অর্থের অভাবে চিকিৎসা আটকে আছে মুক্তিযোদ্ধা রেজিয়া বেগমের

mymensingh birongona komola-1

প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না ময়মনসিংহের সহায় সম্বলহীন একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা রেজিয়া বেগম কমলা (৬৫)। তাই সরকারি ব্যবস্থাপনায় উন্নত চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুর রব জানান, রেজিয়া বেগমের কমলা দেশের স্বাধীনতার জন্য অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বর্তমান সরকার তাকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ দিয়েছে। তার শেষ জীবনে চিকিৎসার সব ব্যয়ভার সরকার বহন করবে এমনটাই দাবি।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, কমলার চিকিৎসায় জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তবে ব্যয়বহুল ক্যান্সারের চিকিৎসায় এই মুক্তিযোদ্ধার দায় দায়িত্ব সরকার বহন করুক এমনটাই দাবি তার।

এদিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শফিউল আলম জানান, কমলাকে দ্রুতই ছয়টি কেমোথেরাপি দেওয়া প্রয়োজন। এরপর তাকে সুস্থ্য থাকতে শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে রেডিওথেরাপি দেওয়া লাগতে পারে। ময়মনসিংহে রেডিওথেরাপি হয় না, তাই তাকে ঢাকায় যেতে হবে চিকিৎসার জন্য।

mymensingh birongona komola-4

জানা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার পূর্ব নওবাইত গ্রামের দিনমজুর আব্দুল আজিজের কন্যা রেজিয়া বেগম কমলাকে যুদ্ধের শুরুতেই পাশের গ্রামের মফিজ উদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। জুলাই মাসের শুরুতে পাকিস্তানি বাহিনীর ভয়ে স্বামী এবং পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। এসময় কমলা বাপের বাড়িতে আসার সময় রাস্তায় রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে। ঠাঁই হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে। সেখানে তাকেসহ অনেক নারীর ওপর বর্বোরোচিত নির্যাতন চালানো হয়। এক সপ্তাহের মাথায় কৌশলে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে বেশ কয়েকটি হিন্দু পরিবারের সঙ্গে ভারতে যাওয়ার জন্য হেঁটে বন-জঙ্গল পেরিয়ে চার দিনের মাথায় চলে আসেন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের সীমান্ত এলাকায়। এখানে কমলার ঠাঁই মিলে হালুয়াঘাটের সীামান্তবর্তী মুক্তিযোদ্ধাদের ঢালু ক্যাম্পে। এখানে বেগুনবাড়ি আইয়ুব কমান্ডারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নেন তিনি।

রেজিয়া বেগম জানান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আইয়ুব আলীর গ্রুপের সঙ্গে ৫-৬ মাসের মতো বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়ে যুদ্ধে অংশ নেন। তার সঙ্গে সালেহা, নুরজাহানসহ আরও চার জন নারী ছিলেন। যুদ্ধ শেষের একমাস আগেই তাকে ময়মনসিংহ সদরের বেগুনবাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি ময়মনসিংহ শহরের রেল স্টেশন এলাকায় চলে যান। যুদ্ধের পর এখানেই বিয়ে হয় কমলার। এই ঘরেই দুই পুত্র হানিফ ও মানিকের জন্ম হয়। পরে স্বামী আব্দুল আজিজের মৃত্যু হলে স্বামীর বাড়ি থেকে বিতারিত হয়ে সন্তানদের নিয়ে চলে আসেন ময়মনসিংহ শহরে। এখানে মুদি দোকানি করে সন্তানদের বড় করে তোলেন।

তিনি আরও জানান, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ২০১৭ সাল থেকে তিনি ১২ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। চলতি বছরের শুরুতে তার পেটে টিউমার ধরা পড়ে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে ময়মনসিংহ সিএমএইচে তাকে ভর্তি করে টিউমারের অপারেশন করা হয়। এরপরই ধরা পড়ে ক্যান্সার। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ছোটবোনের বসতভিটা ময়মনসিংহ সদরের চরকালি বাড়িতে বাস করছেন। চিকিৎসকের পরামর্শে মার্চের প্রথমদিকে ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটি কেমোথেরাপি দিয়েছেন ১৭ হাজার টাকায়। অর্থের অভাবে এরপর আর কেমোথেরাপি করাতে পারেননি তিনি। বর্তমানে শরীরে জ্বর, পেটের পীড়াসহ নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে।

চিকিৎসা করাতে আর কোনও সহায়তা পাননি দাবি করে কমলা আরও জানান, সরকারের দেওয়া ভাতার অর্থে দুই বেকার পুত্রকে নিয়ে সংসার চলে যাচ্ছে, তবে ব্যয়বহুল চিকিৎসা করানোর অবস্থা তার নেই। চিকিৎসার সব দায় দায়িত্ব বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী নেবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন এই মুক্তিযোদ্ধা।