এবং তারা আপত্তি জানানোয় গত এক বছর আগে খনন কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে ক্যানেল খননের বিষয়ে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম জানান, কয়েক হাজার একর জমিতে যাতে করে ফসল ফলানো যায়, সেজন্য ৪০০ মিটার ক্যানেল খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সে মোতাবেক এলাকাবাসীর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং স্বেচ্ছাশ্রমে ক্যানেল খননের কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে ক্যানেলের কারণে যেসব কৃষকের ক্ষতি হয়েছে, তারাও জমি এবং ফসলের ক্ষতিপূরণ পাবেন বলে জানান তিনি।